বানভাসি পদ্য
১
এঁটো থালাটির গায়ে লেগে থাকে এঁটো ভাতটুকু
পাশ ফিরে শুয়ে আছে তছনছ ভিটেমাটিবুক
আধপেটা গলা কাঁপে ভরপেট সংশয়জলে
স্বভাবে ছলকে পড়ে কবেকার গহীন অসুখ
শুকনো ঢেঁকুরময় তবু ওড়ে স্বাদের অছিলা
সুফলা আগামী শুঁকে উজাগর ক’টি হৃদিকোণ
আচমকা বমি ফুঁড়ে উঠে আসে নিখাদ লালিমা
উঠোনে ফুঁপিয়ে কাঁদে আলুথালু ওষধির বন
ক’ঝড়ে তেপান্তর? কত ক্ষতে মিলবে রেহাই?
রুদালি বাটের কোলে তিরতির পিদিমনিশানি
আধপেটা চোখে ডুবে ভরপেট খোয়াবের রাত
এঁটো আকাশের গায়ে লেগে আছে এঁটো চাঁদখানি…
২
বানভাসি মেঘে ঢাকা থমথমে এই কোজাগরী
অশ্রুসজলে চেয়ে, ক্ষুরধার অশনি-আঘাত
খুঁটের নাভিটি চিরে ভেসে যায় অন্ন-সুরাহা
একমুঠো জোছনায় গৃহিণীর শুনশান হাত
চৌচির শাঁখাজোড়া ছুটেছে নিখুঁত এলোমেলো
টুকরো শাদার শোকে গাঢ় হয় ছটফটে লাল
সহসা ছাপিয়ে এসে সুনিবিড় আঁধারিয়া সিঁথি
ছায়া জুড়ে ক্রমাগত ছিটকোয় সিঁদুরে কপাল
প্রমাদে প্রমাদে ঘেরা অনাবিল দাহসংসার
স্তবের ওপারে স্থাণু, মায়ানৈবেদ্যের ডালি
নিথর আলতা চিরে হেঁটে চলে বিষাদসুদূর
বানভাসি আলেয়ায় ছারখার লক্ষ্মীপাঁচালী…
৩
সদ্য লাশের ঠোঁটে দিশেহারা পিঁপড়ের দল
চকিতে এগিয়ে আসে ছিটেফোঁটা শ্বাসের তাগিদে
উধাও ছাদের নীচে অপলক শূন্য উনুন
শ্রান্ত জোনাকে মিশে রাশিরাশি চকমকি খিদে
কেউ ঘুমে দোলে আর ঘনঘন ঝলসায় কেউ
কারোর আলোটি আজ হতভাগা জ্বরে অশরীরী
নিরুপায় খুঁড়ে ফ্যালে পোড়ামুখ হাঁ-এর অতল
জিভের হিমানি ভেঙে খোঁজে ওম-জনমের সিঁড়ি
হে দরদী খোদাপ্রাণ, আঁজলায় সামান্য দোয়া
ছাদহারা দোচালার তরে হোক ‘ভেস্ত নাজেল’
সোনাচাষ জমি হয়ে ফোটে যেন বিরহী উনুনে
সদ্য ভোরের কাছে, খুন হওয়া মাটির হেঁশেল…
0 Comments