ব্লেজার
“শৌভিক দা! গোল চাই!” বলল আমার দল। গোল আর পাবে কী করে। সারা দলে একমাত্র তিন জনই খেলতে পারে এবং যে গোলকিপার, সে তো জীবনে প্রথম এই কাজটি করছে, আর সেই মহাজন হলেন আমি। খেলার যখন শুধু পাঁচ মিনিট বাকি, তখন নাকি “শৌভিক দা! গোল চাই!”। এই শৌভিক দা যখন বল নিয়ে এগোচ্ছে, তখন ডিফেন্ডারগুলি বলল “এমনই তো চারটা গোল খেলি, আর গোল খাওয়ার আগে, নিজের ব্লেজারটা খুলে গোলপোস্টে রাখ।” কথাটা ঠিক ভেবে সেটাই করলাম। আবার গোলপোস্টে দাঁড়িয়ে শৌভিক দা-কে বল নিয়ে যুদ্ধ করতে দেখছিলাম আর শেষের সেই দুই-তিন মিনিটে আমার দল তিন গোলে পিছিয়ে। হঠাৎ রেফারি খেলা থামিয়ে বলল, “পেনাল্টি হবে। এক ডিফেন্ডার পেনাল্টি বক্সে বলে হাত লাগিয়েছে।” দল চেঁচিয়ে উঠল “শৌভিক দা! গোল চাই!” আর হ্যাঁ, শেষে ম্যাচটা দুই গোলে পিছিয়ে রেখে ক্লাসে ফিরলাম। তখন আমার মাথা থেকে ব্লেজারের কথা উড়োন ছুঁ হয়ে গেছে। ক্লাস ক্লাসের মতো চলছে আর আমার মনেই নেই আমার ব্লেজারের কথা। বাড়ি ফিরলাম। এসে জামাকাপড় খুলতে গিয়ে আর ব্লেজার খুঁজে পাইনা। মা-কে জিজ্ঞেস করলাম, ” মা গো, আমি কি স্কুলে আজ ব্লেজার নিয়ে গেছিলাম?” কথাটা শোনার পর মা আমার রেগে বোম! মা বলল,” কেন রে শয়তান? শেষ মেষ ব্লেজারটা ছেড়ে চলে এলি?”
– “না না মানে…….”
ব্যাস। এই তিনটি কথা বলা মাত্রই দেখলাম মার হাতে একটা বড়সড় লাঠি মা-র হাতে চলে এল এক সপ্তম শ্রেনীর মহাজনকে রাঙা নিলম কেষ্ট বানাবে বলে। সুন্দর ভাবে দু – তিন ঘা মারার পরে মা ব্লেজার হারিয়ে যাওয়ার সমস্ত ঘঠনাবলি মা-কে বললাম। মারে লেগেছিল বটে এবং মলমের দরকার ছিল, তাই বলে ফেললাম আমার ব্ল্যাকমেল করার ডাইলগ- “একটি ছোট্ট ছেলের ছোট্ট ভুলের জন্য তুমি আমাকে এত মারলে! এখন তো মনেই হচ্ছেনা যে তুমি আমার আসল মা।” ব্যাস! কেল্লা ফতে। মা-র গলা ভারি হয়ে গেল এবং আমার পিঠে পড়ল মলম। রাতে বাবা বলল,” কাল আমার তোর স্কুলের ব্লেজারটা চাই নাহলে হয় তোর একদিন কি আমার এক দিন।”
-“ঠিক আছে। আমি এখন ঘুমালাম।”
পরের দিন স্কুলে গিয়ে প্রথম যে কাজটা করলাম তা হল ব্লেজারটা উদ্ধার করা। অফিসে রির্পোট করতেই আমাদের অফিস ইন-চার্জ যে দাদুটা থাকে, সে চুপচাপ গিয়ে একটা আলমারি চিচিং ফাঁক করতেই দেখি একটা সব্জেটে কাপড় অতি জত্ন সহকারে পেঁচিয়ে বল করে রাখা। সেই অত্যাধুনিক প্যাঁচ খুলতেই পড়ল আমার মাথায় হাত। যে বলটিকে আমি আমার ব্লেজার ভাবছিলাম, সেটি আসলে দুটো ব্লেজার!এখন কী করি? দুই মিনিট পরেই ক্লাস শুরু হবে। এক মিনিটও দেরি করলে ঠ্যাঁখানি খাব। বললাম নিজেকে, “জয় জগন্নাথ বলে একটি তো উঠাই। তারপর না হয় দেখা যাবে।” তুলে নিয়েই দিলাম ছুট ও পৌঁছালাম ক্লাসে। ঠ্যাঙানি আর খেতে হয়নি। মনে মার না খাওয়ার আনন্দের রসগোল্লা ফাটছিল। বাড়ি এসে মাকে ব্লেজার দিলাম ও বললাম, “দেখো মা। আমি ব্লেজারটা নিয়ে এসেছি”
-“দেখি দেখি। সত্যি নিয়ে এসেছিস!”
-“হ্যা গো। দেখো।”
-“দেখি তো”
ব্যাস। যখনই হাত টা ঢোকালাম, তখনই…..
-“কী রে শয়তান। ব্লেজারটা দেখে নিবি তো। এই ব্লেজার তো তোর হাতাকাটা জামার চেয়েও ছোট।”
সত্যি তাই ছিল। নিজের চয়নের ওপর এত খারাপ লাগছিল যে মনে মনে ব্লেজারটাকে বেজায় গালিগালাজ করছিলাম
-” আরে ব্যাটা সাইজে্ গন্ডগোল করবি তো কর, তোকে ছোট হতে কে বলেছিল আর ছোট হলি তো হলি, এত ছোট হতে কে বলেছিল!”
এত কিছু চিন্তা করার আমার কদাচিৎ সময় ছিল। সেই বিকেলে বাবা ও মা আমার ওপর আঠাশ গুষ্টির রাগ প্রকাশ করে একটি ঢাকের মত মেরেছিল আর যত গুলো মেরেছিল, তাতে আমি রাঙা নিলম কেষ্ট হয়ে গেলাম। সেইদিন বুঝে গেছিলাম যে বাবা-মা রেগে গেলে তাদের দিয়ে লেপ পেটানোর কাজ করানো যেতে পারে। যাই হোক, আমি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম যে আমি পরের দিনই ব্লেজারটা নিয়ে আসব।
পরেরদিন অফিস ইন-চার্জকে গিয়ে ঘটনাবলি বলার সাথেসাথেই আবার চিচিং ফাঁক আর ফিরে পেলাম আমি আমার নিজের ব্লেজার (গা রঙবিরঙ্গা হওয়ার পর!)
পরের দিন আবার,” শাশ্বত, ব্লেজারটা খুলে রাখ…..”
1 Comment
Sk Asad Ahamed · অক্টোবর 6, 2018 at 8:47 অপরাহ্ন
Hmm khub sundor