শ্রোতা

অভিষেক ঘোষ on

Abhishek_ghosh

(১)

স্বদেশ বাবু মঞ্চে ওঠার মুহূর্তে যে সমবেত করতালি শুনতে পেলেন, দীর্ঘ অনভ্যাসে সেটাই যেন তাঁকে ভিতরে ভিতরে কোথাও কাঁপিয়ে দিয়ে গেল। কিন্তু শুধুই কি তাই ?

তাঁর আর কোনো প্রত্যাশা ছিল না, তিনি যথেষ্ট শান্তিতেই ছিলেন পেনশনভোগী অবসর-জীবনে। ছেলেরা তাঁকে দেখতে পারে না, বউ কথায় কথায় ত্রুটি ধরে একেবারে চোখে আঙুল দিয়ে তা দেখিয়ে দেয়। পাড়ার কোনো কোনো সহৃদয়ের চোখে তাঁর জন্য বরাদ্দ অদ্ভুত এক করুণা – এসব তাঁর সয়ে গিয়েছে।

লোকে সম্ভবত এভাবেই মার্কশিট বানায় তাঁর জীবনের – “আহা রে ! লোকটা কী ছিল ! আর কী হল !” স্বদেশ বাবু অনেক ভেবেছেন এই সমস্যাটা নিয়ে, কী ছিলেন তিনি? সরকারি অফিসের সামান্য কর্মচারী। সারা জীবন বলা যায় তিনি তাই ছিলেন। তবে মুখে হাসিটা বজায় ছিল।

চাকুরি-তে ঢোকার আগের কথা তাঁর আর বিশেষ মনে পড়ে না এখন। খুব ভুলভাল দু-একটা নাড়িয়ে দেওয়া ব্যক্তিগত মুহূর্ত বা, অভিজ্ঞতা ছাড়া অতীত ক্রমশ তাঁর কাছে অস্বচ্ছ আর বিকৃত হয়ে উঠছে। অথচ স্বদেশ বাবুর জীবনে মাঝের পাঁচটা বছর একেবারে অলৌকিক – ম্যাজিকের মতো – জ্বলন্ত অঙ্গারের মতো একেবারে টকটকে লাল হয়ে গনগনিয়ে জ্বলছে স্মৃতিতে। আসলে তিনি বরাবরই একটু গান-বাজনার চর্চা করতেন। অফিসের আড্ডায়, পাড়ায় সরস্বতী পুজোয়, বিজয়া সম্মেলনীতে কতবার তিনি গেয়েছেন তাঁর প্রিয় গানগুলি – ‘কী আশায় বাঁধি খেলাঘর’, ‘বন্ধু তোমার পথের সাথী-কে’, ‘খিড়কি থেকে সিংহদুয়ার’, ‘বন্ধু তিনদিন’ ! প্রথম প্রথম লোকে সত্যিই সেসব পরিচিত গানও শুনতো – তাঁর কন্ঠে ভালো লাগতো বলেই শুনতো। কিন্তু ক্রমশই দেখা গেল শ্রোতারা তাঁকে আর অনুভব করছে না, পাত্তাই দিচ্ছে না, অভ্যাসে পরিণত হয়েছেন তিনি – যেন ভাবখানা এমন – ‘ও তো গাইবেই..’, ‘ও তো গেয়েই থাকে..’। তিনিও আর তাদের অভ্যাসকে ভেঙে ফেলার, নতুন কিছু গান কন্ঠে তোলার তাগিদ অনুভব করতে পারছিলেন না। যেন এও তাঁর একরকম অভ্যাস ! তিনি গাইবেন অথচ কেউ শুনবে না – এটাই বোধহয় স্বাভাবিক। কিন্তু সব বদলে গেল হঠাৎ – মাঝের পাঁচটা বছরে – ম্যাজিকের মতো স্বদেশ বাবুর জীবনের পাঁচটা বছর।

আসলে তাঁর স্কুল জীবনের এক বন্ধুর সাথে হঠাৎই একদিন দেখা হয়ে গেল। এমনিতে তাঁর বেশিরভাগ বন্ধুই অল্পবিস্তর তাঁরই মতো – অলস, অকর্মণ্য, নিপাট ভালোমানুষ। চাকুরিতে প্রায় ধরে বসিয়ে দেওয়া হয়েছিল, সেটাই আঁকড়ে ধরে, ধার-দেনাতে কেটে যাচ্ছে জীবন। কিন্তু এই বন্ধুটি ছিল ছাত্রাবস্থা থেকেই ব্যতিক্রমী। প্রচণ্ড প্রতিভাবান, সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টায় সঙ্গীত জগতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। একের পর এক বাজারের হিট ছবিতে তার গানগুলি জনপ্রিয় হয়েছে। সেই তিমির বিশ্বাসের সাথে একদিন কলেজ স্ট্রীটে হঠাৎ দেখা। তিমির একটা পাছার দিকে চাপা আর গোড়ালির কাছে গিয়ে চওড়া হয়ে যাওয়া, চেক্-কাটা প্যান্ট আর একটা সবুজ রঙের পাতলা ঝোল্লামতো জিনসের শার্ট পড়েছিল। সেটা বোধহয় পঁচানব্বুই – ছিয়ানব্বুই সাল হবে। ওদিকটায় তাঁর যাওয়ার দরকার পড়ে না বড়ো একটা। কিন্তু সেদিন যেতে হয়েছিল শ্যালিকার ছেলের বায়নায়, তার স্কুলের কিছু বই কিনে দিতেই হবে। পিন্টুকে নিয়ে তিনি যখন প্রেসিডেন্সির ঠিক সামনে দিয়ে হাঁটছেন, তখনই কেউ তাঁকে ছেলেবেলার নাম ধরে পিছন থেকে ডেকে ওঠে – “এই হেবো ?” বলাই বাহুল্য এই নাম ধরে বহুদিন তাঁকে কেউ ডাকে নি। তবু তিনি পিছন ফিরে তাকিয়ে ছিলেন আর প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই চিনতে পেরেছিলেন তিমির-কে। না চেনার কোনো কারণ ছিল না – টিভিতে মাঝেসাঝেই দেখা যায় ওর মুখ।

তাঁর এখনও মাঝেমাঝেই মনে পড়ে সেই দিনটার কথা। সেদিন রাজ্যের তৎকালীন ক্ষমতাসীন পার্টির বিরুদ্ধে বিরোধী পার্টি একটা জমায়েত ডেকেছিল। সেদিন সেখানে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু পড়ুয়া আর সক্রিয় পার্টি-কর্মী ছাড়াও ছিলেন কয়েকজন টেলিভিশন ও সিনেমার চেনা মুখ। তিমির বিশ্বাস সেখানেও অটোগ্রাফ দিচ্ছিলেন। আজকের দিনে হলে হয়তো সেলফি তুলতো – কথাটা মনে হতেই নির্মল হাসি খেলে যায় স্বদেশ বাবুর মুখে।

পিছন থেকে তাঁকে দেখতে পেয়ে, তিমির ডেকেছিল। এতদিন পরেও তিমির, যে কিনা একজন স্টার, সে তাঁকে – ছেলেবেলার এক বন্ধুকে মনে রেখেছে ! একথা ভেবেই রীতিমতো অভিভূত হয়ে পড়েছিলেন স্বদেশ বাবু। তারপর প্যারামাউন্টে ডেকে নিয়ে গিয়ে পিন্টু আর তাঁকে সরবত খাইয়েছিল তিমির ! তারপর কথায় কথায় আচমকাই জিজ্ঞেস করেছিল, “হ্যাঁ রে হেবো, এখনও গান-টান গাস ?” শুনে তো পিন্টুর চোখ এক্কেবারে গোল গোল ! তাঁকে চমকে দিয়ে এরপর তিমির তাঁর হাতের উপর হাত রাখেন, “আমার স্টুডিওতে যাবি ? মিটিং শেষ হলেই বেরোবো। এখানে আসার-ও খুব একটা ইচ্ছে ছিল না জানিস ! কিন্তু ওই প্রফেশনাল হ্যাজার্ডস্। আরে ভাই আমরা তো আর আইপিটিএ করছিনা ! তা বল্… যাবি স্টুডিওতে ?”

স্বদেশ বাবু কী বলবেন ? তাঁর কী বলা উচিত ? থতমত ভাবটা যে তিনি কিছুতেই কাটিয়ে উঠতে পারছেন না ! অসহায়ের মতো তিনি শুধু বলতে পেরেছিলেন, “যাবো ? কিন্তু পিন্টু ?”

“আরে পিন্টুকে না হয় আমি ওর বাড়িতে নামিয়ে দিচ্ছি… কদ্দুর ?”

“এই তো টালিগঞ্জ।”

“ব্যাস তাহলে তো হয়েই গেল। জোর আড্ডা হবে আজ।”

পিন্টুর মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছিল, এই বন্দোবস্তে সে খুব একটা খুশি হয় নি। কিন্তু সেসময় ছেলেপিলেরা চট্ করে বড়োদের সামনে তেমন মুখ খুলতো না ! পিন্টুকে তাদের বাড়ির গেটে নামিয়ে দিয়ে ও বাড়ির ভিতরে যাওয়ার অনুরোধ মার্জিতভাবে প্রত্যাখ্যান করে, তিমির তাঁকে নিয়ে গেল বেহালায় তার নিজের স্টুডিওতে।

তিমিরের বিবাহ বিচ্ছেদ সুসম্পন্ন হয়েছে ততদিনে। সেসময় ড্রামস্ আর গিটারের মাঝখানে রাখা একটা আরামদায়ক সোফাতেই তার রাত কাটতো। সে যে ভালোই আছে, সুখেই আছে আর এই একাকীত্ব উপভোগই করছে, বারবার জোরে হেসে উঠে আর পুরোনো দিনগুলোর প্রসঙ্গ টেনে এনে তাই প্রমাণ করতে চাইছিল। যদিও তিমিরের চেষ্টাটা কোথাও ঠুনকো শোনাচ্ছিল, কিন্তু তাঁর সে বিষয়ে কিছুই বলার ছিল না। ইজিপ্সিয়ান দু-তিনটে অ্যান্টিক, দুটো প্রমাণ সাইজের ক্যানভাসে বিদঘুটে তেলরঙের প্রহেলিকা আর ঘর ভর্তি ছড়ানো অজস্র বাংলা ইংরেজি ম্যাগাজিনের মধ্যে যে জিনিসটা সবচেয়ে বেশি তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল, সেটা মদের বোতল। প্রায় ঘরের মেঝেয় গড়াগড়ি খাচ্ছিল বলা চলে। এই তবে স্টুডিও ? – এই প্রশ্নটাই ঘুরপাক খাচ্ছিল তাঁর মাথায়। কিন্তু তাঁকে বসিয়ে রেখে তিমির প্রথমেই ঢুকে গেল অ্যাটাচড্ বাথরুমে, বলল – “তুই বোস। আমার চান হয় নি, সেরেই আসছি। ফ্রিজে কোল্ড ড্রিঙ্কস্ আছে, তুই তো মনে হয় মাল খাস্ না, তাই অগত্যা !”

এভাবেই সেই রোমাঞ্চকর দিনগুলির সূত্রপাত ঘটে স্বদেশ বাবুর জীবনে। অথচ অমন নামকরা সঙ্গীত পরিচালক হয়েও তিমির মোটেও ব্যস্ত ছিল না ! কাজই করত না প্রায়, ঘরেই থাকত বেশিরভাগ সময়। অনেকবার তিনি কথায় কথায় প্রশ্ন করে ছেলেবেলার বন্ধুটিকে বুঝতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিমির হেসেই উড়িয়ে দিত সেসব প্রশ্ন। তবে ক্রমশই তিনি বুঝতে পারেন, তিমির রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েছে। মিউজিক বা, ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে তার আর কোনো আগ্রহ নেই। তবে সেটা সে যেন কেমন গোপন করে যেতে চাইতো ! সেসময় নিয়মিত মেলামেশার সূত্রে, তার অনুপস্থিতি মাত্রই স্বদেশ বাবু অনুমান করতেন, কোনো মিটিং বা মিছিল রয়েছে তার। তবে একটাই কথা বলতো তিমির বারবার, একটা শেষ হিট্ গান সে বানিয়ে যেতে চায়। এমন একটা গান যেটা থেকে যাবে, এমন একটা মেলোডি যেটা কালজয়ী হবে। তবে তার মনে কোথাও একটা দ্বিধা ছিল, নিশ্চয়তার অভাব ছিল, সন্দেহ ছিল তার প্রতিভা ফুরিয়ে গেছে। ঠিক সেই সময়েই, তার সাথে দেখা হয়েছিল স্বদেশ বাবুর।

প্রিয় বন্ধুর সাথে কাটানো সেই মুহূর্তগুলো স্বদেশ বাবু কখনো ভোলেন নি। ভোলা সম্ভব নয় বলেই ভোলেন নি। কারণ গানটা শেষ পর্যন্ত তৈরি হয়েছিল। আর সেই গানটা গিয়েছিলেন স্বদেশ বাবুই, তিমিরের তৈরি শেষ গান। অনেক দীর্ঘ রাত জাগা, অনেক কথোপকথন তর্কাতর্কি, অনেক অনেক মদ্যপানের পর, অবশেষে গানটা রেডি করে ফেলেছিল তিমির। ধূমপান ছেড়ে দিয়েও সেসময় আবার সিগারেট ধরেছিল তিমির। সিগারেটের অসংখ্য প্যাকেটে ভরে উঠছিল তার ঘর। আর সেই ঘর-ভর্তি ধোঁয়ার মধ্যে মগ্ন তান্ত্রিকের মতো তিমির মেঝেয় বাবু হয়ে সোজা বসে গানটা তুলিয়েছিল স্বদেশ বাবুর গলায়। উফ্ কীসব দিন-রাত ছিল… যেন এক আশ্চর্য উন্মত্ততায় অতিক্রান্ত হয়েছিল দিনগুলো।

(২)

সাজঘর থেকে স্টেজে উঠে সমবেত দর্শকের হর্ষধ্বনি আর সামনে থেকে আলোকসম্পাতের মায়াবী দ্যুতিটুকু গায়ে মেখে, আসনে উপবেশনের মুহূর্ত পর্যন্ত যেটুকু সময়, সেইটুকু সময়ের মধ্যেই ফ্ল্যাশব্যাকের মতো স্বদেশ বাবুর মাথায় সমস্ত স্মৃতিগুলো ফিরে ফিরে আসতে থাকে। তিনি খেয়াল করেন তিনি অসম্ভব ঘামছেন। সামনের যে আলোটা তাঁর মুখে এসে পড়ছে, সেটা বড্ড বেশিরকম উজ্জ্বল মনে হচ্ছে ! যে লোকটা তাঁর সামনে মাইক্রোফোন স্ট্যান্ডটা ঠিক করে দিচ্ছিল, সে প্রায় ফিসফিস্ করে বলে গেল, “স্যার সেই গানটা হয়ে যাক্ ?” একটা সময় এ ধরনের আবদার অনুরোধে তিনি অভ্যস্ত ছিলেন। কিন্তু শেষ বেশ কয়েকটা বছর তিনি এই সবকিছু থেকে দূরে। নেহাৎ এই বছর তিমিরের পঁচিশতম মৃত্যুবার্ষিকী ধুমধাম করে পালন হচ্ছে তাই, সেই সময়ের গায়ক-গায়িকাদের আবার ঘটা করে ডেকে আনা হয়েছে। যেন একটা বিস্মৃত কালখণ্ডকে আচমকাই অন্ধকার থেকে চোখ-ধাঁধানো আলোর মধ্যে এনে ফেলা হয়েছে। মাঝে মাঝে স্মৃতিচারণ আর গান চলছে। তাও এই অবধি ঠিক ছিল। কিন্তু এ কেমন শ্রোতা ? এরা তো গান শুনছে না ! কারো গানই শুনছে না ! সেলফি, সেলফি আর সেলফি ! সেই সঙ্গে চ্যাট অথবা ফেসবুক লাইভ। স্বদেশ বাবু অনেকক্ষণ থেকেই লক্ষ করছিলেন, সামনের সিটে জনা পাঁচ-ছয় বয়স্ক ভারী চেহারার, মার্জিত পোশাক পরিহিত গম্ভীর মুখের ভদ্রলোক ও দু-তিনজন সুবেশী ভদ্রমহিলা ছাড়া গান কেউই শুনছে না। এমনকি আরেকটু খেয়াল করতেই বুঝলেন, পিছন দিকে খাবারের প্যাকেট বিলি করা শুরু হয়েছে, তাই নিয়ে হৈহৈ চলছে। এদিকে একজন বক্তা মাইক ছাড়ছেন না – তিনি মাইক ছাড়লেই স্বদেশ বাবুর গান শুরু হবে। তাঁর পাশে বসে একজন তবলা আর একজন হারমোনিয়াম রেডি করছে। আর অল্প দূরে একজন ড্রামস্ নিয়ে বসে, তার মুখটা ভালো দেখা যাচ্ছে না ! তিমিরের সবচেয়ে প্রিয় ছিল ড্রামস্ ! মৃত্যুর ঠিক পূর্ব মুহূর্তে সে বলেছিল, “তুই যেখানেই আমাদের গান গাইবি, দেখবি আমি বসে আছি। আর কেউ শুনুক না শুনুক, আমি কান পেতে বসে থাকবো। ভুল হলে আর রক্ষে নেই।” স্বদেশ বাবুর কপালে আবার বিনবিন করে ঘাম জমতে থাকে, এয়ারকন্ডিশনড্ রুমে বসে থেকেও। ড্রামস্-এ যে বসে, তার মুখটা দেখা যাচ্ছে না কেন ? তবে কী… ?

ওদিকে মাইকধারীর বক্তৃতা শেষ হয়েছে ততক্ষণে। কোনো পলিটিক্যাল লিডার টিডার হবেন, তুমুল হাততালি চলল কিছুক্ষণ। তাঁর নাম ঘোষণা করা হতেই তিনি গলা হাঁকড়াতে গেলেন। কিন্তু একী ! গলাটা এমন শুকনো লাগছে কেন ? এরকম তো হওয়ার কথা নয় ! এই গান তো তিনি অন্তত পাঁচশো বার গেয়েছেন অন স্টেজ। সবেধন নীলমণি এই একটিই তো তাঁর নিজস্ব গান, এক্কেবারে অরিজিন্যাল মেলোডি ফ্রম দ্য গ্রেট তিমির বিশ্বাস ! তিমির-ও চলে গেল আর তাঁর কেরিয়ারও সস্তা তুবড়ির মতো জ্বলে উঠে, ভুস করে আচমকা নিভে গেল ! হায় ! কেরিয়ার ! একে কি কেরিয়ার বলা চলে ? কিন্তু ওই একটা গান – “তোমাকে শোনাবো বলে…” ! উফ্ কী সুর ! কী কথা ! কী অপরূপ আবেগ ওই গানে ! সেকথা ভাবতেই কোনোমতে গলায় জোর খুঁজে পান স্বদেশ বাবু। জল চাইতে চেষ্টা করেন, কিন্তু কিছুতেই তাঁর গলা দিয়ে কোনো শব্দ উচ্চারিত হয় না। একটা কথাও তিনি উচ্চারণ করে উঠতে পারেন না। অগত্যা ইঙ্গিতেই জল চান। ড্রামস্-এ যে বসেছিল, এসময় সেই একটু ঝুঁকে একটা জলের বোতল পাশ থেকে তুলে এগিয়ে দিল স্বদেশ বাবুর দিকে।

তবলচি সেটা নিয়ে তাঁর হাতে তুলে দিল। জলটা যখন গলায় ঢালবেন বলে তিনি বোতলটা তুলেছেন আর স্বভাবতই ঘাড়টা কিঞ্চিত হেলাতে হয়েছে, ঠিক তখনই তাঁর চোখ প্রথমবার ছুঁয়ে গেল ড্রামস্-এর পিছনের মুখটা। রহস্যময় আলো-ছায়ায় এই মুখ যে তাঁর বড্ড চেনা ! এ যে তিমির ! কিন্তু তা কি করে সম্ভব ? তিমির বেঁচে থাকলে তার বয়স কত হতো ? একষট্টি বা, বাষট্টি ! কিন্তু ওই লোকটির যে বয়স এতটুকু বাড়ে নি ! সেই.. সেই বয়সেই থেমে আছে। একেবারে এক মুখ, এক বয়স, এক অভিব্যক্তি ! স্বদেশ বাবুর হাতের বোতল থেকে সবটা জল তাঁর মুখ পেরিয়ে গায়ে পড়ে জামা ভিজিয়ে দিতে লাগলো। সামনের দর্শকাসনে একটা সাড়া পড়ে গেল। কর্মকর্তারাও হতভম্ব ! স্বদেশ বাবুর চোখের সামনে আলোটা দুলতে লাগলো। বিস্ফারিত চোখ আর হাঁ-করা মুখ নিয়েই তিনি জ্ঞান হারালেন।

(৩)

জ্ঞান যখন ফিরল স্বদেশ বাবু দেখলেন, তার চোখের সামনে যে লোকটা বসে আছে সে আর কেউ নয়, তাঁর বন্ধু তিমির ! বয়সটাই কেবল যেন আশ্চর্যজনকভাবে নির্দিষ্ট জায়গায় থমকে আছে তার !

আশপাশটা কেমন আশ্চর্য শুনশান হয়ে গেছে হঠাৎ। এতগুলো লোক তাহলে গেল কোথায় ? তিনিই বা কতক্ষণ অজ্ঞান হয়ে ছিলেন ? বাদকরা নেই, শ্রোতা বা দর্শকরা নেই, অনুষ্ঠানের আয়োজক ও কর্মকর্তারা নেই, সবাই যেন একেবারে উধাও হয়ে গেছে। সবচেয়ে ভীতিকর ব্যাপারটা হল, আশপাশে যেন সব একেবারে নিঝুম হয়ে গেছে, কোথাও কোনো শব্দ নেই। আলো বলতে একটিমাত্র টিউব ঠিক তিমিরের মাথার উপরে সিলিংয়ে, সেটাও জ্বলছে নিভছে। আলোটা কেন অস্বাভাবিক রকমের কমজোরি, চেনা মুখ হলে তবেই চেনা যাবে এমন আলোয়। অস্বস্তিকর থমথমে হলঘরটায় সারি সারি ফাঁকা চেয়ার যেন অসংখ্য অশরীরীদের ধারণ করে স্থির হয়ে রয়েছে, তাদের চোখে দেখা যাচ্ছে না, কেবল একটা গান শোনার জন্য যেন তীব্র একটা অপেক্ষায় স্তব্ধ হয়ে রয়েছে তারা ! স্বদেশ বাবু কি তবে ওদের গান শোনাবেন? কিন্তু তিমির কিছু বলছে না কেন? তাঁর কি উচিত নয় তিমির-কে ডেকে কথা বলা ? কিন্তু তিনি ওর সাথে যা করেছেন, তার পরও.. ! কী করেছেন? নিজের ভাবনায় নিজেই চমকে ওঠেন তিনি ! যেন একটা বিস্মৃতপ্রায়, চরম অস্বস্তিকর দুঃস্বপ্নের মতো তাঁর মনে পড়ে যায় কয়েকটা দৃশ্য। টিউব লাইটটা দপদপ করতে থাকে, আর সেদিকে তাকাতেই স্বদেশ বাবুর চোখে ফ্ল্যাশব্যাকের মতো দৃশ্যগুলো ভেসে উঠতে থাকে।

(8)

তিমির যখন গানটা বানাচ্ছিল, প্রথমটায় সে লাগাতার স্বদেশ বাবুকে নিয়ে বসতো। তিনিও অফিস থেকে সোজা চলে যেতেন ওর স্টুডিওতে, অথবা তিমিরই কখনও-বা তাঁকে তুলে নিত গাড়িতে। তিমিরের সুরা ছাড়া চলতো না আর স্বদেশ বাবুর জন্য বরাদ্দ ছিল কোল্ড ড্রিংস, কোকাকোলা বা, কোনো ফ্রুট জুস। রবিবার হলে তো কথাই ছিল না… সারাদিনই দু-জন একসাথে। “তোমাকে শোনাবো বলে…” তৈরি হওয়ার পরপরই তিমির বুঝতে পারে, ও যা চাইছিল সেটাই হয়েছে। এই সেই গান, যা থেকে যাবে – এর সুর, প্রতিটি লাইন রক্তের অণু-পরমাণুতে পৌঁছে মিশে যাবে। মনে-মাথায় গেঁথে যাবে। তিমির তখন কেমন যেন একটা হয়ে গিয়েছিল ! যেন খ্যাপা পরশপাথর খুঁজছিল, পেয়ে গিয়ে বোধবুদ্ধি হারিয়ে ফেলেছে। এই অবস্থাটা বহাল ছিল প্রায় এক সপ্তাহ মতো। তারপর এক রবিবার সকালে আচমকাই ফোন আসে স্বদেশ বাবুর বাড়িতে।

“হেবো, শোন্ তোর আর আজ আসার দরকার নেই। আজ রেকর্ডিং, গানটা আমি অমৃতা-কে দিয়ে গাওয়াবো। রেকর্ডিং হয়ে যাক্, তারপর তোরা সবাই মিলে আসিস, একটা গেট টুগেদার হবে।”

শুনে আকাশ থেকে পড়েছিলেন স্বদেশ বাবু। তিনি যে দিনের পর দিন সময় দিলেন, তাঁর সমস্ত সাধনা ঢেলে দিলেন, নাওয়া-খাওয়া ভুলে, মাতালের মাতলামি ভুলে ওই একটা গানের জন্য স্টুডিওতে পড়ে রইলেন, সেসবের কি তাহলে কোনো মূল্যই নেই ? তিমির কি তাহলে তাকে কেবলমাত্র ব্যবহার করলো ? তিনি কি তিমিরের করুণার পাত্র ? না এ হতে পারে না, হতে দিতে তিনি পারেন না। তাছাড়া সেই গান তিমির কাকে দেবে ? অমৃতা-কে ? কে অমৃতা ? তার সাথে এখন তিমিরের কীসের সম্পর্ক ? ডিভোর্স হয়ে গেছে দু-জনের। হ্যাঁ একটা ছেলে রয়েছে বটে ওদের, সেই জন্যই মাঝেমাঝে যায় তিমির। নইলে চরম তিক্ততাতে যে সম্পর্ক শেষ হয়ে গেছে, তাতে ফিরে যাওয়ার অর্থ কী ? না না.. তিমির তাকে এভাবে ঠকাতে পারে না। রাগে আর উত্তেজনায় সেদিন শক্ত হয়ে গিয়েছিল স্বদেশ বাবুর চোয়াল, কপালটায় শিরা দপদপ করছিল।

(৫)

“কী রে গান গাইবি না ?” আধো আলো আধো অন্ধকারে স্বদেশ বাবুর সোজাসুজি বসে প্রশ্ন করলো তিমির।

“গান ! না আজ আর ভালো লাগছে না। বাড়ি যাই।”

“দুর্ পাগল। বাড়ি যেতে তোকে দিচ্ছে কে ? এখন তো তোকে গান গাইতে হবে। কিন্তু সবার আগে আমাদের সেই গানটা। বড়ো ভালো গেয়েছিল তুই। এতোটা আমি আশা করি নি। তুই জোরাজুরি করলি বলেই অমৃতার পরে তোর-ও আলাদা রেকর্ডিং হল। ভাগ্যিস তুই জোর করেছিলি। নইলে আমার কপালে যে কিঞ্চিৎ অমরত্ব জুটেছে, জুটতো কিনা সন্দেহ। রিহার্সালে যা যা ভুল করেছিলি, সব তুই রেকর্ডিংয়ে শুধরে নিয়েছিলি। কী করে পারলি রে হেবো ? আমি সত্যিই চমকে গিয়েছিলাম।”

ম্লান হাসেন স্বদেশ বাবু। যেন অপ্রত্যাশিত করুণা ! শুধু বলতে পারেন, “তুই… এখনো বেঁচে ? কী করে ?”

নিস্তব্ধ ঘরটাকে কাঁপিয়ে তুলে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে তিমির। তারপর মাথাটা সামনে একটু ঝুঁকিয়ে বলে, “অমৃতার সাথে সম্পর্কটা প্রায় জোড়া লেগেই গিয়েছিল। অমৃতাকে ছেড়ে, খোকা-কে ভুলে আমি কোনোদিনই থাকতে পারি নি। তাই মদ খেয়ে ভুলে থাকতে চাইলাম। গান-বাজনা মাথায় উঠেছিল। ভেবেছিলাম পার্টি-পলিটিক্সে ঢুকলে ভুলে থাকবো। তাও পারি নি। কিন্তু ও তো একজন গায়িকা, ও তো আমার মিউজিকের জন্যই আমাকে শুরুতে ভালোবেসে ছিল, কাছে এসেছিল। আমি ঠিক জানতাম, আমার জন্য না হলেও, যদি ওর জন্য একটা মনে রাখার মতো গান বানাতে পারি, ও ঠিক আমাকে ক্ষমা করে দেবে। তোকে তো বলেওছিলাম কতবার মদের ঘোরে। বলিনি ? বল্… তুই জানতিস না ?”

ধরা পড়ার আতঙ্কে দিশেহারা স্বদেশ বাবু মাথাটা দুই হাতে চেপে বলতে বাধ্য হন, “হ্যাঁ জানতাম। আমি ভুল করেছিলাম। স্বার্থপরের মতো গানটা আমি.. আমি ছিনিয়ে নিতে চেয়েছিলাম। ভেবেছিলাম… ধরে নিয়েছিলাম, ওই গান আমার প্রাপ্য।”

“আর সেই গানের জন্য তুই আমাকে ব্ল্যাকমেইল পর্যন্ত করলি ? এই তিমির বিশ্বাস-কে ? তোর ছেলেবেলার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধুকে ? যে তোকে বিশ্বাস করে ঘরে এনে তুলেছিল !”

“আমি তো বললাম, আমি ভুল করেছিলাম। আমায় তুই ক্ষমা করে দে তিমির… আমি তোর কাছে ক্ষমা চাইছি।” – বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বদেশ বাবু।

“ক্ষমা ! আচ্ছা ক্ষমা করে দেবো, আগে গানটা শোনা। সেই গানটা। যদি এখনও একদম ঠিক ঠিক গাইতে পারিস, তোকে ক্ষমা করে দেবো। নে শুরু কর।” – তাড়া লাগায় তিমির।

“আমি পারবো না তিমির। আমার আজ শরীরটা একদম ভালো নেই। আমায় তুই প্লিজ ক্ষমা করে দে।”

“ক্ষমা ? আমাদের কোনোরকমে সারিয়ে তোলা, জোড়া লাগতে চলা সম্পর্কটা তুই ভাঙলি ওই একটা গানের জন্য। খোকা-কে ছিনিয়ে নিয়ে অনেক দূরে চলে গেল অমৃতা। তুই তাতেও শান্তি পেলি না। ওই একটা গানে তোর মন ভরছিল না। তোর যে তখন খ্যাতি, অর্থ, প্রতিপত্তি – এসব ভালো লাগতে শুরু করেছে, তাই না ? আরো গান চাই তোর। আর সেটাও আমার কাছে। তার জন্য দিনের পর দিন ব্ল্যাকমেইল, নানাভাবে মানসিক নির্যাতন, সব করেছিস তুই। করিস নি ? আজ একটা গান শুনতে চাইছি… এটুকু তুই করতে পারবি না। গানটা শোনা, নইলে ভালো হবে না, বলছি কিন্তু। আমি তোকে সাবধান করছি।”

“দয়া… দয়া কর আমায় ! নইলে আমি মরে যাবো।”

“মরে তো আমি গেলাম রে ! নিদারুণ যন্ত্রণায়, মনোকষ্টে, অবসাদে, ভয়ে। আর তাছাড়া আমি তো তোকে বলেইছিলাম, এই গান তুই যেখানেই গাইবি, জানবি আর কেই শুনুক না শুনুক, আমি ঠিক শুনবো। আমি তোর সেই শ্রোতা, যে মরণের ওপার থেকেও ফিরে আসতে পারে ওই একটা গান শোনার জন্য। বলিনি তোকে ? তুই জানতিস না, আমি আসবো ? বিশেষত আমার এই স্মরণ-সভায়… !”

“কিন্তু শেষদিকে কি তোর-আমার সম্পর্ক আবার আগের মতো হয় নি ? তুই মনে করে দেখ, হসপিটালে আমি তোর পাশে কত দিন বসে থেকেছি সেসময় !”

“হ্যাঁ ছিলি। কিন্তু কারণটা কী হেবো ? আমার জন্য না নিজের জন্য ? তুই জানতিস, আমি সেরে উঠে সুস্থ স্বাভাবিক হয়ে উঠলে তোর ওই ঠুনকো কেরিয়ার, রাতারাতি হিট গানের জন্য লক্ষ লোকের হাততালি – সব শেষ হয়ে যেতে পারে। তাই শেষ পর্যন্ত তুই আমায় খুন করলি।”

“নাহ্ না। এ তোর ভুল ধারণা তিমির। আমি তোকে খুন করি নি।”

“ভুল ধারণা ! অমৃতা আর খোকাকে দিনের পর দিন কে আমার থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিল ? কে দেখা করতে দিত না ? কে বলেছিল, তিমির তোমাদের কারো সাথে দেখা করতে চায় না ? আমি তো তা বলিনি কখনো। আমি তো ছটফট করছিলাম ওদের সাথে দেখা করার জন্য, খোকা-কে একটিবার আদর করার জন্য। আর তুই আমাদের সবার সাথে ছলনা করেছিস, তোর স্বার্থের জন্য। আমাকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছিস। হসপিটালের বেডে লুকিয়ে মদ খাইয়েছিস ডাক্তারের নিষেধ অমান্য করে। কেন হেবো ? আমি মরে গেলে সব চাপা পড়ে যাবে, সেই জন্যই, তাই না ?”

ফাঁদে আটকা পড়া ইঁদুরের মতো স্বদেশ বাবু স্বীকার করতে বাধ্য হন সমস্ত অভিযোগ, “মানছি মানছি সব তিমির। আমি মেনে নিচ্ছি। আসলে আমি তো কোনোদিন কিছু পাই নি। চাইও নি। তুই আমায় এমন কিছুর খোঁজ এনে দিলি, যা সব এলোমেলো করে দিল ! আমার পৃথিবীটাই বদলে গেল। তারপর কী করে আমি আবার সেই আগের একঘেয়ে জগতটায় ফিরে যাবো ? আমার উপায় ছিল না রে ! সাধ্য ছিল না।”

“গানটা গা হেবো। গানটা শোনা আমাকে। একটু শান্তি দে আমায়। মনে রাখিস, আজ আমিই তোর একমাত্র শ্রোতা।” – রক্ত জল করা খুনে গলায় বলে ওঠে তিমির।

(৬)

গানটা শেষ পর্যন্ত গেয়েছিলেন স্বদেশ বাবু। জ্বরের ঘোরে, ইনিয়ে বিনিয়ে, অ্যাম্বুলেন্সে। জ্ঞান ফিরলে বুঝতে পেরেছিলেন, কী ভুলটাই তিনি করে ফেলেছেন ! অনুষ্ঠানের মঞ্চে সহসা জ্ঞান হারালে, আয়োজকেরা তাঁর বাড়িতে ফোন করে। তাছাড়া তিমিরের সেই একমাত্র ছেলে অমর, সে তো মঞ্চে ছিলই। ছেলেবেলায় দেখা কাকাবাবুকে তো আর সে ভোলে নি, ভোলা সম্ভব নয় বলেই ভোলে নি। ভুলতে পারে নি। আজ সে ড্রামস্-এ বসে, অসুস্থ স্বদেশ বাবুর অপরাধবোধ-প্রসূত দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে মধুর প্রতিশোধ নিল। তাঁর মুখ থেকে এতকালের গোপন বীভৎস সত্যিগুলো বের করে নিল, জ্বরের ঘোরে প্রশ্ন করে। স্ত্রী-কন্যা ও তিমির-পুত্র খোকা ওরফে অমরের চোখের দিকে চেয়ে, ঝাপসা আর ভোঁতা দৃষ্টিতেও স্বদেশ বাবু অনুভব করতে পারছিলেন, তিনি জীবনের এই শেষ পর্বে এসে শেষ পর্যন্ত হেরে গিয়েছেন।


ফেসবুক অ্যাকাউন্ট দিয়ে মন্তব্য করুন


অভিষেক ঘোষ

পেশায় স্কুল শিক্ষক, নেশায় কবি, গল্পকার ও প্রাবন্ধিক, চলচ্চিত্র সমালোচক ।

0 Comments

মন্তব্য করুন

Avatar placeholder

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।