কৌশিক সেন-এর কবিতা
আদিরিপু
কপোলে বিদ্যুৎরেখা, কবরীতে রাতের জানালা
সাম্যবাদ ঘুচে যাক, শুরু হোক কংসবধ পালা।
শিয়রে শমন জাগে, অধিভুত মিলনের পাঠ
মন্দোদরী সান্ধ্যমেঘে, লকলক জ্বলে চিতাকাঠ।
প্লাবনে অলিক কথা, নিবন্ধিত বন্ধ্যা বটচ্ছায়া
আচমন পূর্ণ হলে নামেনা তবুও মোহমায়া!
পথিমধ্যে হৃত হয় লভ্যদ্রব্য, বণিকের ধন
সাধুসঙ্গ সাঙ্গ হয়, রঙ্গে ভরে মৃদু মধুবন।
নিয়ত পূজায় বসে পূজারিণী প্রাপ্ত করে কাম
সোহাগে আঁচল ভরে, বিহগের ঘোঁচে বদনাম।
পুণ্ডরীক ফুটে ওঠে, ভেসে যায় মধু চন্দ্রতরী
দু’করে বকুলসুখ, পাশে থাক নর্মসহচরী!
শাপভ্রষ্ট
১
ঋষি তাঁর কমণ্ডলু থেকে মন্ত্রপূত জল ছিটিয়ে বলেছিলেন,
তথাস্তু!
আমি নেমে এসেছিলাম পার্বত্য উপত্যকার গা ঘেঁষে
ঘন সবুজ অরণ্যে,
কচি পেয়ারাপাতা থেকে সোনালী রোদ ঢেলে দিয়েছি
ঘাসের ঘন অন্ধকারে!
আর্যাবর্তে বহমান নদীর জল ডানায় ডানায়
ছড়িয়ে দিয়েছি পুণ্যপ্রবাহিণী ভারতবর্ষে,
দাক্ষিণাত্যের সুদৃশ্য মালভূমিতে মুঠো মুঠো ছড়িয়ে দিয়েছি
স্বপ্নদৃশ্যের ঋষিশ্লোক!
২
সরিয়ে রাখো,
শাঁখা-নোয়ার পরিতৃপ্তি সযত্নে সরিয়ে রাখো
লোহিতসাগরের পশ্চিমপ্রান্তে।
মধ্যপ্রাচ্যের সুদূর নিকশিয়া থেকে আগত
কোনো বেহেশত ফেরতা হুড়ের স্পর্শধন্য হোক
এই নিষ্কলঙ্ক হৃদয়!
এশিয়া মাইনর, বহু বালুরাশি পার করেছে
এই দিগ্বিজয়ি সুখ,
আমাকে আর মূষিক হয়ে যেতে বোলোনা!
তার চেয়ে বলো,
এই সুপ্রাচীন ইউফ্রেটিসের গর্ভে ডুবে মরি,
হে মুনিশ্রেষ্ঠ!
৩
শাপভ্রষ্ট ঘুরে বেরিয়েছি
পর্বতের কন্দরে কন্দরে,
পায়ের ফাঁকে ফাঁকে গেঁথে নিয়েছি
নব্য নগরজীবন,
পালকে পালকে নান্দনিক চর্যাগীতি!
নীলাভ ঘৃণার আকাশ ফুঁড়ে
পেরিয়ে এসেছি কলোসিয়াম নগরী,
হৃদয়ে নিভৃত অ্যাম্পিথিয়েটারের বৃন্দগান…
হে ঋষি,
আমাকে উড়তে দাও আরও কয়েক শতাব্দী
তারপর ফের ফিরে যাবো
পাথরের গভীর কন্দরে,
বশংবদ আশ্রমিকের মতোই
নিবিড় গোলা থেকে খুঁটে নেবো
সোনালী ধানের অঘ্রহায়ণ!!
0 Comments