কবি ও কবিতা
তোমাকে লিখতে বসে ভাবছি,
নীল কালিতেই লেখা ভালো।
পরক্ষণেই ভাবি, নাঃ –
সবুজ রঙেই তাকে
বোধকরি মানায় বেশি!
এইসব দোলাচলে বিভ্রান্তি আসে,
কলমটাই খুঁজে পাচ্ছি না
আসলে ভেবে দেখেছি অনেক,
সব মেয়েরাই নারী হয়ে উঠলে
নদীতে গা ধুয়ে আসে একবার,
বুকের নিচে বালিশ রেখে গান শোনে
তোমার সে বালিশকে
আমার খুব হিংসে হয়, গাল পাড়ি এলোমেলো
ততক্ষণে তুমি সকালের মতো ফুটফুটে হয়ে জেগে গেছ
আড়ালস্নান সেরে নিয়েছ সলজ্জে
খানিক দূরেই আমিও আছি,
আমাকে যেন দেখে ফেলো না ছিঁড়ে দিও না
তোমার ছেড়ে যাওয়া বিছানাতে
এখনো গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে
কয়েকটা নীল গোলাপ, আর অগোছালো নাইটি
আমি দেখেছি
আমার কিন্তু এতেও হিংসে হয়, বলছি না যদিও সব
রান্না করতে করতে আলগোছে যে সরিয়ে দাও
দু-একটা অবাধ্য চুলের গোছ, তোমাকে অবিচল দেখায়-
জানতেও পারনা, সেসব কুকর্ম আমারই
পা টিপে-টিপে কখন পৌঁছে গেছি তোমার বাড়ি
ফুঁ দিয়েছি অকারণে তোমার কানের লতির কাছে
ডাউন ট্রেনের জানালায় দপদপ করে জ্বলতে থাকে
তোমার কুমারী মুখ,
যেন কুমারটুলির প্রতিমা
যেন বর্ষা নেমেছে আই নদীর বুকে…
খটখটে এক আশমানী রোদে
শুকাচ্ছে তোমার শাড়ি, ম্যাচিং শায়া ব্লাউজ, ব্রা-
তরাই থেকে উপচে যাচ্ছে রূপকথারা-
বুক জ্বলে যায় আমার,
পুড়ে মরেছি নিজেই, একদম বলব না,
শুধু হিংসে হয়- সব আমার!
আমার!!
তোমাকে ভ্রূকুঞ্চন একদম মানায় না, জানো?
বরং ভ্রূপল্লবে আঁকা আছে আমার দীর্ঘশ্বাস
তোমাকে যখন-তখন টপ করে ছুঁতে পারে
তোমার ব্যক্তিগত গোপনীয়তারা,
সেছাড়া সেক্ষেত্রে তুমি আনটাচড-
তোমার বুকে গোটা কয়েক তিল ছাড়া
কোনো কালো দাগ নেই সেখানে-
আমি কিন্তু রেগে যাচ্ছি, হিংসেতে জ্বলেপুড়ে খাক!
হতচ্ছাড়া রবি ঠাকুর আর সুনীল গাঙ্গুলি
আর না জানি কত লেখার অযোগ্য-গুলো
তোমার সাথে ফিসফিস করে কথা বলে,
প্রেমের পদ্য শোনায়!
আমি কত চিৎকার করে তোমার নাম
তোমাকেই চিনিয়েছি,
আমাকে দেখেছ কখনো তুমি চোখ চেয়ে?
আমার চোখেও যে কত কালি পড়েছে…
আমার যে দু-একটা চুল সাদা হয়ে আসছে…
জানো, তোমার কোলে কত শান্তি জমে আছে?
জানো কি,
তোমার কুমারীত্বকে খুব জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করে…
নিজেই তুমি একটা আস্ত কবিতা।
জলজ্যান্ত, দিগন্তজোড়া ক্যানভাস,
মিউস ও ম্যুরাল একাধারে-
তুমি কবিতা হবে না আর, আমার ফুসফুস জুড়ে
হিংসের বাতাস বয়
ভয়ে ভয়ে আমি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থায় নাম লেখাই
আমার বুকেতে খাদ মেশানো নেই, শুধু গভীর আছে সে এক খাদ
সেইখানে রাখা আছে একটা গেলাস, তার অর্ধেকটা ভর্তি, বাকিটা –
জানি না
তুমি কোনোদিনও আমার নাম জানতেই পারবে না
তবু তুমি আমার কবিতাই হয়ে থাকবে
জেনে রাখো, একদিন না একদিন ঠিক ছুঁয়েই দেবো তোমায়,
যা হবে হোক, দেখা যাবে
তোমার পায়ের কাছে বসি কিছুক্ষণ,
শিউলি ফুলের গন্ধ তোমার সারা শরীর জুড়ে,
আমার বুক পুড়ে যায়
তোমায় ছুঁতে ভীষণ মনকেমন
হিংসের জ্বালায় আমি ভেজা মোমের আলোয়
তোমাকে টেনে আনি-
কুমারী পুজোর দৃশ্যে ভেঙ্গে দিই বেলজিয়ান কাচ
হে বিষণ্ণতনয়া,
ধুপধুনো দিয়ে কবিতা পড়ার খেলা
না হয় আজ বন্ধ হয়েই থাক!
0 Comments