সম্পাদকের কলমে
” আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙা ২১ শে ফেব্রুয়ারি , আমি কি ভুলতে পারি ” … আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস । আত্মবলিদানের মধ্য দিয়ে একঝাঁক পায়রার মুক্ত আকাশে উড়ে যাওয়ার দিন । নতুন করে বেঁচে থাকার স্বপ্ন বুনে চলা মাতৃভাষাকে সঙ্গী করে, যা কিছু পুরাতন তাকে পিছনে ফেলে নতুনভাবে এগিয়ে চলার দিন ।
এমন একটি দিনে সম্পাদকীয় লিখতে বসা এক পরম প্রাপ্তি। সেই অর্থে এটি কোনো সম্পাদকীয় নয় । নিছক মনের ভাবপ্রকাশের কৌশল বলা যেতে পারে । আসলে পত্রিকার সম্পাদনা বিষয়টা আজকাল অনেকটাই সঙ্কুচিত হয়ে এসেছে । এখন আমরা অনেকেই যা করছি তা সংকলন মাত্র । তবু নতুন , পুরোনো , বিখ্যাত , অখ্যাত অনেকেই যারা লেখা পাঠিয়েছেন তারা বেশ জোরের সাথেই লেখা পছন্দ না হলে বাতিলের অনুমতি দিয়েছেন । এবং সৌভাগ্যজনক ভাবে তারা এমন লেখাই পাঠিয়েছেন যা বাতিলযোগ্য হয়ে উঠতে পারেনি শেষমেশ । অনেকের লেখাই পেয়েছি , তবু চেষ্টা করেছি পত্রিকার মান বজায় রেখে সেরা লেখাগুলিকেই মনোনীত করার ।
এবার আসি ‘ শৈশব ‘ প্রসঙ্গে । রুবাই যখন পত্রিকার আগামী সংখ্যার জন্য এমন একটি নাম প্রস্তাব করলো , তখন স্বাভাবিক ভাবেই ভীষন আনন্দ পেয়েছিলাম । আমার জীবনের যা কিছু প্রাপ্তির ভাড়ার তা অনেকটাই শৈশব জুড়ে । শৈশব আমার কাছে বন্ধুত্ব , মূল্যবোধ , আদর্শ , শিক্ষা । শৈশব আমার স্মৃতি জুড়ে জেগে থাকা আত্রেয়ীর চর , ডাকাত-কালীর মন্দির , স্কুল পালিয়ে গোপাল পুজোর প্রসাদ , ছবি আঁকার রঙ-তুলি , আনন্দমেলা,শুকতারা , নীরেন্দ্রনাথ , সহজ পাঠ, বর্ন পরিচয়, রবীন্দ্রনাথ , সত্যেন্দ্ৰ নাথের একপায়ে দাঁড়িয়ে থাকা তালগাছের জাগ্রত বিবেক , আপোষহীন মেরুদণ্ডের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন । তারপর একটা দিন এলো বাক্সজুড়ে রূপকথার । পথের পাঁচালী পেড়িয়ে গুপী গাইন – বাঘা বাইন এর হীরক রাজের দরবার , রোববার এর মহাভারত , বুধবারের চিত্রহার , সন্ধের ব্যোমকেশ, রাতের সুরভি পেরিয়ে রঙ্গলির ছোঁয়া । আর সেইসঙ্গে এক প্রবল ঝড় বাতাসের রাতে প্রথম লেখালেখির চেষ্টা । আজকাল শিশুরা অনেক বেশি স্মার্ট , টেকস্যাভি । ছোট থেকেই তারা অনেক বেশি বড় হয়ে উঠছে । আমার সিরিয়াস শিশুদের দেখে মন্দ লাগে না । তবে মনে হয় ওদের শৈশবটা যদি আরেকটু দীর্ঘায়িত হতো … খুব একটা খারাপ হতো না । তবে চাওয়া – পাওয়ার এসব দাঁড়িপাল্লা কোনোদিনই আমাদের ইচ্ছেমতো চলে না । দশকের পর দশক যেমন কবিতার বাঁকবদল হয় , তেমনি শৈশব ও বোধহয় প্রতিটি শতাব্দীতেই তার নতুন চরিত্র নিয়ে হাজির হচ্ছে । আর তাই মূর্তিমান সেই সব চরিত্রদের নিয়েই সেজে উঠুক এবারের ‘দক্ষিণের জানালা ‘। দখিনা বাতাস ছড়িয়ে পড়ুক দেশ থেকে দেশান্তরে । মেঘের আড়াল থেকে বেড়িয়ে এসে একটা শিশু অন্ততঃ প্রশ্ন করুক – ” রাজা তোর কাপড় কোথায় ? “
0 Comments