অভ্যেস
চারটে কুকুর সার্কল প্যাটার্নে শুয়ে আছে তালার চাবির মত জায়গা ছেড়ে রেখে।ক্রমশঃ নেমে আসা শীত আর রাত্তিরের প্রকোপে ছেড়ে রাখা জায়গায় শুয়ে আছে সুরাতিয়া।গোটা জীবন ঢেকে রয়েছে নোঙরা কম্বলে।
নিস্তব্ধ স্টেশনে লাস্ট ট্রেন চলে গেছে অনেকক্ষণ।সুফল পানদোকানের ঝাঁপ ফেলে,আগুন দেখিয়ে আকাশের দিকে তাকায়।মাঝরাত পেরিয়ে গেছে।হাতে ধরা পাঁউরুটিটা নিয়ে প্ল্যাটফর্মের শেষমাথায় ছবিটার কাছে এসে দাঁড়ায়।পায়ের শব্দে মুখ তুলে তাকায় সুরাতিয়া।কম্বলের ভেতর থেকে রোবোটের মত হাত বাড়িয়ে রুটিটা ছিনিয়ে নেয়।একটা কুকুর ডেকে ওঠে।এটুকুই যা।স্টেশন চত্বর নিস্তব্ধ হয়ে যায়।
শুনসান স্টেশন রোড দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে রোজই দৃশ্যটা ভাবতে ভাবতে যায়।একই সঙ্গে এটাও ভাবে,কেন দেয়? সবাই যখন পাশ কাটিয়ে চলে যায় তখন সুফলই বা যেতে পারে না কেন!
মমত্ববোধ নাকি অস্বস্তি? সুফল অনেকগুলো বছরেও বুঝে উঠতে পারেনি!
দেশের বাড়িতে সংসার।এইখানে ঘর বলতে এক চিলতে।সুফল তালা খুলে আলো জ্বালায়।এলোমেলো বিছানা,টাঙানো দড়িতে ঝুলছে গামছা,লুঙ্গি,জামাকাপড়।ঘরের কোণে কয়েকটা নিত্যবাসন উল্টে পড়ে আছে।খাদ্যহীন।এই মাঝরাত্তিরে আর কারো রান্না করতে ইচ্ছে করে? ক্লান্তি আর নিজের ওপর রাগে ধপ করে বিছানার ওপর বসে পড়ে।দূরে হাইওয়ে দিয়ে ভারী ট্রাক চলে যাবার শব্দ।ঢকঢক করে জল খায়।ক্ষিদের চোটে পাঁউরুটিটার কথা মনে হয়।একবার দোকানে গেলে হয়।নিজেরই তো।রুটি, কেক,বিস্কুট প্রচুর খাবার সেখানে! অস্থির লাগে।দেশের বাড়ির কথা,মা’র কথা,লতিকার কথা সব একসঙ্গে চোখের ওপর ভাসতে থাকে।স্টেশনের পাগলীটার কথা ভাবে।কেমন আরামে আছে দেখ! সারাটা দিন শুয়ে বসে থাকে,তবু ঠিক দিনের শেষ খাবারটা বেড়ে দেয় কেউ! বেড়ে না দিলে সুফলও যে খেতে পারেনা,খাবার ইচ্ছেই হয়না তার। বাচ্চাবয়সের সেই অভ্যেস তাকে এখনো উপোসী রাখে!
রাত অনেক হল।আরো কিছুটা জল খেয়ে,আলো নিভিয়ে ক্লান্তি ক্ষিদের যুগলবন্দীতে সুফল সকালের জন্যে ঘুমোচ্ছে!
0 Comments