এক আশ্চর্য চোর অথবা জাদুকরের গল্প

অনন‍্য পাঠক on

আজ এক আশ্চর্য চুরির গল্প বলবো।
এই গল্পের নায়ক সেই ধূর্ত চোর, যে কিনা বন বাদাড় পাহাড় জঙ্গল খুঁজে তুলে নিয়ে এসেছিলো এক বিস্ময় জাদুকরকে। সে জাদুকরের কাছে ছিলো অনেক আশ্চর্য বেলুন, যার মধ্যে কোনোটার রঙ ছিলো লাল, কোনোটার গেরুয়া আবার কোনোটার মধ্যে ছিলো নকল হীরের মিথ্যে আভা। অথবা এ গল্পের নায়ক হতে পারে এই জাদুকর‌ও, কারণ গোটা গল্পের ভিতর শুধু জাদুকরকেই প্রকাশ্যে দেখা গেছে।
চোর প্রথমেই যা করলো, তা হলো, জাদুকরের জন্য প্রচার। নিজের জমানো বেশ কিছু টাকা খরচ করে চোর সবাইকে ডাকলো এক বিশাল মাঠে। বিজ্ঞাপনের চটকে ভুলে সেই মাঠে গিয়ে হাজির হলো শহরের সমস্ত মানুষ। যখন শহরের প্রতিটি গলি ফাঁকা হয়ে গেছে, প্রতিটি ঘর থেকে খেলা ফেলে বেরিয়ে এসেছে বাচ্চা, আর ধর্মগ্রন্থ ফেলে বেরিয়ে এসেছে বুড়ো, মেশিন ফেলে বেরিয়ে এসেছে দর্জি, হাতা খুন্তি ছেড়ে বেরিয়ে এসেছে ঘরের বৌ, ঠিক তখনই জাদুর খেলা দেখাতে শুরু করলো জাদুকর। কী আশ্চর্য তার খেলা দেখানোর ক্ষমতা! সত্যি বাহবা দিতে হয়। সুসজ্জিত মঞ্চের উপর থেকে এক একটি বেলুন সে হেসে উড়িয়ে দিচ্ছে আকাশের দিকে, আর সে বেলুন এসে ঘুরে ঘুরে উড়ছে মাঠে জড়ো হ‌ওয়া মানুষগুলোর মাথার উপর। সবাই আনন্দে আত্মহারা হয়ে হাততালি দিচ্ছে। একটি বেলুনের খেলা শেষ হয়ে, তা ফেটে যাওয়ার আগেই জাদুকর একটি নতুন বেলুন উড়িয়ে দিচ্ছে। জাদুকর‌ই শিখিয়ে দিয়েছিলো, প্রতিটি বেলুনের খেলা শেষ হবার মুহূর্তে যখন‌ই জাদুকর ইঙ্গিত করবে, তখন‌ই জাদুর দেবী হেকাটের নামে জয়ধ্বনি করতে হবে সবাই মিলে। ন‌ইলে জাদুর খেলা ভেস্তে যাবে। যেহেতু কেউ চায়নি খেলা ভেস্তে যাক, তাই সবাই মিলে জয়ধ্বনি দিচ্ছিলো। কেউ জয়ধ্বনি করতে ভুলে গেলে লোকেরাই তাকে মনে করিয়ে দিচ্ছিলো‌। কারণ তারা বিশ্বাস করেছিলো এই জয়ধ্বনির জোরেই জাদুকর খেলা দেখাতে পারছে।

এইভাবেই একের পর এক খেলা দেখে আর হেকাটের নামে জয়ধ্বনি দেওয়ার উন্মাদনায় ক্ষুধা তৃষ্ণা ভুলে থাকার পর অবশেষে যখন সন্ধ্যা নামলো, আকাশকে ঘিরে ফেললো অন্ধকারের ঘন কালো বিষ, তখন সবার মনে পড়লো ক্ষুধার কথা। কারণ তখন আর জাদুকরকে দেখা যাচ্ছিল না মঞ্চের উপর। তার গলাও আর শোনা যাচ্ছিল না। তবুও অনেকে বিশ্বাস করেছিলো, এর পরেও আর‌ও অনেক অনেক খেলা দেখিয়ে তাদের ক্ষুধা ভুলিয়ে রাখবার জন্য জাদুকর কাছেপিঠেই কোথাও আছে। তাই তারা গলা ফাটিয়ে চিৎকার করতে লাগলো জাদুর দেবীর নাম নিয়ে। তবুও যখন জাদুকর ফিরে এলো না, তখন অবসন্ন , ক্লান্ত শরীর নিয়ে বাড়ির দিকে র‌ওনা হয়েছিলো মানুষগুলি‌।

বাড়ি ফিরে এসে তারা অবাক হয়েছিলো আর নিজেদের দুর্ভাগ্যকে দোষারোপ করেছিলো, কারণ তাদের কার‌ও ঘরেই আর কোনো খাবার ছিলো না। প্রতিটি সিন্দুকের দরজা এক অজানা কারণে ভেঙে পড়েছিলো।


ফেসবুক অ্যাকাউন্ট দিয়ে মন্তব্য করুন


অনন‍্য পাঠক

জন্ম: বাঁকুড়া জেলার ইন্দপুর থানার রতনপুর গ্রাম। জন্ম: নভেম্বর ১৯৮১। শিক্ষা: এম.এ.(বাংলা) বি.এড.। পেশা: শিক্ষকতা। লেখা ছাড়া অন্য আগ্রহ: পড়া, দাবা খেলা। লেখালিখি: কবিতা ও গল্প, নির্দিষ্ট ধারা নেই। পত্রিকায় প্রকাশিত: দুচারটি। 'কবিতাই জীবন' ব‌ই: একক ব‌ই নেই। 'অক্ষরের আলোছায়া' সংকলনে ১২টি কবিতা প্রকাশিত। আজকের যোধন প্রকাশনা।

0 Comments

মন্তব্য করুন

Avatar placeholder

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।