দোহুয়াকুড়ি
(১)
বাড়ি বদলের বারান্দায় ঝুলছে
বিমাহীন মনকেমন
চুপচাপ সন্ধ্যা নামা প্রতিবিম্বের
ইতিহাস জানে না কেউ-ই
তবু তো পার হতে দেখি চিরসকুটের
চকমকি হলুদ দিন
(২)
ছবি মনে পড়ে পাড়ভাঙা পরশির
কলেজ ফেরত হিমাংকের অভিমান
দিকুলের দুইকূলে ঘন-সবুজ কবিতামাখা
ঝড়ের শব্দ প্লাবন
গ্রন্থের ভেতর স্তব্ধ অলিগলি
যেন এজিদ আর মেঘনাদবধ কাব্য
(৩)
দূরত্ব আড়াল করে পেখম তোলেনি ময়ূর
শহরটা ছিল বিমর্ষ
পিপাসা কণ্ঠে নিয়ে নদী ছিল উত্তাল
জন্মের ইশারাটুকু কাঁধে নিয়ে
কোমর ভাঙে বেণীমাধব
সে এক প্রান্তিক জনপদের ছেঁড়াজাল
(৪)
বেআব্রু শরীরের ফসিলসে
লীন হয়ে আসছে অনটন
তুমি চিনে নিলে অরণ্য হবে
ক্ষয়ে যাওয়া মরুভূমি
বৃষ্টিপাতের পূর্বরাগ ঠোঁটে নিয়ে
আগুন চোখে জেগে আছে স্রোতস্বিনী
(৫)
অনেক ভুল বৃষ্টির মাঝে হূল ফুটিয়েছে
অশৈশব পাড়ের সরু ক্যানেল
চলন্ত বাস ছুটে গেছে দক্ষিণে
আলপথে বেঁচে আছে জীবনানন্দ সভাঘর
তিন চাকায় বেসামাল দোহুয়াকুড়ি
ছায়াপথে দুলছে নক্ষত্র পেন্ডুলাম
(৬)
আততায়ী রোদ নেমে আসছে শব্দে শব্দে
সুনিপুন হয়েছে আত্মঘাতী শিশিরের নিপুণ বুনোট
যেন শিহরণ জাগেনি আদৌ
আধশোয়া বালিশে বিরতিহীন চিন্তাস্রোত
হাঁটুগেরে টুঁটি টিপে রাত্রির চারুকলা
জেগে থাকে জামাজুতোহীন কবিতা নূপুর
(৭)
পৃথিবীর এখন এক অচেনা অসুখ
তার পাশে বিভেদের অসহ্য তরল
আগুন প্রশ্ন করে আকসার
স্রোত পিছনে চলে না কেন?
জীবন নামের এই যে অ্যাকাউন্ট
তার প্রোফাইলে কোনও লাইক
বা মশলাদার কমেনট নেই কিন্তু
(৮)
পেন্সিলে ভালোবাসার ছাই লিখন
অন্য হাতে লুকিয়ে রাখা রাবার
কি বিপদেই না পরেছে সাদা খাতা
খাতা বলতে যা বোঝায়
সেটা ভালো জানে কালো পিচ হাইরোড
আর রক্তে ভেজা সমান্তরাল রেল লাইন
(৯)
আবার ধংসের মুখোমুখি সভ্যতা
মুখোশ বদলাবে কবিতা সাহিত্য সৃজন
নিঃসীম প্রান্তরে আয়না ফেটে বেরিয়ে আসে
মায়ার ম্লানমুখী ঘ্রান
সময়ের মুখোমুখি অস্থির মহাকাল
আর নিজেদের শীতল রুপান্তর
(১০)
অতীত ফিরে পাবার আশায় বেঁচে
আছে তৃষ্ণার্ত আয়ুকাল
ইটের পাঁজরে পাথরের বসতি ঘিরে
শোক হত্যার পাঁচলাখী মলম মেখে
শেকরের কাছে শয্যাশায়ী শূন্যতার দোহুয়াকুড়ি
শূন্যতার রবীন্দনাথ শূন্যতার নক্ষত্র জীবন
1 Comment
Arif Mahammad · সেপ্টেম্বর 15, 2021 at 8:00 অপরাহ্ন
Most superior writing, indeed. The use of Syntax and Diction is absolutely brilliant. Divided into few segment the poem bears an unique technique.
Regards.
Arif