শীতলক্ষ্যা
পামেলাকে স্নান করতে দেখেছি বহুবার। পামেলার স্তনের বোঁটার রঙ ছিলো হালকা গোলাপি।একবার,দুবার…তিনবারের মাথায় সমস্ত আগ্রহ হারিয়ে ফেলে,নিজের হাতেই ভেঙে দিয়েছিলাম বাতিঘরের সমস্ত কাচ। মনে হয়েছিল,এই সামান্য পথের জন্য এতদূর ছুটে এলাম! এরপর ভালো লাগতো না কাউকেই। এমনকি সেই বৈষ্ণবীকেও নয়। পামেলার মতো ফরসা না হলেও বৈষ্ণবীর গায়ের রঙ অনেকটা কাঁচা হলুদের মতো।আমি তাকেও নিষিদ্ধ রাত ভেবে,নিজের হাতে ভোরের পোশাক পরিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু আজ… আজ প্রথমবার শীতলক্ষ্যার বাড়িতে গেছিলাম। টিনের বাড়ি,টালির ছাদ। বাড়িতে ঢোকার আগে হঠাৎই শীতলক্ষ্যা গঙ্গার দু নম্বর ঘাটের দিকে আঙুল তুলে দেখিয়ে বললো,উইযে আমার দিদি।আমি শব্দ পেলাম বিস্ফোরণের। এই রোদের মধ্যে দাঁড়িয়েও শুনতে পেলাম হিম অন্ধকারে ভয়ার্ত পেঁচাদের আতর্নাদ। শীতলক্ষ্যার দিদির গায়ের রঙ আরো কালো,আলকাতরা যেন কিন্তু ভরাট শরীরে শরম নেই এতটুকু। লাল সায়াটা বুক অবধি টেনে বাঁধা। আমি চোখ সরাতে পারছিলাম না। ঊরুতে জলবিদ্যুৎ খেলা করছে যেন।এতদিন পরে আমি বুঝে নিচ্ছিলাম মাংসল শব্দটার সঠিক অর্থ। গোছা গোছা কালো চুল,শ্রাবন্তী আমার…হঠাৎ শীতলক্ষ্যা আমাকে টানতে টানতে ঘরে নিয়ে গেল,কেউ ছিলো না।আমার হাতটা নিজের বুকের উপর রেখে জিজ্ঞাসা করলো,দিদিকে বেশি পছন্দ তোর?আমি হাত সরিয়ে নিয়ে বললাম,ছিঃ কী বলছো এসব। ও তখন বললো, তাহলে দিদির দিকে সাপুড়িয়ার মতো তাকিয়ে ছিলা ক্যান?আমার দিদি কি সাপ? আমি মনে মনে বললাম সাপ নয়,বিষের আত্মজীবনী। শীতলক্ষ্যা আমাকে ঝাঁকাতে লাগলো,আমি নিরুত্তর। ও তখন রাগের মাথায় আমার কাঁধের পাশে কামড়ে দিলো। আমি চিৎকার করে ওঠার আগেই,টিনের দরজা ঠেলে ওর বাবা ঘরে ঢুকেই শীতলক্ষ্যার চুলের মুঠি ধরে মারতে শুরু করলেন,বলতে শুরু করলেন–শয়তান মেয়েছেলে,এখানে পিরিত করছিস,আবার দিদির মতো পেট ফুলিয়ে বসে থাকবি,তোকে বারবার বলেছি বাজার থেকে আলু দেখে আনবি,গোদা আলু আনবি না,সেই বড় বড় আলু চারখানা এনেছিস,তিনটেই পচা,দুপুরে কী খাবো আমরা? আমি দেখতে পারছিলাম না, আলুর জন্য কেউ এতো মার খায়! ওর ঠোঁট ফেটে রক্ত পড়ছিলো।বেরিয়ে এসে একবার গঙ্গার ঘাটের দিকে তাকালাম।কেউ নেই,ওর দিদি পোশাক ছাড়ে কোথায়?ধুস,কয়েকটা গঙ্গাফড়িং শুধু অবচেতনার রঙ ছড়াচ্ছে। মোড়ের মাথায় এসে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকলাম।ভাবছিলাম এখানে আসাটা আর ঠিক হবে না। একটু পরে দেখলাম শীতলক্ষ্যা আসছে,হাতে ছোট ব্যাগ,জানি ওর মধ্যে তিনটে আলু আছে। পাল্টাতে হবে। তোমার দিদির বিয়ে হয়ে গেছে? হ্যাঁ,অনেকদিন আগে। দিদির বর লরি চালাতো। অনেকদিনের প্রেম। দিদির পেটে বাচ্চা এলো। বস্তির লোকেরা জোর করে দুজনের বিয়ে দিয়ে দিলো,মন্দিরে। মানুষটা খারাপ ছিলো নাগো। বাবা রোজ রাতে ওর টাকাতেই মদ খেতো। হঠাৎ একদিন বাবার সাথে কী নিয়ে ঝগড়া লাগলো। বাবা বস্তির লোকেদের এককাট্টা করে লোকটাকে বেধড়ক মারলো।বের করে দিলো বস্তি থেকে। দুদিন বাদে,শিবমন্দিরের পাশে ওনাকে পড়ে থাকতে দেখা গ্যালো। মুখে গ্যাঁজলা,হাতে কাগজের ঠোঙায় মুড়ি আর চপ ছিলো। আমাদের কাছে কাগজের লোক এলো, পুলিশ এলো কয়েকদিন। এই আর কী… দুপুর দুটো, সবজি বাজার বন্ধ। আমি কয়েকটা আলুভাজা আর চানাচুরের প্যাকেট কিনে,জোর করে শীতলক্ষ্যার ব্যাগে ঢুকিয়ে দিলাম।ও ভয় পাচ্ছিলো,বাবা রাগ করবে এই ভেবে। তখন ওর থুতনি ধরে বললাম,আমি যে মদ খাই না,আলুভাজা খাই,যাও তোমার বাবা খুশিই হবেন।আমি একটা টোটোয় ওকে উঠিয়ে দিলাম। দশটাকা দিতে গেলাম,টোটোর ছেলেটি বললো ভাড়া লাগবে না,ওরা নাকি একই বস্তিতে থাকে। আমি বাড়ি ঢুকতেই দেখি মা হতাশ হয়ে খাটের ওপর বসে আছে। আমাকে দেখেই মা বলে উঠলো,বাবু একটা ভুল করে ফেলেছি, আলু কাটলাম ভাজবো বলে কিন্তু সিদ্ধ বসিয়ে দিয়েছি। তোকে একটা ডিম ভেজে দিই?তোর চিকেন তো রয়েছেই,এবেলা হয়ে যাবে। আমি বললাম,চিকেনের দরকার নেই ডালভাত আর আলুসেদ্ধ খাবো। মাখন ও তো নেই,মাখবো কী দিয়ে,তেল আর লঙ্কা দিয়ে মাখলে খেতে পারবি বাবু? খুব পারবো মা,খুব পারবো… পেছনের ঘরে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে শার্ট টা খুলে দেখলাম কাঁধের কাছে রক্ত জমাট বেঁধে আছে। এই রঙ পামেলার স্তনের বোঁটার রঙের থেকে আরো অনেক অনেক বেশি গোলাপি ও রহস্যময়ী। শীতলক্ষ্যার ওই কামড়ে শুধু সম্পর্ক হারানোর ভয় ছিলো না,সাথে ছিল আলুমাখার গন্ধ,মদের গন্ধ,অকথ্য গালিগালাজ,শিবমন্দির,কাগজের ঠোঙায় মিইয়ে যাওয়া মুড়ি আর চপ,আর গঙ্গার দু নম্বর ঘাট…সাপুড়িয়া আর বিষের আত্মজীবনী! |
3 Comments
Barun Talukder · এপ্রিল 21, 2019 at 6:17 অপরাহ্ন
খুব ভাল লাগল ভাই ।
Avijit Mandal · মে 29, 2019 at 11:55 অপরাহ্ন
Awesome dada
Neelam · মে 30, 2019 at 6:25 পূর্বাহ্ন
Asadharon