নরনারী কথা ( চতুর্থ পর্ব )
“আগুন থেকে জানি এসব, বাতাস থেকে জানি
দুজন অসাবধানী আমরা, দুজন অসাবধানী! “
ল্যাবে কাজ করতে করতে চোখটার বারোটা বাজছিল। চশমার কাঁচ ভারী হচ্ছিল পাল্লা দিয়ে। মার সাথেও আজকাল কথা কম হয়। ফিরতে ফিরতে প্রায়ই সন্ধ্যে পেড়িয়ে যায়। খুব ক্লান্ত লাগে। শেষ সেমেস্টারের পড়াশোনা শুরু হয়ে গেল জোরকদমে। আজকাল বড় চিন্তা হয়, কি করব! রিসার্চ করার চেষ্টা করবো না চাকরি খুঁজবো! চাকরি পাওয়াটা আজকাল কঠিন হয়ে পড়ছে আর মায়ের চুলেও আজকাল বেশ কিছু রুপোলী রেখা।
রাজর্ষির সাথে যোগাযোগ কিছুটা কমে এসেছে। মেসেজ করি কম। ফোন করলেও দশ মিনিটেই রেখে দি। তাতে অবশ্য ওর বিশেষ কিছু যায় আসে বলে মনে হয় না আমার। বুঝতে পারি রাজর্ষির কাছে হয়তো আমি বিশেষ কেউ কখনো ছিলামই না। হয়তো… আমি আর বেশী ভাবতেও চাইছিলাম না। কৃশানু আমাকে সন্দিগ্ধ বা অবিশ্বাসী করে দিয়ে গিয়েছিল।
এই সেমের শেষে একটা সেমিনার দিতে হয় সবাইকেই। তার জন্য রিভিউ ওয়ার্কের পেপার তৈরি করতে আমার বেশ কিছু বই আর জার্নাল এর প্রয়োজন ছিল। মার্চ মাসের মাঝামাঝি নাগাদ একদিন আমি কলকাতা গেলাম। কলেজস্ট্রিটে ঢুঁ মারা ছাড়া গতি নেই। ট্রেনে আছি। ফোনটা বাজছিল। দেখলাম অচেনা নাম্বার! ফোনটা অন করে কানে দিতেই
— কি খবর!পাত্তায় নেই যে মহারানী!
— কে!
— হা হা হা!! চিনতেও পারলে না!
এই হাসি আর না চিনে যাব কোথায়?? অবাক হয়ে বললাম,
— রাজর্ষি! এটা কার নাম্বার? এ তো লোকাল সিম নাম্বার মনে হচ্ছে!
— হুম। পরশু ফিরেছি। তোমায় বলা হয়নি।
মনে মনে ভাবলাম কোনটাই বা বলতে পারো তুমি! মুখে বললাম
— ও!
— কোথায় আছো বলতো? এত হট্টগোল!
— ট্রেনে।
— কোথায় যাবে?
— হাওড়া। কাজ আছে আমার বইপাড়ায়।
— কটায় টাইম? I will pick you up.
কি বলছে রে বাবা! আরে তাই তো, ওদের তো হাজরার কাছেই ফ্ল্যাট শুনেছিলাম। ওদিক থেকে ফের তাগাদা এল
— কি হল? টাইমটা টেক্সট করো। আমি প্ল্যাটফর্মের বাইরে অপেক্ষা করবো।
বলেই ফোনটা ওদিক থেকে ডিসকানেক্ট হয়ে গেল! যাঃ বাবা। কি করবো এবার? নিজের দিকে তাকাতেই আরও মুষড়ে পড়লাম। একটা যথেষ্ট পুরোনো গোলাপী রঙের ওপর সাদা সুতোর কাজ করা সালোয়ার কামিজ। চুলগুলো কোনোরকম করে বাঁধা আর কানে ছোট্ট দুটো মুক্তোর দুল।তার সাথে কালো ফ্রেমের একটা বিচ্ছিরি চশমা আর গালে তিনটে ব্রণ। হে ভগবান এরমভাবে দেখা করতে যেতে হবে আমাকে! বিরক্ত মুখে ট্রেনের টাইমটা টেক্সট করে দিলাম। কেন জানি না মুখ ফুটে রাজর্ষিকে দেখা করতে বারণ করতে পারলাম না।
প্ল্যাটফর্মের বাইরে এসে এদিক ওদিক তাকাচ্ছি। কাউকেই তো দেখছি না! আসবে না নাকি? তাহলে একদিক থেকে ভালোই হয়। সাতপাঁচ ভাবছি আমার কাঁধে আলতো চাপড়।ঘুরে তাকাতেই… এই হাসি ফোনে অনেকবার শুনেছি। কাছ থেকে দেখলাম প্রথমবারের মতো। একটু বড়ো বড়ো দাঁতে এমন একটা সরল হাসি আমি আগে কারোর দেখিনি। হাসলে ওর চোখের কোণে ছোটো ছোটো তিনটে হালকা ভাঁজ পড়ে লক্ষ্য করলাম।
— এত ভাবছিলে? সামনেই তো ছিলাম, দেখতে পেলে না?
চুপ করে রইলাম। কি আর বলব! আমি এরম পাগলীর মতো ঝড়ো কাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছি আর এই লোকটা সকাল সকাল দিব্যি মাঞ্জা দিয়ে চলে এসেছে। ছেঁড়া জিনস, কালচে লাল আর কালোর ইন্দোওয়েস্টার্ন চেকের শার্ট , রোদচশমা। মাথায় যথারীতি পনিটেল।এরম কোনো পরিপূর্ণ পুরুষ আগে কখনো আমার সাথে দেখা করতে আসেনি। আমি হটাৎ বুঝতে পারছিলাম রাজর্ষি ঠিক কৃশানু নয়! রোজকার দেখা কলেজের বন্ধু নয়।অনেক বেশী অন্যরকম। বড্ড বেশী ঝকঝকে ,পুরুষালি। আমার বুকের ভিতরটা একটু গুরগুর করছিল!
— কি হলো টা কি? আমার সাথে যেতে আপত্তি? আমাকে দেখে কি নারীপাচারকারী মনে হচ্ছে!
আমি হাতের রুমালটা দিয়ে আলতো করে মুখটা মুছে নিয়ে বললাম
— নাহ!চলো।
একটু দুরে একটা বেশ বড় সাদা গাড়ি পার্ক করা ছিল। দরজাটা খুলে বললো
— বসুন ম্যাম।
আমি ইতস্ততঃ করে গাড়িতে উঠে সন্তর্পণে বসলাম। খুব সংকোচ হচ্ছিল আমার! গাড়িটা চলতে শুরু করলে আমি রাজর্ষির মেল পারফিউমের গন্ধটা পাচ্ছিলাম। আমি গন্ধটা বুকের মধ্যে টেনে নিচ্ছিলাম চুপিচুপি। হঠাৎ বললো,
— এত চুপ যে? এমনিতে তো ঝরঝর করে কথা বলতেই থাকো। আমি কি তোমায় আমার সাথে যেতে জোর করছি?
ডান হাতে ড্রাইভ করতে করতে বামহাতটা আলতো করে রাখলো আমার হাতে।
আমি হাতটা সরিয়ে নিয়ে বললাম,
— না!তা ঠিক না! কখনো এভাবে মানে…
কথাটা ঠিক শেষ করতে পারলাম না। ও বোধহয় আমার অস্বস্তিটা বুঝতে পারছিল। একটা ঠাণ্ডা ফ্রুট জুসের টেট্রাপ্যাক এগিয়ে দিয়ে বললো,
— উল্টোপাল্টা না ভেবে এটা খাও!
সত্যি জুসটা খেতে খেতে আমার যথেষ্ট ভালো লাগছিল।
বই খুঁজে কিনতে কিনতে প্রায় দুঘন্টা সময় লেগে গেলো। রোদ তখন বেশ চড়া হয়ে উঠেছে। গরমও লাগছে বেশ। ছেলেটার ধৈর্য্য আছে। এতটুকু বিরক্তি নেই। ওর হাতে ছ’সাতটা বইয়ের প্যাকেট। আমার হাতে একটাই সাংঘাতিক মোটা এমব্রায়োলজির বই।গাড়ির ব্যাকসিটে নিজের হাতের বইগুলো রেখে আমার হাত থেকে বইটা নিয়ে একটু বইটার দিকে তাকিয়ে থেকে বললো
— এগুলো তুমি সত্যি পড়? আমায় পড়তে বললে তো আমার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়ে যাবে।
ওই কথার উত্তর না দিয়ে বললাম,
— বেশী বাজেনি।সবে বারোটা! মনে হচ্ছে দুটোর ট্রেনটা পেয়ে যাব! খুব খুশি হলাম তোমার সাথে দেখা হয়ে। এবার বরং আমি আসি রাজর্ষি।
রাজর্ষি অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,
— তুমি পাগল? কিচ্ছু খেলে না রোদে রোদে ঘুরে রাজ্যের বই কিনলে, এবার এই অবস্থায় তোমায় ছেড়ে দেব?
— কিন্তু…
— বাজে বোকো না। গাড়িতে বসো। আমি নিজে তোমায় লাঞ্চ বানিয়ে খাওয়াবো। গল্প করবো। তারপর বিকেলের ট্রেনে ফিরবে। আর একটাও কোনো তর্ক নয়। কোনো প্রশ্ন নয়।
আমি বেশী কথা না বাড়িয়ে গাড়িতে বসলাম। এর সাথে তর্ক করে লাভও নেই।
রাজর্ষিদের ফ্ল্যাটটা সাত তলায়। বেশ বড় আর সুন্দর করে গোছানো। তবে খুব ফাঁকা।কাউকে কোথাও দেখলাম না। জানতে চাইলাম
— বাড়িতে কেউ নেই?
ও বললো;
— আর কে থাকবে? বাবা একটু ব্যবসার কাজে দিল্লী গেছেন।
আমার এবার সত্যি ভয় লাগলো। এই রে কোনো বদ মতলব আছে মনে হয়! চাপা উদ্বেগে ঘামতে শুরু করলাম।ও আমার দিকে একটু তাকিয়ে থেকে বললো
— কি হলো আবার? মুখ শুকনো করে দাঁড়িয়ে আছ কেন? ফ্রেস হয়ে নাও একটু। আমি রান্নার জোগাড় করি। বরং বাড়িতে একটা ফোন করে জানিয়ে দাও ফিরতে দেরি হবে একটু। কাকিমা চিন্তা করবেন না হলে।
অগত্যা মা কে ফোন করে বললাম বন্ধুদের সাথে সিনেমা দেখতে যাওয়ার প্ল্যান হয়েছে।সন্ধ্যে হবে ফিরতে। খুব খারাপ লাগছিলো মা কে মিথ্যে বলতে। এর আগে মা কে কিছু লুকোই নি। দরকারও হয়নি।
মুখে চোখে জল দিয়ে বেশ ভালো লাগছিলো। ডাইনিং আর ওপেন কিচেনটা অ্যাটাচ। আমি একটুকরো ব্ল্যাক ফরেস্ট কেক খাচ্ছিলাম। একটু নিশ্চিন্ত লাগছিলো যে রাজর্ষি আমার দশ হাতের মধ্যে নেই। ও নিজের মত ক্ষিপ্রহস্তে এটা সেটা কাটছিলো, মেশাচ্ছিল, পরখ করে দেখে নিচ্ছিল আর ছাড়া ছাড়া গল্প করছিল। ফ্ল্যাটটা বেশ ছায়াছায়া ঠান্ডা।একটা নিশ্চিন্ত আলসেমি জড়িয়ে নিচ্ছিল আমায়।
বেশ খানিক পর ও কিচেন থেকে বেড়িয়ে বলল,
— অলমোস্ট ডান। আমি একটা শাওয়ার নিয়ে আসি। তোমায় একটা অ্যালবাম দি। দেখো।কেমন? দিয়ে একসাথে লান্চ করবো।
একটা ফ্যামিলি অ্যালবাম ছিলো ওটা। বেশির ভাগ ছবি ছোট্ট রাজর্ষির। নেড়া মাথা ,বড় বড় কান,শুধু হাসিটা অবিকল এখনকার মতো। ওর মা কেও দেখলাম। বেশ সুন্দরী ছিলেন। এক ভদ্রলোকের ছবির সাথে রাজর্ষির এখনকার চেহারার বেশ মিল।বুঝলাম ওর বাবা হবেন নিশ্চয়।
রাজর্ষি হাঁটুর নীচ পর্যন্ত অনেকগুলো পকেটওয়ালা একটা ছাই রং এর প্যান্ট আর সাদা নরম একটা শার্ট পড়ে ঘরে এলো। চুল থেকে তখনো একটু জল ঝরছে।শার্টের দুটো খোলা বোতাম থেকে দেখা যাচ্ছে বুকের হালকা পুরুষালি রোম। আমার আবার কেমন ভয় ভয় করে উঠল।
ও কিন্তু খুব স্বাভাবিক ভাবেই বললো,
— আসুন মহারানী! দেখা যাক এত অল্প সময়ে দাসানুদাস আপনাকে কি পরিষেবা দিতে পারে।
সত্যি বলতে আমার ভয়ানক খিদেও পেয়েছিল। রাজর্ষি নিজের হাতে একটা অদ্ভুত পদ বেড়ে খেতে দিল আমায়। না পোলাও না বিরিয়ানি! কি অসামান্য খেতে! প্রচুর পেস্তা, কেশর, বেরী, শুকনো গোলাপের পাপড়ি, হালকা রোস্ট করা চিকেন আর বাসমতী চাল। অবাক হয়ে বললাম
— এটা কি?
রাজর্ষি বিখ্যাত হাসিটা হেসে বললো
— চিকেন বেরী পোলাও। খাস ইরানের ডিস। ভালো না?
ভালো মানে! আমি মনে মনে ভাবলাম এটা খেতে সারাজীবন তোমার সাথে দেখা করতে আসতে পারি। একটা মাছের কাবাবও ছিল। সেটা কেমন খেতে বলে আর পাঠকদের কমপ্লেক্স দিতে চাই না। আমি মন দিয়ে খাচ্ছিলাম।
রাজর্ষি হঠাৎ বললো,
— আমার মাসির মেয়ে ইরার ছোটোবেলাতে একটা গোলমতো, কোঁকড়ানো চুলের , গোলাপী টুপি পরা পুতুল ছিল। সেটা জ্যান্ত হলে কেমন হতো আজ বুঝতে পারছি!
আমি বড়ো বড়ো চোখে ওর দিকে তাকাতে গিয়ে হেসে ফেললাম খিলখিল করে। কৃশানু আমার মনে এমন একটা ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছিল সবসময় মনে হতো কেউ বুঝি আবার কিছু বলে অপমান করবে। এমন নির্ভেজাল একটা সহজ কথা শুনে মনটা খুব হালকা হয়ে গেল। রাজর্ষিকে সেই মুহূর্তে খুব নিজের মনে হচ্ছিল।
খেয়ে দেয়ে একটা বালিশ কোলে নিয়ে রাজর্ষির ঘরে ল্যাপটপে সিনেমা দেখছিলাম। পাইরেটস অফ দ্য ক্যারিবিয়ান সিরিজের লাস্ট ফিল্মটা। ওর ঘরের দেওয়ালের রংটা খুব নরম। জানলার পর্দাগুলো বেশ ভারী আর ঘন নীল।
ও উঠে গিয়ে আমাকে একটা সফট ড্রিঙ্কের ক্যান এনে দিয়ে নিজেও একটা ক্যান ওপেন করলো। আমি বললাম — তোমার ক্যানটা কিসের?
ও একটু লাজুক হেসে বললো,
— বিয়ার ম্যাম। একটু খাই প্লিজ! বড্ড গরম আজ।
আমার এই রে ভাবটা আবার ফিরে এলো। মুখে কিছু না বলে সিনেমাটাতে মন দিলাম। মনে মনে ভাবলাম এই তো এতক্ষণ একসাথে আছি। একবারের জন্য ও তো কাছে আসারও চেষ্টা করেনি। কি সব যা তা ভাবছি!
ফিল্মটা দেখতে দেখতে আমার কেমন ঘুম ঘুম আসছিলো। বসন্তের অলস দুপুর। হঠাৎই বুঝলাম রাজর্ষি আলতো করে আমার চোখ থেকে চশমাটা খুলে নিলো। আমি অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে দেখলাম স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার চোখের দিকে যেন ভিতর ওবধি পড়ে নেবে ও আমার। আমি যেন অজগরের চোখের সামনে পড়ে গেছি! চোখের পাতাও আর পড়ছে না আমার। আমি শুধু অসহায়ের মতো অনুভব করলাম দুটো হালকা ভিজে গরম ঠোঁট আমার ঠোঁট দুটো অধিকার করে নিল।চোখ দুটো বন্ধ হয়ে গেল আমার।শরীরের যাবতীয় রক্ত জালিকা হাড় সব যেন তুমুল তাপে গলে গলে যাচ্ছিল। রাজর্ষি একবার নরম করে ছুঁচ্ছে আমায় পরক্ষণেই বিধ্বংসী হয়ে উঠছে।আমি ওকেই আঁকড়ে ধরে ওর থেকে ভেসে উঠতে চাইছিলাম।ওথচ আরও আরও ডুবে যাচ্ছিলাম ওর শক্ত দুটো হাতের মধ্যে। কোথাও কোনো কথা নেই।আমার মনে হচ্ছিল আমি বোধহয় এ জন্মের মতো বোবা হয়ে গেছি।
আমার যখন ঠিকঠাক সম্বিত ফিরে এলো , যাবতীয শারীরিক অস্বস্তি সামলে স্নান করে পোশাক পড়ে নিলাম। একফোঁটাও কান্না আসছিল না। ভিতরটা মরুভূমির মতো লাগছিল।রাজর্ষি বার বার আমার হাত দুটো ধরে কিছু বলতে চাইছিলো। আমার কানে কিছু যাচ্ছিল না। আর ওরও কথা বলতে কষ্ট হচ্ছিল। উত্তেজিত হলে ওর কথা আটকে যায় আমি জানতাম।
চুপচাপ ড্রাইভ করে আমাকে প্ল্যাটফর্মে ছাড়তে এলো। প্রয়োজনীয় এমার্জেন্সি মেডিসিন আমাকে আগেই কিনে দিয়েছিল। গাড়ি থেকে নেমে যাওয়ার আগে ও আলতো করে জড়িয়ে ধরলো আমায়। আমি শক্ত হয়ে ছিলাম এতক্ষণ। ইঠাৎই আমার চোখের কোণ দুটো জ্বালা করে উঠলো। ট্রেন ছাড়ার আগেও আমার আঙুলগুলো জড়িয়ে ছিল রাজর্ষি। মুখে কিছু দুজনেই বলতে পারিনি।
টেন যখন ছেড়ে দিল আমার ঝেঁপে কান্না পাচ্ছিলো। সদ্য কুমারীত্ব ভাঙা শরীর আর ভাঙা মন নিয়ে সেদিন কিভাবে বাড়ি ফিরেছিলাম নিজেও জানি না।
মা হয়তো কিছু বুঝেছিল। প্রশ্ন করেনি। রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে একবার দাঁড়ালাম আয়নার সামনে। মুখ দেখে যদিও কিছু বোঝা সম্ভব না, ভিতরে ভিতরে আমার ঝড় বয়ে যাচ্ছিল। কাঁঁধের কিছুটা নীচে লালচে একটা দাগ দেখে শিউরে উঠে আলোটা নিভিয়ে দিলাম। আমি জানি খুঁজলে ওমন দাগ আমার শরীরে আরও পাওয়া যাবে…
রাজর্ষির অসংখ্য ফোন আর মেসেজ এসেছিল। কোনোটারই কোনো জবাব দিই নি!এতক্ষণে ছোট্ট একটা মেসেজ পাঠালাম
“reached! “
সমস্ত মেসেজ না পড়ে ডিলিট করলাম। ফেসবুক,হোয়াটস অ্যাপ ,যেখানে যেখানে সম্ভব সব জায়গায় ব্লক করলাম যাতে কোনোভাবেই যোগাযোগ করতে না পারে। অন্ধকার বি়ছানা আর মাথার বালিশটা শেষ পর্যন্ত আমার কান্নার সাক্ষী থেকে গেল। দ্বিতীয়বারের মতো আমার মনে হলো আমি ফের বিশ্বাস করে সাংঘাতিক ভাবে ঠকে গেলাম। নিজের ওপর রাগ করে আমার মরে যেতে ইচ্ছা করছিল….
0 Comments