এক গুচ্ছ প্রেমের কবিতা

১. বিষাদসিন্ধু
তুমি মুখ ফিরিয়ে নিয়েছো
তুমি ঘর বাঁধবে না বলে গুছিয়ে নিয়েছো অভ্যাস
এখন আমার চারদিকে জল টলমল করে
যতদূর চোখ যায় শুধুই জলের শব্দ
জলের দোলায় ঘুম ঘুম পায়, স্বপ্নেও খেলা করে ছোটো বড় ঢেউ। আমি নির্জাত সাপের মতো হীনম্মন্যতায় ভুগি, দেবাদিদেবের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে জিভ চেয়ে নিই এক ভরি বিষ
জানি বিষ ঢের ভালো বিষাদের চেয়ে
২. নীরবতা
রব তুমি কি ঘুমালে?
ঘড়ির কাঁটা বারোর ঘর পেরিয়ে এলো
কিছু লিখতে পারি না আজকাল, বলতেও পারি না
বুকের ভিতর অকারণ চিন চিন করে তানপুরা
সুর তোলে না শুধু দীর্ঘশ্বাস ফেলে, আমার সব সুর কবেই খেয়ে ফেলেছে ক্ষুধার্ত এক হতাশাপোকা
মাথার ভিতর ঘরে বেখায়ালে পালকের মতো উড়ে আসে একটা মুখ। ছায়া যেমন নিবিড় তেমনই সেই মুখের চারপাশে দেবদারু গাছের বেড়া, কি ঘন সে মুখ !
মাটির কুঁজোর মতো আদ্র ঠোঁটে ছলকে ওঠে জল
আমার তেষ্টা পাই, মনে হয় গত জন্মের যে নৌকোখানি বাইতে পারিনি শুধু স্রোত ছিল না বলে
এবার ওখানি ভাসিয়ে দিই তবু ডাকতে পারি না ছোঁয়াতে পারি না আঙুল কিছুতেই
চোখ বুজে থাকলে সেই ছায়ামুখ
ফড়িং সেজে আমার চোখের পাতায় বসে
চোখ খুললেই চকিতে উড়ে যায় দূরে, অনেক দূরে
৩. শূন্যতার স্বীকারোক্তি
আজ দেখা হওয়ার ছিল, হলো না
সপ্তম বার ছুঁয়ে দেখার ছিল, হলো না
এভাবেই একদিন তোমার সব ইচ্ছে লন্ঠনের মতো ক্ষীন হবে, আমার স্বপ্ন দেখায় সেমিকোলন পড়বে তবুও আমি অবাক হবো না
তবুও আমি কাতর হবো না
খাঁ খাঁ ভাদ্রর রোদ থেকে বাঁচার জন্য বুঝবো তুমি ছায়া পেয়েছো, শিকড়টা আরো গভীরে গাঁথার জন্য
বুঝবো তুমি মাটি পেয়েছো
ভয় নেই, কোনো অভিযোগ পত্র নয় মৃত্যুর আগে পলাশের ঠিকানায় আমার
সব শূন্যতার স্বীকারোক্তি লিখে দিয়ে যাবো
৪. শূন্য পৃথিবীর মতো
আমার ভিতরে একটা জল ভর্তি বোতল ছিল
তুমি তৃষ্ণার্ত জেনে খুলে দিয়েছি বোতলের মুখ গড়িয়ে পড়েছে সব জল তোমার খালি বোতলে এখন নিঃস্ব আমি আর আমাকে পানীয় জল চেও না
শূণ্যতা ঢাকতে কলিজায় ঘাস রোপন করেছি ঘাসে ফুল ফুটেছে ছোটো ছোটো, যেন প্রজ্জ্বলিত তারা তবু শূন্যতা ঢাকা পড়েনি, দৈর্ঘ্যে প্রস্থে কেবল বড় হয়েছে
তৃতীয়বর্ষ তখন পদ্মানদীর মাঝি পড়ানোর সময় রেজ স্যার বলেছিলেন, বিশ্বাসের রঙ কালো হলে মনে হয় কৃষ্ণপক্ষের রাত ঠিক সেইদিন থেকে আমি কান্নায় ভাঙি কাপ প্লেট দ্বিধায় ভাঙি বাঁধ
ভরোসা, বৃষ্টি হয়ে ঝরুক বন্যায় ডুবুক চাঁদ
0 Comments