মৌখিক ইতিহাস ও পুরাকথায় দক্ষিণ দিনাজপুর (পর্ব – ৬)
আজ ষষ্ঠ পর্বের মৌখিক ইতিহাস ও পুরাকথায় জেনে নেবো তপন থানার মন্দির বাসিনী দেবী ও পোড়াগাছির মন্দির এবং হরিরামপুর থানার বৈরাট্টা গ্রামে অবস্থিত আলতা দীঘি সম্পর্কে।
মন্দির বাসিনী দেবীঃ তপন থানার ভিকাহারে রয়েছে প্রায় তিনশো বছরেরও বেশি প্রাচীন মন্দির বাসিনী দেবীর মন্দির। জনশ্রুতি এক তান্ত্রিক এখানে তন্ত্র চর্চা করতেন। তিনি সিদ্ধি লাভের জন্য একটি মেয়েকে মন্দিরের বেদীর জায়গায় গর্ত করে সমাহিত করেন। লোকশ্রুতি গভীর রাতে মন্দির চত্বর থেকে ধূপ, ফুলের গন্ধ পাওয়া যায়। সেই গন্ধ কারও খারাপ লাগলে সেই পরিবারের ক্ষতি হয়। বর্তমানে অমাবস্যার কালীপুজোর দিন সোয়া হাত মাটির কালীমূর্তি পূজিত হয়।
আলতা দীঘিঃ জেলার হরিরামপুর থানার বৈরাট্টা গ্রামে অবস্থিত আলতা দীঘি (জে. এল. নং – ৪, ছোট মহেশপুর)। দৈর্ঘ্য ১২৮০ এবং প্রস্থ ২৭০ গজ। আলতা দীঘিকে নিয়ে রয়েছে নানা লোকগাথা। দীঘির অদূরে বাস করেন বুড়িকালী। তিনি প্রতিবছর কার্তিক মাসে একবারই আলতায় রাঙিয়ে দীঘির ওপর দিয়ে নৃত্য করতে করতে তাঁর মাসির বাড়ি কুকড়ামনি যান। দীঘির সমস্ত জল বুড়িকালীর আলতা মাখা পায়ে লাল হয়ে যায়। কার্তিক মাসে বুড়িকালীর মেলা উপলক্ষে প্রচুর নারী দীঘির ধারে দু’পা আলতায় রাঙিয়ে দীঘির জল স্পর্শ করেন। তখন আলতা দীঘির জলের কিছুটা অংশ জুড়ে আলতার মত লাল হয়ে যায়।
পোড়াগাছির মন্দিরঃ তপন থানার জামতলা থেকে উত্তর দিকে গেলে চকমধুসূদনপুর। এটাই পোড়াগাছি নামে পরিচিত। এখানে একটি সুন্দর টেরাকোটার মন্দির আছে। আনুমানিক ষোড়শ বা সপ্তদশ শতকে তৈরী। মাঝখানে দুর্গা মন্দির, তার দু’দিকে কালী ও দধিবামন ঠাকুরের মন্দির আছে। শোনা যায় মন্দিরটি প্রতিষ্ঠিত করার সময় ১০৮টি মোহর ভরা কলসি নিবেদন করা হয়েছিল। পূর্বে এখানে মূর্তি পূজা করা হতো। জনশ্রুতি ভোগ দেওয়ার সময় একটি অল্প বয়স্ক মেয়েকে দেখতে পাওয়া যায়। এরপরই দেবীমূর্তির মুখে চুলের খোপা লেগে থাকার জন্য এখানে মূর্তি পুজো বন্ধ হয়ে যায়। এখানে মিথ, কিংবদন্তি, জনশ্রুতি, পুরাকথা সব মৌখিক ইতিহাসে রূপান্তরিত হয়েছে।
ক্রমশ…
*পঞ্চম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
0 Comments