হাবলু
মুখুজ্যেমশাই জানে হাবলু তার দাদার মতো না, টেনেটুনে পাস দিয়ে এইবারে এইট। বইখাতায় মন নেই, মাথা আছে। এদিকে পেন, পেনসিল, ইরেজার মুখুজ্যেমশাই প্রায়ই নিয়ে আসে। লাগলেও, না লাগলেও। কাগজও। বাঁধানো, রুলটানা, শাদা।
হাবলুকে নিয়ে মুখুজ্যেবাড়িতে সবারই খুব দুশ্চিন্তা।
কাজের মাসি বুড়িমাকে হাবলু ভালোবাসে। বুড়িমা তাকে ছাতিমফুল এনে দেয়, ডাঁসা পেয়ারা, এমনকি আমচুরও এনে দেয়। জ্বরজ্বালা লেগেই থাকে। বুড়িমা মাথায় জল ঢালে, মাথার পাশে বসে কপালে জলের পট্টি দেয়, গরম জলে গা স্পঞ্জ করে, ছোটবেলায় শোনা আবোলতাবোল গল্পও শোনায়।
বুড়িমা সুযোগ পেলে কিছু না কিছু চুরি করে। সার্ফের পাউডার, আলু-পেঁয়াজ, চিনি। ধরাও পড়ে। ধরা পড়লে সবাই, মুখুজ্যে গিন্নি থেকে হাবলুর ক্লাস ইলেভেনের দাদা অব্দি সব্বাই, যা নয় তাই বলে খুব হেনস্থা করে। হাবলুর মনখারাপ হয়। হাবলু দাদার দুষ্টুমি জানে। বুড়িমা হয়ত একটুখানি সার্ফ পাউডার কাগজে মুড়ে ছাদের কিনারায় রেখে এসেছে, ঘরে ফিরে যাবার সময় লুকিয়ে নিয়ে যাবে। ছাদ থেকে নামতেই দাদা সেটুকু লুকিয়ে ফেলে। ঘরে যাবার আগে বুড়িমা ছাদে গিয়ে খুঁজে পায় না। এসব নিয়ে বাড়ির সবাই হাসাহাসি করে।
বুড়িমা আজ দুটুকরো ভাজা মাছ চুরি করতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়েছে। বাড়িশুদ্ধ সবাই ধড় থেকে মুন্ডুটা আলাদা করতে বাকি রেখেছে খালি। দেখে হাবলুর মনে বড়ো কষ্ট হল। মুখুজ্যেমশাই ড্রয়িংরুমে তখন। খবরের কাগজ হাতে। হাবলু সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। খালি হাতে না। বইএর ব্যাগ হাতে। মুখুজ্যেমশাই জিগগেস করল— কি ব্যাপার? বেলা বারোটার সময় বইখাতা নিয়ে? কোন দিকে সূর্য উঠল আজ?
হাবলু বইএর ব্যাগটা মুখুজ্যেমশাইএর সামনে টেবিলের ওপর রেখে পেনসিল পেন ইরেজার আর বাঁধানো খাতা এক এক করে বের করল। অনেকগুলি পেন। অনেকগুলি পেনসিল। চার-চারটে ফুলস্কেপ কাগজের বাঁধানো খাতা।
মুখুজ্যেমশাই জিগগেস করল— ব্যাপার কি? এইসময়…
হাবলু তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল— বাবা, এই পেন, পেনসিল, খাতাগুলো তুমি আমাকে এনে দিয়েছ।
মুখুজ্যেমশাই বলল— দিয়েছি। পড়ালেখার নাম নেই…
হাবলু বলল— কোথা থেকে এনে দিয়েছ?
মুখুজ্যে মশায় উত্তর দিল— অফিস থেকে। কেন?
হাবলু বলল— কিছু না। এমনিই।
0 Comments