সাগর শর্মা-র গুচ্ছ কবিতা
বসন্ত
কোকিলের উড়াল থেকে খসে পড়ছে
কূ
জ
ন
পালকির ভেতর উন্মনা নতুন বউ।
চার বেহারা ছুটছে মাঠের নির্লিপ্তিতায়—
গমের ক্ষেত থেকে উঁকি মারছে কাকতাড়ুয়া
পালকি ছুটছে—
হন হন হন
হন হন হন
বন-বাদাড়ে ফেটে যাচ্ছে শিমুলের লাল।
এইসব বিষাদ সমূহ
.
পাপিয়ার উড়ালের নিচে
পড়ে আছে
জেব্রা রঙের ছায়া—
পালক কেন যে, লিখে রাখে
এইসব সমূহ বিষাদ!
ডানা থেকে খসে গেলে—
পুকুরপাড়;
জলে—’পৃথক পালঙ্ক’ রচে রাজহাঁস
দূরে কোথাও, বহুদূরের কোন বন থেকে
মিথুন রঙের দিন উড়ে আসে;
যেন এইসব পরিদৃশ্যের পাশে শিস মেরে ওঠে
পরান কোকিল!
কূজনে কূজনে ভরে উঠে মান্দারবন
ঝাঁকে ঝাঁকে রক্তরঙা পলাশ ফুটে থাকে একা—
যেন বসন্তকালের পাশে এক যৌবনহীন ফুরিয়ে আসা বিকেল!
ঝরাপাতা
.
এ রাঙা সন্ধ্যাবেলায়
মান্দার ফুলের মতো ফুটে আছে
ধু ধু মাঠ—
বসন্ত কি জানে?
—শাখার বিচ্ছেদে কতটুকু মর্মরিত ঝরাপাতা!
তবু পাতাকুড়ুনি যত্নে তুলে নেয়—
এইসব মর্মর!
হে ঝরাপাতা, ঝরে পড়ার কালে কেন এত
বিভোর-রঙিন হয়ে ওঠো?
পথের ধুলোয় পড়ে থাকা সেসব মান্দার
ভোরের শিশিরে স্নাত হলে—
পৃথিবীকে স্বর্গ বলে ভ্রম হয়!
তখন বৃক্ষপত্রের ডালে ডালে কোকিল
কুহু রবের আর্তনাদে ফেটে পড়ে—
কাকে হারিয়ে কোকিল, এভাবে ডেকে যাও তুমুল?
বেদনা
যেন সন্ধ্যা গাঢ় নীল রঙের বেদনা
ধীরে রাত্রির ভিতর ডুবে যাচ্ছে একা—
আরও নীল অন্ধকারে…ধু ধু সমুদ্রের জলে;
যেখানে অরণ্য, পাতার সবুজের মতো নীলিমা
সেই অতিদূর অচেনা পাখির পালকের
মতো
দিনের আলোয় উড়তে উড়তে
যেন একখণ্ড সাদা তুলো—
পায়ের পাশে এসে খানিক জিরোয়…
ফের ঘাড়ের কাছে ফেলে রাখে তার যাবতীয় উড়ার দীর্ঘশ্বাস!
যেন বহুদিন ব্যথার বাগানে পড়ে থাকা ফুল, শিমুল!
এখনই কেউ কুড়িয়ে নেবে ঠিক সন্ধ্যা হওয়ার আগেই…
অন্তর্দাহ
.
ছাইদানি থেকে
উড়ে যাচ্ছে নির্জন দুপুর—
প্রখর ফাগুন থেকে গেয়ে উঠছে
কোকিল কুহুকুহু
রেলিং থেকে ঘরে ঢুকছে একরাশ মৌনতা; বাথটাবে শাওয়ার ভিজে যাচ্ছে একলা—
ঘুঙুরের সেই রাগী গোঙানি ঘরময় ঘুরছে না আর…
বালিশের পাশে একান্ত পড়ে আছে নিষ্কাম অন্তর্বাস!
0 Comments