মিশরে আমিও পুরোহিত নিব্বান

ফাল্গুনী চক্রবর্তী on

mishore_amio_purohit_nibban

আমি ড্রয়িং রুমে বসে আমার শখের কেনা অ্যান্টিক পিস্ গুলো দেখছিলাম। “Khudhha iilaa misr” কথাটা কানে যেতেই তাকালাম টিভি ক্যাবিনেটের দিকে।ওখানে সাজানো আছে আমার আরো দুস্পাপ্য জিনিস গুলো। মনে হলো ওদিক থেকে কথাটা এসেছে। আমার সদ্য অ্যান্টিক শপ থেকে কেনা আনুবিশ অর্থাৎ মিশরের শেয়াল দেবতার মূর্তিটাই যেন কথাটা বলল বলে আমার মনে হলো।

— কি দেখছিস এত মনোযোগ দিয়ে?
কথাটা কানে যেতেই চমকে তাকিয়ে দেখি মা দাঁড়িয়ে আছেন পেছনে।
—- জানো মা মনে হল মূর্তিটা আমাকে কি যেন বলল।আরবী ভাষায়।
— কি সারাদিন পড়ে আছিস এই মূর্তি গুলোর পেছনে।তোর শখেরও বলিহারি। আর তুই আররি ভাষা জানলি কি করে? কি যে করিস বাড়ি এলেই তো দেখি অ্যান্টিক শপগুলোতে গিয়ে হানা দিস।
এই বয়সের মেয়েরা একটু শাড়ি গয়না দেখবে তা না সারাদিন উনি আছেন নিজের জগতে। কে আনতে বলে এগুলো তোকে? যত সব অন্যের ব্যবহার করা জিনিস।

—- তুমি কিছু ভয় করো না তো। জানোই তো মিশর আমাকে ছোটো থেকে টানে। ইতিহাস নিয়ে পড়াও আমার সেই সুবাদে। আজকে যখন হঠাৎই পেয়ে গেলাম এত সুন্দর একটা মূর্তি আর হাতছাড়া করতে ইচ্ছে করে বলো?
আমি দিল্লীতে “ইউনিভার্সিটি অফ আরকিওলজি” কলেজে আরকিওলজি নিয়ে পড়াশুনো করছি। এবার আমার লাষ্ট ইয়ার। বাড়িতে এসেছি শীতের ছুটি কাটাতে।

“khudhha iilaa misr” আবার কথাটা কানে আসল। আমি আরবি ভাষা নেটের একটা অ্যাপ থেকে বর্তমানে শিখছি। প্রথমবার ভালো করে কথাটা বুঝতে না পারলেও এবার বুঝতে পেরছি ” আমি মিশরে যেতে চাই”। বলছে কেউ।
— মা তুমি কিছু শুনতে পারলে? আমার মনে হল কেউ কিছু যেন বলল।

—- কি শুনব! তোকে বলছে চলো তোমার সাথে তোমার মায়ের মাথাটাও পাগল করি। যতসব পাগলের করবার। যা এখান থেকে। আমি ঘর পরিষ্কার করবো।

আমি পাশের ঘরে এসে বসলেও মাথায় সেই একই জিনিস ঘুরপাক খাচ্ছিলো। মিশরে যেতে চাইছে কে? নতুন কেনা ছোটো আনুবিস। যার মাথাটা শেয়ালের হলেও শরীরটা মানুষের।

রাতে স্বপ্নে দেখলাম আমি কোনো মরুদ্যানে দাঁড়িয়ে আছি। অনেক নীচে একটা সুরঙ্গ চলে গেছে।আমি কথা বলছি আমার সাথে আরো লোকজন আছে। ব্যস্ত লোকজন ছুটে চলছে এদিকে ওদিকে। সব যেন আবছা কেমন ধোঁয়াশার মতো। কারো মুখ স্পষ্ট নয়।

ঘুম ভেঙে গেলে লাইট জ্বালিয়ে উঠে ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়াই। কি দেখলাম কেন দেখলাম বুঝতে পারছি না। হয়তো সারাদিন এই আনুবিসকে নিয়ে ভেবেছি তাই এই সব চিন্তা ভাবনা মনে ঘুরপাক খাচ্ছে। এসে শুয়ে পড়লাম আবার। লাইটটা অফ করতে যাবো হঠাৎ টেবিলের দিকে তাকাতে দেখলাম আনুবিসের মূর্তি টা আমার টেবিলে রাখা। কিন্তু আমার স্পষ্ট মনে আছে আমি ওটা শোবার আগে ড্রয়িং রুমে দেখেছিলাম। তবে কি মা এখানে রেখেছে!

ছোটো আট নয় ইঞ্চির মতো হলেও মূর্তিটা খুব সুন্দর।আনুবিস মিশরের মৃত্যুর দেবতা।
সদ্য মৃত ব্যক্তিকে মত্যলোক থেকে মৃতদের দেশ পাতালপুরীতে নিয়ে যাবার পথে নিরাপত্তা দিতেন আনুবিস। মাথাটা শেয়ালের হলেও দেহটা মানুষের। মিশরকে নিয়ে নানা কাকতালীয় কাহিনী থাকলেও আমি সেগুলোতে বিশ্বাসী নই।
যাক সে সব কথা। আমি কোনো রকমে সে রাতটা না ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিলাম।

পরদিন সকালে দেখলাম একটা মেল এসেছে প্রোফেসর ইব্রাহিম আল্ রশিদ এর কাছ থেকে। আমি তো দেখে অবাক এত বড় একজন প্রোফেসার আমাকে মেল করেছে। ইনি কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রোফেসর। আমাদের দিল্লী ইউনিভার্সিটিতে এসেছিলেন একজন অতিথি লেকচারার হিসেবে। সে সময় অনেক কথা হয় স্যারের সাথে। আমার মিশর সম্পর্কে আগ্রহ জেনে মাঝে মধ্যে মিশরের পিরামিড নিয়ে আলোচনাও করেছেন। ভীষণ ভালো মিশতে পারেন স্যার। সেই সুবাদেই মেল দেওয়া নেওয়া হয়। ইব্রাহিম স্যারের মা আমেরিকান হলেও বাবা মিশরীয়।
মেলে স্যার লিখেছেন তোমাকে ও লিওনেল কে কায়রো আসার টিকিট পাঠালাম। খুব ইন্টারেস্টিং একটা ব্যাপার ঘটতে চলেছে। চলে আসো পরে কথা হবে।
আমি তো হাতে স্বর্গ পেলাম যেন। লিওনেল আমার ইটালিয়ান বন্ধু। আমরা দিল্লীতে এক সাথে পড়েছি। আমি জানি ও এখন দিল্লীতে আছে। ফোন করলাম ওকে। লিওনেল ও পেয়েছে মেলটা দুজনে ঠিক করে নিলাম যাবো মিশরে। আমার ছোটোবেলার স্বপ্ন পুরন হতে চলেছে। ছোটোবেলা থেকে মিশরের খুফুর পিরামিড, তুতেনখামের পিরামিড এসবের নানা রহস্যময় গল্প শুনতে শুনতে একটা ভালো লাগা জন্মে গেছে মিশর নিয়ে। আর সাথে কৌতুহলও।এখন যখন সুযোগ এসেছে যেতে তো হবেই। মা আমাকে একা যেতে দিতে চাইবে না আমি জানি। লিওনেল কে মা ভালো করেই চেনে, দিল্লীতে যখনই মা গেছে লিওনেলের সাথে কথা হয়েছে। ভরসা রাখে ওর ওপর। কাজেই আর আপত্তি করল না।

শনিবার বিকেলে শিলিগুড়ি থেকে দিল্লী রওনা হলাম। দেড় ঘন্টার মধ্যে পৌঁছে গেলাম। পরদিন রাতে আমাদের দিল্লীর ইন্দিরা গান্ধী ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে থেকে আমাদের ফ্লাইট।

কয়রোতে এসে অসুবিধায় পড়তে হয় নি। স্যারের লোক ছিল এয়ারপোর্টে। আমদের নামে হোটেল কায়রো সিটি ইন্টারন্যাশনালের পাঁচ তলায় দুটো সিঙ্গেল রুম বুক করা ছিল।এয়ারপোর্টে থেকে হোটেলে আসার রাস্তা খুব সুন্দর বেশ প্রশস্থ। রাতের কায়রো শহর যেন আলোর রোশনাইএ সেজে উঠেছে।

হোটেলের কাঁচের জানালার বাইরে দুরে বয়ে চলছে পৃথিবীর দীর্ঘতম নদী নীল নদ। এখানে নদীর এপার ওপার দেখা যায় না। মধ্যরাতেও অসংখ্য বোট, স্টিমার, লঞ্চ এর আলোয় অলোকিত হয়ে মায়াবী রুপ ধারন করেছে নীলনদ।

রাতে ঘুমের মধ্যে মরুদ্যানটা যেন আরো স্পষ্ট হয়ে ওঠে। আর একটা গড় গড় মতো আওয়াজ পাই। মনে হয় কে যেন আমার খুব কাছে বসে গড় গড় করে হুক্কা টানছে। ধড়ফড় করে উঠে বসি। দেখি আবারও আমার ছোটো আনুবিস আমার সামনের টেবিলে দাঁড়িয়ে আছে। অথচ আমার স্পষ্ট মনে আছে এটা আমার ব্যাগে ঢোকানো ছিল। জানি কেন যেন মন বলছিল আনুবিসের আমার সাথে যাওয়া উচিত।
পরদিন সকাল সকাল স্যার চলে আসেন আমাদের সাথে দেখা করতে। আমাদের সিনাই মরুদ্যানে নিয়ে যাবেন জানান। সেখানেই কাজ আছে। তবে আজকে গিজা ঘুরে আসতে বলেন। স্যারকে আমি ছোটো আনুবিসটা দেখাই আর সংক্ষেপে বলি ঘটনা গুলো। স্যার মূর্তি টা হাতে নিয়েই বলেন ঋষিকা এটা তো প্রায় চারপাঁচ হাজার বছর আগের মূর্তি। তোমার কাছে কি করে গেল এটা। এটা তো মিউজিয়ামে থাকার কথা। আমার মনটা খারাপ হয়ে গেল। এই কদিনে এতো ছোটো ঘটনা গুলো আনুবিসকে আমার আরো কাছের একজন মনে হচ্ছে। বললাম আপনি সঠিক তথ্য দিতে পারলে কায়রো সরকারের হাতে তুলে দেবো না হয়।
—এত বছর ধরে এই পিরামিড, মমি এদের সাথে যুক্ত আছি তাছাড়া তোমরা তো জানো আমার পূর্বপুরুষ মিশরীয়ান। এটা তো আমাদের এখানে যে কোনো সাধারণ লোক বলতে পারবে এটা বহুবছর আগের মূর্তি। আমি একটু বেশি বলতে পারি এই যে, মূর্তির নীচে হায়েরোগ্লাফিক্স ভাষায় মালিকের নাম লেখা আছে দেখো। “পুরোহিত নিব্বান।” তখনকার দিনে পাথরের উপর মালিকানা সত্ব লিখে রাখার চল ছিল। পরে অবশ্য সেটা উঠে যায়।
তোমরা আজকে গিজাটা ঘুরে আসো। কাল তোমাদের সিনাই নিয়ে যাবার জন্য আব্বাসকে পাঠিয়ে দেবো।

কায়রো শহর থেকে মাত্র আট মাইল দুরে নীলনদের পশ্চিম পারে পৃথিবী বিখ্যাত গিজা অবস্থিত।
ছোটো বড় মাস্তাবা বা পিরামিড ছাড়াও এখানে আছে ফারাও খুফু, খাফের আর মেনকাউরের তিন তিনটি সুউচ্চ পিরামিড। এছাড়াও আছে স্ফিংসের মূর্তি। যার দেহ সিংহের আর মাথা মানুষের। এটি দুশো চল্লিশ ফুট লম্বা ও ছেষট্টি ফুট উঁচু।

এত কিছুর মধ্যে আমার মন পড়ে আছে সিনাই মরুদ্যানে। স্যার এখনও সঠিকভাবে বললেন না। কি আছে ঐ মরুদ্যানে।
আনুবিসের মূর্তিটা এত বছরের পুরোনো শুনে মনটা কেমন হয়ে গেল। কেন এল আমার কাছে এই মূর্তি। তবে কি সেই হাজার হাজার বছর আগে আনুবিসের কোনো কাজ বাকি রয়ে গেছে! নাকি আমার মৃত্যুর সমন এসে গেল। রাতে নানা চিন্তা মাথাটা যেন জট পাকিয়ে যাচ্ছে। মায়ের কথা মাথায় এলো আমি আবারও দেখতে পারবো তো আমার মাকে। আবার নিজের মনকেই বুঝ দিই দেবতা কি কখনো কারো খারাপ করতে পারে! আমরা তো বিপদেই তাকে পাশে পেয়ে থাকি। মৃত্যুর দেবতা হলেও তিনি তো মৃত ব্যক্তিকে তার সঠিক জায়গায় পৌঁছে দেন। এ সব ভাবতে ভাবতেই কখন যে ঘুমিয়ে পড়ি বুঝতে পারি না। রাতে ঘুমের মধ্যে সেই গড়গড় আওয়াজটা যেন আরো স্পষ্ট হয়ে আসে। একটা অস্পষ্ট ঘর। ঘরের প্রবেশদ্বারে মনে হলো বাবা দাঁড়িয়ে আছেন। কোনো ভয় নেই খুকু তুই চলে আয়। অনেকদিন পর বাবাকে দেখে ভালো লাগলো। ঘরের ভেতরে আমি ঢুকলাম। একটা মৃতদেহকে মমিতে পরিনত করার কাজ চলছে। খুব জোরে জোরে কেউ মন্ত্র উচ্চারণ করছে। দুরে আনুবিস দাঁড়িয়ে আছে। হায়ারোগ্লিফিক্সে লেখা দেয়ালের গায়ে। ঘুম ভেঙে গেল। আনুবিস এবারে আমার মাথার পাশে। ভয় পেয়ে গেলাম। আর এই “পুরোহিত নিব্বান” কে ছিলেন? আমার সাথে কি ওনার কোনো সম্পর্ক ছিল?আমাকে কেন বেছে নেওয়া হল মেসেঞ্জার হিসেবে।
তবে বাবা যখন বলেছেন “ভয় নেই খুকু”। আমি জানি বাবা যেখানেই থাকুক আমার পাশেই আছেন। একটা ভালো লাগা কাজ করছিল অনেক দিন পর বাবাকে দেখে। কাঁচের জানালা দিয়ে বাইরে মনোরম দৃশ্য দেখতে দেখতে রাত পার হয়ে গেল।

পরদিন স্যারের ড্রাইভার আব্বাস এলো আমাদের নিতে। আমি রাস্তায় যেতে যেতে লিওনেলকে আমার স্বপ্নের কথা গুলো বলছিলাম। ও আমাকে বলল ” ঋষিকা তুমি এ সব নিয়ে বেশি চিন্তা করছো। Enjoy করো। আর আনুবিসের মূর্তিটা নিয়ে এসেছো তো! প্রোফেসরকে দিয়ে দিও। ” আব্বাসও আড়চোখে দেখলো আনুবিসের মূর্তিটা। ওর চোখে মুখে একটা ভয়ের আতঙ্কের ভাব। এটা কে দিল আপনাদের? এখানে অনেকেই আছে প্রাচীন মূর্তিগুলো খুব অল্প দামে বিক্রি করে। তবে সব না নেওয়াই ভালো। এটা তো অনেক বছর আগের মূর্তি মনে হচ্ছে । কেউ চুরি করে বিক্রি করে দিয়েছে মনে হয়। সাবধানে থাকবেন সব মূর্তি শুভ হয় না। চুপচাপ শুনলাম আব্বাসের কথা।

সিনাই আসলে পর্বত। কায়রো থেকে জল ও স্থল উভয় পথেই যাওয়া যায়। আমরা স্থল পথেই চলছি। রাস্তা বেশ ভালো এদিকের। আকাশ ঝকঝকে নীল। সেই সঙ্গে গনগনে রোদ। চারিদিকে বালি পাথরের রুক্ষ মরুভূমি। গাছ বলতে কাঁটা ঝোপ, খেজুর বা জুজুবে গাছ।একদল বুনো উট ছাড়া অন্য জীব জন্তু রাস্তায় তেমন নজরে পড়েনি। দেখতে দেখতে সিনাইএ এসে পৌঁছোলাম আমরা। এটি জিউস, খ্রীষ্টান ও মুসলিমদের পবিত্র স্থান।

সিনাই মরুভূমির একদিকে গিয়ে দাঁড়ালো গাড়িটা। দেখি ইব্রাহিম স্যার আমাদের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে। কিছুটা দুরে সিনাই পর্বত হাত দিয়ে দেখালেন স্যার। পর্বতের উচ্চতা ২২৮৫ মি। রাস্তা আছে পর্বতে ওঠা-নামা করায়। স্যারের কথাগুলো যেন আর ভালো লাগছিল না। ব্যাপারটা উনি বুঝতে পেরেছেন কি না জানি না নিজেই বললেন চলো ওদিকটায়। আমরাও স্যারের পেছন পেছন গিয়ে দেখলাম একজায়গায় বড় করে ঘেরা দেওয়া। অনেক সিকিউরিটি চারিদিকে। স্যার বললেন এটা আমাদের নতুন আবিষ্কার৷ ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় পঞ্চাশ কিমি নীচে একটি মমি তোমাদের কলেজে পড়ানোর সময় দেখেছি তোমারা দুজনই এ সব বিষয়ে বেশ আগ্রহী।তাই দেরি না করে তোমাদের খবর দিই। চলো এবারে যাই নীচে।সুরঙ্গে যাবার জন্য সিঁড়ি করা হয়েছে। যেতে খুব একটা কষ্ট হলো না আমাদের। ভেতরে গিয়ে দেখি এক বড় হলঘর। একপাশে একটা মমি রাখা কফিনে। দেয়ালে প্রাচীন মিশরীয় হায়ারোগ্লিফিক্সে ভাষায় লেখা। বিভিন্ন ভঙ্গিতে দেয়ালে দাঁড়িয়ে আছেন আনুবিস। কোথাও মৃতদেহ তদারকি করছেন, কোথাও মমি তৈরির কাজে হাত লাগিয়েছে। স্যারকে দেখলাম একটা মশালের সাহায্য পড়ার চেষ্টা করছেন লিপিগুলো। কিছু ছবিও তুলে নিলেন। আমাদের বললেন “মনে হচ্ছে কোনো পুরোহিতের মমি এটা”। যিনি ছিলেন আনুবিসের উপাসক। আরো অনেক জিনিস ছিল নিশ্চয়ই।

কফিনের কাছে গিয়ে কি যেন দেখছেন স্যার।
— “বুঝলে লিওনেল একমাস ধরে চলছে এর উদ্ধারের কাজ প্রতিদিনই যেন নতুন নতুন তথ্য পাচ্ছি। চুরি হয়ে গেছে কিছু জিনিস। আজ কি তথ্য পেলাম জানো এটা পুরোহিত নিব্বাসের মমি। কফিনের গায়ে দেখো লেখা আছে।

আমি হলঘরটা দেখে বুঝতে পেরে গেছি এ আমার স্বপ্নে দেখা হলঘর। চারদিক ভালো করে দেখে দেখি একদিকে একটা হুক্কা পড়ে আছে। স্যার হঠাৎ বললেন দেয়ালের গায়ে দেখো একটা হুক্কা আর আনুবিসের মূর্তির কথা বলা আছে। চারিদিকে দেখো তো। আমি দেখলাম একদিকে আনুবিসের মূর্তি আছে ছোটো একদম আমার কেনা মূর্তির মতোন। ব্যাগ খুলে আমার আনা আনুবিসকে খুঁজে পেলাম না।
স্যার বললেন “হয়তো মূর্তিটা কেউ চুরি করে নিয়ে গিয়েছিল, সেটা গিয়ে পড়ে আমাদের ঋষিকার হাতে। তোমার মাধ্যমে আবার ফিরে এলেন নিজের জায়গায়। প্রভু কখনো ভক্ত ছাড়া থাকতে পারেন বল? সভ্যতার এত উন্নয়নের পরও কিছু ব্যাপার থেকেই যায়, যার কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা হয় না। হয়তো কোনো পবিত্র আত্মার খোঁজে আনুবিস পাড়ি দিয়েছিলেন মিশর থেকে পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়িতে।

পরদিন আলেকজান্দ্রিয়া শহর ঘুরে আমরা রওনা দিলাম দিল্লীর উদ্দেশ্যে। রাতে আর অদ্ভুত স্বপ্ন দেখি নি। তবে এয়ারপোর্টে হঠাৎই একজন হ্যাট পড়া লম্বা মতোন লোক এসে আমাকে Sukran বলে চলে গেল। আমি জানি এটা আরবি ভাষায় “ধন্যবাদ।” অবাক হয়ে লোকটার চলে যাবার পথের দিকে তাকিয়ে আছি। লোকটা যেতে যেতে মুখটা আমার দিকে একবার ঘোরালে আমি দেখলাম লোকটার মুখটা শেয়ালের আর শরীরটা মানুষের। অথচ লিওনেলকে জিজ্ঞেস করলে ও বলে ও নাকি কাউকে দেখেনি।


ফেসবুক অ্যাকাউন্ট দিয়ে মন্তব্য করুন


0 Comments

মন্তব্য করুন

Avatar placeholder

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।