স্বর্ণলতা রায়কে চিঠি
হাওয়াতে যে বিষ মিশে গেলো এর পরিশুদ্ধী কে ঘটাবে? গাছ? নিষ্কম্প গাছ বলতে আসবাব ; নিমেষেই কাঠ চিড়ে চিড়ে রক্ত শুষে নিই। আর তুমি চুরি করলে বায়ু। না, আমার কোন শ্বাসকষ্ট নেই। তবুও কেন ইনহেলার! রণডঙ্কার বাদ্য যন্ত্রের তালে কেন শুষে নিচ্ছো অক্সিজেন? তুমি ফুঁ দাও নিভে যায় মোমবাতি আমি ফুঁ দিই বেজে ওঠে বাঁশি।
হাঃ ঈশ্বর, তুমি কেন বায়ু চুরি করছো?
যে জল গড়িয়ে যায় নদী দিয়ে সেই জলকে কি ফেরানো যায়? তবুও বোকা হরিণী তাকিয়ে থাকে নদীর জলে অথচ কত আগেই প্রথম প্রতিবিম্ব ভেসে গেছে প্রত্নতত্ত্বের ইতিহাসে। শুধু ভেসে এসে মুখে লাগে সবুজ শ্যাওলা! আকাশ হয়ে যায় কালো আর আমাদের ডিশে লাল মাংস।
হাঃ ঈশ্বর, তুমি কেন প্রতিবিম্ব চুরি করছো?
যে পথে বেরিয়েছি শৈশব ছেড়ে সেই শৈশবে কি ফেরা যায়? তবে কেন পরিযায়ী শ্রমিকেরা রেললাইন ধরে যৌবনে ফিরতে চাইলো? যে পথ এগিয়ে যায় সেই পথে ফিরতে মানা, ঈশ্বর তুমি কি আমাদের দিকে একটিবারও তাকাবে না? আমরা যে হাভাতে-মুখ্যু-মানুষ কিছুই বুঝি না! কিছুতেই বাড়ি ফিরতে চাইলেও যে ফিরতে পারছি না।
হাঃ ঈশ্বর, বাড়ি ফিরতে কেনো মানা?
আমার পেটে খিদে, মগজেও খিদে তবুও যে শুকনো ঘাসের রুটি গিলতে পারছি না। এই অপরাগতা তুমি কি করে বুঝবে বলো ।আমাদের চাল চুরি হতে হতে যে আমরা আজ নিঃস্ব দয়ামাধব। শুধু বেঁচে আছি ক্ষতবিক্ষত শপথ নিয়ে সেদ্ধ ভাত ফিরে পাবো এই আশায়।
হাঃ ঈশ্বর, তুমি কেনো ভাত চুরি করছো?
স্বর্ণলতা তুমি কেনো গ্যালারির বাইরে দাঁড়িয়ে? আসো দেখে যাও : এ শোক স্বাভাবিক নয়। এ আয়ুহরণ স্বাভাবিক নয়। এ মৃত্যু স্বাভাবিক নয়। ফুলের বাগান যে শুকিয়ে গেলো। চামড়া শুকিয়ে গেলো। ঘিলু শুকিয়ে গেলো। তবে আর কতো মুখ ফিরিয়ে থাকবে বলো?
হাঃ ঈশ্বর, পড়ে থাকা চটি জোড়া কার?
রেললাইন কিংবা আলকাতরার পিচ ধরে যাদের গ্রামে ফেরা হলো না তাঁরাও ওই ‘অপু’দের দলে।
এই শোক, আয়ুহরণ, মৃত্যু ইতিহাস যেন চাপা না পড়ে ভিন্ন ভিন্ন রঙবেরঙের পা-চাটা পতাকার ভিড়ে।।
0 Comments