দেবাশিষ মহন্ত-এর কাব্যগ্রন্থ “আলো নিভে গেলে”
ঘড়ির কাঁটা আলো আর আঁধারের তারতম্য বুঝিয়ে দেয়। গাণিতিক ভাবে যার আনুপাতিক হার ১২:১২। বারো ঘন্টা আলো জ্বালানোর পরে কিভাবে যেনো প্রকৃতি সুইচ অফ করে ফেলে। সেই সুইচকে পাগলের মতো খুঁজে বেড়িয়েছেন কবি। মানুষ একগাদা ছায়া নিয়ে বেঁচে থাকে। যে ছায়ার গভীর সুরঙ্গে পথ চলতে গেলেই হঠাৎ দেখা হয়ে যায় সুখ-শান্তি, দুঃখ-কষ্টের সঙ্গে। মাঝে মাঝে ক্ষেতমজুরের ঘরেও লক্ষী হেঁটে বেরায়। মেঘের মতো ভেসে আসে ভালোবাসা। আবার পরক্ষণেই নোনা ধরা চামড়ার ভিতরে হিমগ্লোবিন দূষিত হয়ে যায়। হাসপাতাল বাড়ি করতে করতেই আলো নিভে যায়। ফটফটে দিনের আলোতেও মাঝে মাঝে ঘুম চলে আসে। রেটিনার কালো অংশটি ঘোলাটে হয়ে ওঠে। আলো নিভে গেলে মোমবাতি জ্বালানোর কেউ থাকে না। কৃষি প্রধান এলাকায় বাস করা কবি লিখেছেন ‘ কতটা গভীর দুঃখে গাঁথা একটি ফসল’। তাঁর কাব্যগ্রন্থের রাত কবিতায় , মোমবাতি পুড়ে যাওয়ার পরেও পাশের পাড়ার আদিবাসীদের দরজায় অন্ধকার হাঁক দেয়। দরজায় ধাক্কা দেয় অদ্ভুত গন্ধ অন্ধকারে, খিল খোলার আগেই ওপার থেকে আওয়াজ আসে ‘কে রে! খোকা নাকি?’ তাঁর কল্পনায় পৃথিবীর সমস্ত মেধাবী বিকেল এক জায়গায় এসে থেমে যায়। কৃষিঘর থেকে জল এসে জমির ন্যাঁড়া মাথায় ফসল গজিয়ে তোলে, দূর রাস্তায় হর্ন বাজায় পেপসির গাড়ি, সামনে ইলেকশন খাঁ খাঁ রোদেও লালবাতির আনাগোনা বেড়ে যায়। বর্ষার ছিপে মাছেদের ভিড়। সারারাত আলো নিভিয়ে নদীকে সাক্ষী রেখে ভাবছেন। টুকিটাকি প্রেম করে, সিনেমা পাড়ায় ম্যাটিনি সেরে জল অনেক দূর গড়িয়েছে। ঘাড়ের শিড়ায় টান ধরলেও, স্কুল ফেরত মেয়েদের দেখার আশায় অপেক্ষা করতে রাজি। কবি লিখছেন ” সূর্যের অপেক্ষায় আত্রেয়ী জাপটে ধরেছি – তোমার লাগিয়া…।” ও “জল মাটির মাঝে থেকে মিহি পলির মতো থেকে গ্যাছি।” প্রভৃতির মতো কত সব পুংক্তি। তাঁর কবিতায় জোয়ারের মতো ভেসে আসছে আদিবাসী সমাজের অন্ধকার সুখ, ফসলের ভেতরে লিকুইড দুঃখ আর চাষবাসে মেখে থাকা কৃষকের ম্লান মুখ। একসময় প্রেম কলোনিতে গিয়ে কবি ডুবে গেছেন। ঘাড়ের শিরায় টান ধরলেও কবি রাজি স্কুল ফেরত মেয়েদের জন্য অপেক্ষা করতে। দেখাদেখি থেকে শুরু করে ম্যাটিনি শো ! জল অনেক দূর গড়িয়ে গেলেও কবি কষ্ট নিয়ে অপেক্ষা করতে রাজি। কবি দেবাশিস মহন্ত নিজের জীবনের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সময়ে এভাবেই অন্ধকার কে অনুভব করেছেন। “আলো নিভে গেলে” লেখার পরেও তাঁর জ্ঞানদীপ আজও সিঁড়ি বেয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছে আলোর ঠিকানা। অফিস বাড়ির ফাঁকে একটা দীর্ঘ জার্নি। আলোর মুখ দেখে বেরোলে অন্ধকার গায়ে মেখে ফিরতে হয়। তবুও তিনি সম্প্রতি লিখেফেলেছেন “এইসব দিনরাত্রি” ও “ঋজু হও অ্যান্টেনা” ।
2 Comments
সোহেল · মে 11, 2019 at 11:01 পূর্বাহ্ন
দারুন লিখেছ,ভালো লাগলো খুব…
দেবসত্য কুমার · আগস্ট 26, 2020 at 3:03 অপরাহ্ন
বেশ ভালো লেখা লিখেছ দেবাশীষ।