একটি সাদা চিঠি
ক্লাস নাইনে ছেলেটির নামে ডাকটিকিট ছাড়া একটি চিঠি এল। প্রথম চিঠি। পিওনকাকু বলল,টাকা লাগবে, নিবি? ছেলেটি বুঝছিল না, এই চিঠি নেবার মধ্যে প্রশ্ন উঠছে কেন? জীবনের প্রথম চিঠি কেউ না নিয়ে পারে? ছেলেটি বলল, লাগুক টাকা আমি নেবাে। যারা বার বার তাকে বারণ করল সেই সব দাদা ও দিদিরা হাঁ করে থাকল,চিঠির ভেতরে কী আছে দেখবার আশায়। গােলগাল ছােটো ছােটো নরম-সরম অক্ষরে লেখা নাম, ঠিকানা পেরিয়ে দুপুরের সূর্যের দিকে তাক করে খামের পেট থেকে উদ্ধার হল রহস্য। এ-কি? ভাঁজ করা সাদা পাতা! ছেলেটির শুভাকাঙ্খি মানুষের সংখ্যা দুম করে বেড়ে গেল এবং প্রত্যেকে তাকে ডেকে বার বার মনে করে দিতে লাগল, সে কত বােকা! খারাপ খবর বাতাসের বেগে তার স্কুলে টিউশুনির ব্যাচে পৌছে গেল। এক, কি ভেবেছিলি, লাভ লেটার? দুই, কত টাকা লাগল? তিন, এক্কেবারে ফাঁকা? চার, তুই নিজে জানিস, তুই কত বােকা ইত্যাদি…ইত্যাদি। খামসহ কাগজটা পয়সাহীন মানিব্যাগে বেশ করে রেখে দিল সে। কিছুই লেখা নেই তবু বার বার কাগজটা দেখতে লাগল। যেন না লেখা কথাগুলাে যদি ফিরে আসবে! একসময় কাগজটার ভাঁজে ভাঁজে আলাদা হয়ে গেল তবু থেকে গেল পকেটে।অমন চিঠির সেকেন্ড পার্ট আর এল না। উচ্চমাধ্যমিক চলে গেল তবু থেকে গেল সাদা পাতাটা। সে এখন কলেজে পড়ে। হােস্টেল থেকে এক শনিবার বাড়ি ফিরেছে।তার নামে চিঠি এসেছে। বিয়ের কার্ড। চিঠিটা খুলতে পারছিল না সে। হাঁ করে বহুদিন আগের সে চিঠির হাতের লেখাটা মেলাচ্ছিল মনে মনে। সেই লেখা! খামের ভেতর থেকে এবার কার্ডটা বের করার সময় মনে হল সে তার পাঁজর টেনে বের করছে। প্রিয় হিরােজেট সাইকেলটা নিয়ে ছুটল।ব্যান্ডপার্টি বাজছে। বারান্দায় মেয়েটিকে মেহেন্দি পরানাে হচ্ছে। মেয়েটি ছেলেটিকে দেখে ডাকল, ‘আয়। তাের হাতের লেখা ভালাে। ওর নামটা লিখে দে। নামটা জানিস তাে! কথা শেষ করে মেয়েটি হাত বাড়িয়ে দিল। ছেলেটি বলল, ওই সাদা চিঠিটা…ক্লাস নাইন… মেয়েটির হাসি মুখ, চোখ ঝাপসা হয়ে এল।ব্যান্ডপার্টির দল আরাে জোরে বাজাতে লাগল। তার চোখের নিচে টলটল করতে লাগল মুক্তা। ছেলেটি কাঁপা কাঁপা গলায় বলল, ভালাে থাকিস। মেয়েটি মাথা নাড়ল শুধু। ছেলেটি পাক খেতে লাগল রাস্তায়। একসময় আকাশ কালাে হয়ে এল। সাদা বকেরা ফিরে গেল ঘরে। সুপুরি গাছ পাগলের মতাে মাথা নাড়তে লাগল। নার়কেল গাছের পাতার চিরুনি তছনছ করে এল বৃষ্টি। আকাশ সাদা হল। সেই চিঠির মতাে সাদা। ছেলেটি একটি গাছের নিচে দাঁড়াল, তবু সম্পূর্ণ ভিজে গেল। এখন বােঝা যাবে না কোনটা চেখের জল, কোনটা বৃষ্টি। আর কেন? এই ভেবে পার্স থেকে সেই সাদা কাগজটা বের করল সে। কাগজটা ভিজে গেছে এবং তাতে অবাক করে একটা লেখা ভেসে উঠেছে, ‘আমি তােকে ভালােবাসি গাধা। ————- |
3 Comments
Barun Talukder · এপ্রিল 21, 2019 at 10:40 পূর্বাহ্ন
অসাধারণ লিখেছিস ভাই ।
নবনীতা বিশ্বাস চক্রবর্ত্তী · আগস্ট 18, 2019 at 4:36 অপরাহ্ন
ভীষণ ভালো লাগল৷
Rima Bhowmick · সেপ্টেম্বর 30, 2019 at 6:48 অপরাহ্ন
খুব ভালো লাগলো