চর মুক্তার পুর
সন্ধ্যা নামলেই বাতাস ঘন হয়। সদর দরজায় খিল পড়ে। সূর্য্য ডোবার আগেই রাতের খাবার শেষ। মাটির দাওয়ায় জ্বলতে থাকে নিভু নিভু লম্প।
অপেক্ষা।
অপেক্ষা।
শন শন করে হাওয়া বইবে।
কু…. কু….. কু…… হাড় হিম করা আওয়াজ।
নদীর তীরে ধরে, তরমুজ খেত পেরিয়ে।
লম্বা… লম্বা….. কালো ছায়া। কুঁড়ে ঘর গুলোর খড়ের ছাউনির উপর দিয়ে যাবে।
মৃত্যু। সাক্ষাৎ যমদূত।
সারা রাত ঘরের চৌকাঠ পেরোনো নিষেধ। পেরোলেই মৃত্যু।
অপেক্ষা, পরের দিন সকালের।
খোঁজ, কার ঘরের দেয়ালে পড়লো বিশাল হাতের ছাপ।মৃত্যুর আগাম পরোয়ানা।
…..…………………
–হ্যালো মিস্টার দত্ত, আমি মিস্টার খান, আই মিন কবীর খান। স্পেশাল ইনভেসটিগেসন অফিসার এবাউট মুক্তারপুর চর।
–ওয়েল কাম স্যার, চা না কফি?
–চা, বেশি চিনি, গল্পের ডিটেইলস বলুন।
–দু মাস আগে থেকে স্যার।আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে সারা গ্রামে। কেউ কিছু মুখ খুলছে না। সন্ধ্যা হলেই গ্রামে কেউ রাস্তায় যাতায়াত করছে না, বাড়ি থেকে বেরোচ্ছে না। সাক্ষাত যমদূত নাকি ঘুরে বেড়াচ্ছে।
–কোনো মৃত্যুর খবর বা ছেলে হারিয়ে যাবার খবর আছে?
–না
–হা… হা… হা… হা…। হাসিতে ফেটে পড়েন মিস্টার খান। – কি বলেন যমদূত প্রান নিচ্ছে না!
–কোনো খবর নেই স্যার।
–আজ রাতে তবে মুলাকাত করতে হয়। মিস্টার দত্ত, আপনি ফোর্স রেডি রাখবেন। মেসেজ পাবার পনেরো মিনিট মধ্যে স্পট এ পৌঁছানো চাই। ও হ্যাঁ, ত্রিশ ফুট লম্বা এক দড়ি চাই কিন্তু।
–আপনি একা যাবেন স্যার?
–ডোন্ট ওরি। পাগল কে ভূতেও ধরে না, মরণ ও না।
……………………………………..
গত দিন তিন বাড়ির দেওয়ালে হাতের ছাপ পড়েছে। বুধু কিসকু, জয়া কিসকু আর নারায়ণ মাঝির। তারপর থেকে বুধুর ছেলের জ্বর। আতঙ্কে এতটুকু হয়ে গেছে সবাই। তবে কি শুরু হল দিন গোনার পালা?
চুপচাপ সারা গ্রাম। বাচ্চারা কাঁদতে ভুলে গেছে।
কু…. কু…. কু……
ডাক শুরু হয়েছে। ছায়াটা এগিয়ে আসছে একটু একটু করে।
এক সাথে জ্বলে উঠলো ছয়টি ফ্লাশ লাইট। দড়ি এর ফাঁসে আটকা পড়লো রনপা আরোহী তিনটি মানুষ।
আচমকা ঘটনায় জেগে গেছে সারা গ্রাম।
– আপনাদের মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে, বোকা বানিয়ে চোরা কারবারিরা সক্রিয় হয়ে উঠেছিল নদী পথে। হয়তো ভয়টা কে জিইয়ে রাখার জন্যে দু একটা প্রাণ ও যেতো। কিন্তু পুলিশ প্রশাসনের কাছে খবর ছিল বলে বেঁচে গেলেন।
ভয় কে জয় করে বাঁচুন।
মিস্টার খান এর কথা তে হাততালি তে ফেটে পড়লো গ্রাম। খান খান হয়ে গেলো মুক্তারপুর চরের ভয় ও রহস্য।
0 Comments