মঙ্গলেশ ডবরাল -এর কবিতা

রূপায়ণ ঘোষ on

manglesh_dabral_kobita
Manglesh dabrel

মঙ্গলেশ ডবরালের জন্ম হয় ১৯৪৮ সালে উত্তরাখণ্ডে। পরবর্তীতে কর্মসূত্রে দিল্লি নিবাসী। প্রখ্যাত ‘জনসত্তা’ পত্রিকার সাহিত্য বিভাগের পদে ছিলেন দীর্ঘদিন। শেষ দিকে ‘ন্যাশনাল বুক ট্রাস্ট’ -এর পরামর্শদাতা হিসেবেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সামলেছেন। হিন্দি সাহিত্যের প্রগতিশীল ভাবধারার এই কবির কবিতা মূলত সামাজিক অবক্ষয়, গণচেতনা তথা অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছে। ‘পাহাড় পর্ লাল্টেন’, ‘ঘর কা রাস্তা’ তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ। ২০০০ সালে তিনি সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কারে ভূষিত হন। জনপ্রিয় এই কবির ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে ৭২ বছর বয়সে মৃত্যু হয়। 

শব্দেরা

কিছুক্ষণ পরে
শব্দেরা সচল হবে

প্রথমে খুব কাছে ঘেউঘেউ ক‍রে উঠবে একটা কুকুর
আরও কিছু পরে, একটা ঘোড়া ডেকে উঠবে হিনহিন* করে
বস্তির দুর্বল ঘরের পাশে ফিসফিস করে উঠবে শিয়াল

তখনই কোথাও ঝিঁঁঝিঁর কথকতা শোনা যাবে
পাতাদের সরসর আওয়াজ,
আর রাস্তায় দেখা যাবে
কোনও একজন মানুষের একলা হেঁটে যাওয়া।

এই সব কিছুর থেকে দূরে
আমার নিঝুম গ্রামে,
একজন মানুষের ঘরে বাঘের গর্জন শোনা যাবে…


  • হিনহিন- [হ্রেষা বা হেষণি]- হিন্দির লোকায়ত কাব্যরূপ।

প্রতিকার

সুদীর্ঘ কোলাহলের মতন
যেখানে যা কিছু লেখা ছিল
সামান্য থেকে বৃহৎ, অতীত থেকে ভবিষ্যত

অগণন অবয়বে
আমি সেসবই লিখতে থাকি
অনন্ত সংগীতের মতন…


বাঁশি

বাইরে কোথাও বাঁশির শব্দ শোনা যায়
হাত রাখো হৃদয়ের কাছে,
তোমার ভিতরেও অন্য এক বাঁশির সুর ভাসে
অথচ তা সশব্দ নয়…

শ্রোতা হারাতে হারাতে
একদিন সেই সুর থেমে যায়
শোনা যেতে থেকে তার নিজস্ব বিলাপ।
হাত রাখো নয়নবাঁশরিতে
তার ছন্দ থেকে ভস্ম ঝরে পড়ে…


আগুন ও আত্মা

অসংখ্য পাথরের ভিড়ে
রেখে এসো আমাদের শিহরিত শরীর
সেখানে আত্মার জন্ম হবে নিজস্ব ভঙ্গিতে;
ঠিক সেই আগুনের মতো
আমরা যার জন্ম দিয়েছিলাম
এরকমই দু’টি পাথরের মাঝে।


বর্ণমালা

একটি ভাষায় অ লিখতে চেয়েছি
অ-এ অমৃত, অ-এ অনন্ত
অথচ অ-এ অনর্থ, অ-এ অত্যাচার লিখে ফেলি

চেষ্টা করি ক-এ কলম অথবা করুণা লেখার
কিন্তু আমি ক-এ ক্রুরতা, ক-এ কুটিলতা লিখে ফেলি!
এখনো পর্যন্ত খ-এ খরগোশ লিখে এসেছি
কিন্তু এখন খ লিখতে গিয়ে খড়্গের তীব্র শব্দ ভেসে আসে

আমি ভাবতাম ফ-এ কেবল ফুলই লেখা হয়
অনেক অনেক ফুল
ঘরের বাইরে, ঘরের ভিতরে, মানুষের ভিতরে-
অথচ দেখি সমস্ত ফুল
মালা হয়ে শোভা পাচ্ছে অত্যাচারীর গলায়…

কেউ আমার হাত চেপে ধরে বলে ওঠে
ভ-এ লেখো ভয়- সমস্ত জায়গায় ছড়িয়ে থাকা ভয়
দ-এ দমন আর প-এ পতনের সংকেত লেখা হয়।

আততায়ীরা কেড়ে নেয় আমাদের সমস্ত বর্ণমালা
ভাষার হিংসাকে ধীরে ধীরে করে তোলে সমাজের হিংসা-

হত্যার জন্য হ বর্ণটিকে সুরক্ষিত করে রাখা হয়েছে
আমরা যতই হাল আর হরিণ লিখি না কেন
ওরা হ-এ হত্যা লিখতে থাকে প্রতিদিন…

                                 ***** 

ফেসবুক অ্যাকাউন্ট দিয়ে মন্তব্য করুন


রূপায়ণ ঘোষ

জন্ম অগস্ট ১৯৯৩ সালে, বীরভূমে। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে 'প্রাচীন ভারতের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও প্রত্নবিদ্যা' বিষয়ে স্নাতকোত্তর। অনুবাদের পাশাপাশি রূপায়ণ মৌলিক কবিতা ও প্রবন্ধচর্চাও করে থাকেন। তাঁর এ যাবৎ প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে দু'টি কবিতার বই ও একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। বর্তমানে হিন্দি, মরাঠি, ও রোমানিয়ান সাহিত্যের অনুবাদক হিসেবেও তিনি কাজ করছেন।

0 Comments

মন্তব্য করুন

Avatar placeholder

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।