পালনীয়
“সুধা, আরে ও সুধা, কোথায় রে, সব যোগাড়যন্ত্র হলো? অনেকবেলা হয়ে গেলো রে! পুরুতঠাকুর চলে আসবেন, হাত চালিয়ে কর মা।“
গিন্নী মার হাঁকডাকে সুধা তাড়াতাড়ি মালার গিট্ দিয়ে উঠে পড়ে। মুখে বলে- “এই যো হয়ে গেছে। এখন শুধু মালাটা পড়িয়ে চন্দনের ফোঁটাটা দিলেই ব্যস,শেষ।“
রায়বাবুর বাড়িতে সুধা অনেকদিন থেকে কাজ করছে। প্রতি বছরের মতো এবারও রবিঠাকুরের জন্মজয়ন্তী পালন হবে। এবার আয়োজন কম। লকডাউনের জের। তবুও জনা পঞ্চাশেক মানুষের জলখাবার গোপালঠাকুরের সাথে মিলে তৈরী করেছে। সব ব্যবস্থা করতে করতেই পুরুতমশাই এসে হাজির। লোকজনও জমায়েত হয়েই ছিলো। ফাঁকাফাঁকা বসে। যাঁরা এসেছেন সবাই সম্ভ্রান্ত শিক্ষিত পরিবারের মানুষ।
পুজার্চ্চনা শেষে ভালো প্রণামী পেয়ে পুরুতমশায়ের বেশশশ খোশমেজাজ। হাঁক ছেড়ে সুধাকে বললেন- “ হারেএএএ একটু চা দে রে সুধাআআআ?”
“দি বাবা” – ব’লে চা দিতে এসে বলে- “বাবাঠাকুর উনি কি করছেন যে রায়বাবু প্রতিবছর এতো আয়োজন করেন?”
“অতো তুই বুঝবি নাআআ। উনি মহান মানুষ। মানবতার সেবক, সত্য সুন্দরের পুজারী । নমস্য ব্যক্তি।“ বোলে আয়েশে চা খান।
সুধা- “ তবে তো উনি বেঁচে থাকলে এই আয়োজন কখনই করতেন না এ দুঃসময়ে! বরং এই সব বড়োবাবুদের থেকে টাকা পয়সা নিয়ে আমাদের মতো গরীবের পাশে দাঁড়াতেন। দুমুঠো খাবার তুলে মানবের সেবা নিশ্চয়ই করতেন।“
পুরুতঠাকুরের মুখে কথা নেই। ছাদে একটা কাক কাআআ কাআআআ করে ডাকছে।
0 Comments