মা বলত কেন বাড়ি থাকিস না ?
জীবন থেকে একটু দূরে
সুব্রত চক্রবর্তী
আর এক জীবন থমকে আছে
নাম রাজু মাহাতো
গ্রাম নাজিরপুর
বয়স দশ বছর
কথোপকথন এখানেই শেষ হলে পারতো কিন্তু গল্পটা এত সরল ছিল না। চারপাশে মেতে ওঠা আমাদের চাক্ষুষ যে জীবন তার বাইরে আছে আর এক জীবন ।শহর থেকে একটু দূরে সে থাকে তবু সে দিন যাপনের পাশেই।তাকে পাশ কাটিয়ে যেতে চাই কিন্তু দেখলে মনের ভিতর বেজে ওঠে অন্য এক সুর।বালুরঘাট শহর থেকে ১০ কিমি দূরের একটি গ্রামে হাঁটছিলাম, যেখানে কখনো ঢালাই রাস্তা কখনো মাটির রাস্তা। সেখানে বন্ধ দোকানের সামনে একটি ছেলে ও মেয়ের সাথে দেখা। লিকলিকে হাত পা ওয়ালা ছেড়া জামা কাপড় গায়ে ছেলেটা ও মেয়েটা মুড়ি খাচ্ছিলো ।আমাকে দেখে খানিকটা ভ্যাবাচ্যাকা খেলেও এতটাই খিদে পেট ছিল যে সামান্য চুপচাপ থাকার পর আবার খেতে শুরু করল।তারপর শুরু হল আমার আর রাজুর কথোপকথন।
-এখানে কি করছো ?
-ভিক্ষে করছি ।
-সঙ্গে কে ?
-বোন হয়।
-কেন ভিক্ষে করছ ?
-বাবা-মা দিল্লিতে থাকে কাজ করে টাকা পাঠায় এখন একমাস হল আর টাকা পাঠায় না ।
-বাবা-মা কি করে ?
-জানিনা.
-কতদিন ধরে ভিক্ষে করছো ?
-এইতো কয়েকদিন ধরে ।
-কার সঙ্গে থাকো ?
-দাদুর সঙ্গে ।
-দাদু কি করে ?
-দাদু অসুস্থ সারাদিন শুয়ে থাকে, না হলে বসে থাকে খাটিয়াতে।
-ইস্কুলে পড়ো?
-হ্যাঁ পড়ি ।
-কোন ক্লাসে ?
-ফাইভে ।
-আর বোন ?
-থ্রিতে ।
-ক’দিন ধরে খাওনি ?
-কালকে সারাদিন খাইনি। আজ সকালে দাদু বলল, যা ভিক্ষে করে আন তারপর খাস
-ভিক্ষে করে কি কি পাও ?
-সবাই চাল দেয়।
-খাবার দেয় ?
একটি দালান বাড়ির দিকে হাত দেখিয়ে বলল ।-ওই বাড়িতে এক বাটি মুড়ি দিল একটি বাড়িতে ৫০ টাকা আর একটি বাড়িতে পুরনো জামা কাপড়।
-ইস্কুলেতে চাল দিয়েছে, তোমরা পাওনি ?
-হ্যাঁ পেয়েছি ।অনেকদিন হলো সেগুলো শেষ। আর নেই ।খেয়ে নিয়েছি।
-রেশনের দোকানে চাল পাওনা না
-না।
-কেন
-আমরা পাবো না। আমাদের নাকি বড় রেশন কার্ড তাই।
-এখন কি করবে
-বাড়ি যাবো ।
-কতক্ষণ লাগবে বাড়ি ফিরতে ?
-অনেকক্ষণ। সন্ধ্যা হতে হতে বাড়ি চলে যাব ।
-এই ছেলে ,এই দিকে শোন । রাতে ঘুমে কি স্বপ্ন দেখিস?
দুটো পোকাখাওয়া ও বাকি হলদেটে দাঁত গুলো বের করে একটু হাসি হাসল, তারপর বোনের হাত ধরে চালের টোপলা মাথায় নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দিল।
0 Comments