ঘুম জন্ম
(১)
ঘুম ভেঙে ধড়ফড়িয়ে উঠে বসল অয়ন। উফ্ফ কি যাতা স্বপ্নরে বাবা। ওর জীবনটা নাকি সুনীলের মতো হয়ে গেছে! সুনীলকে ঠিক পছন্দ নয় ওর। ওদের কলেজেই পড়ে, কিন্তু কোনো ক্লাস নেই ছেলেটার। কেমন সাদামাটা জামা কাপড় পড়ে, অ্যাবসোলিউটলী নো ড্রেসিং সেন্স! হাবভাব মোস্ট ইডিওটিক। টালীগঞ্জের দিকে বস্তিতে থাকে। নাপিতের ছেলে, নেগ্লিজিবল এলিমেন্ট যত! কিন্তু চাইলেই অয়ন নেগলেক্ট করতে পারছে কই। সেমিস্টারে কি নম্বর হাকায় মালটা..
বাট, হোয়াই ইস ইট সো ডার্ক হিয়ার? ওর চিন্তায় ছেদ পড়ে। অয়ন বিলেনিয়র আর্য রায়ের একমাত্র ছেলে। ওর নিজের ঘরটাই একটা দেখার মতো বস্তু। এই তো কয়েকমাস আগেই ফলস সিলিঙে বাহারি আলো লাগিয়েছে, রাতে স্নিগ্ধ একটা প্যাটার্ন জ্বালিয়ে রাখে ও। একা ভয় করে, তাই কি?
নাহ্, অয়ন উঠে পড়ল বিছানা থেকে। ম্যাট্রেসটা কি শক্ত রে বাবা। অন্ধকারে হাতড়ে দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে এলো। হোয়াট! এতো একটা ঝুপড়ি! টিনের চাল দেওয়া, চারপাশটা বড্ড নোঙরা। সামনে একটা সরু গলি, দু পাশে সেম টাইপের ঘর (তোবড়ানো বাক্স বলা যায়, আ হাউজ শুড বি লাইক দা ওয়ান হি হ্যাস); রাস্তার উপরেই কিছু ময়লা কাপড় ঝুলছে। জল চুঁয়ে মাটি কাদা কাদা হয়ে গেছে। কিছুটা দূরে একটা কল থেকে অনবরত জল পড়ে চলেছে, একটা শুয়োরের বাচ্চা ঘোরাঘুরি করছে আর পিট পিট করে ওর দিকে তাকাচ্ছে।
দৌড়ে ঘরে ঢুকে আসে অয়ন। খোলা দরজা দিয়ে হালকা আলো এসে পড়ছে পিছনের আবর্জনা ভর্তি দেওয়ালে। গা গুলিয়ে ওঠে ওর, বমি আসে। ঘরের এক কোনায় একটা হাত আয়না চোখে পড়ে, নিমিষে তুলে নিয়ে মুখের সামনে ধরে অয়ন। নাহ্, এতো ও-ই । সেই চোখ, মুখ; কিন্তু চেহারার একি হাল! বস্তির মোড়ে দাঁড়িয়ে ক্যারাম খেলে যে ছেলেগুলো তাদের মতো লাগছে ওকে। খোঁচা খোঁচা দাড়ি গালটা ঢেকে দিয়েছে প্রায়। একহাতে আয়না ধরে অন্য হাতটা নিজের মুখের উপর বোলায় ও, একই মুখ, কিন্তু কত আলাদা। অন্য কেউ ছুঁলে বুঝবে এই পার্থক্য? আচ্ছা, অন্য কেউ বলতে কে? কতদিন ওর মুখ কেউ ছোঁয়নি, ও নিজে ছাড়া? মনে পড়ে না। মাথায় অসহ্য যন্ত্রণা করতে থাকে।
পালিয়ে আসে বাইরের গলিটায়। যেভাবেই হোক ফিরে যেতে হবে। মানিব্যাগ, মোবাইল কিছুই নেই পকেটে, দে মাইট হ্যাভ স্টোলেন দোস থিংস। রাস্তার মুখে আসতেই একটা গুন্ডা মতো ছেলে চিৎকার করে ওঠে – ‘সূর্যদা, পাগলটা আবার একা বেরিয়েছে, পোত্যেক বার কিন্তু আমরা সামাল দিতে পারব না’।
অয়ন কিছু বোঝার আগেই সামনের দোকান থেকে একটা বুড়ো লোক বেরিয়ে আসে।
‘বাবু, একটু শান্তি দে। একা বেরুস না তুই। সমথ্থ ছেলের পিছনে ঘুরলে আমার চলবে? ক’টা কাস্টমার বসে বল দিকি নি? আজ আবার সব চুল, দাড়ি নেই, টাইম লাগবে’।
অদ্ভুত তো! কিসব বলছে লোকটা? দেখে তো ধান্দাবাজ লাগছে না।
লোকটা ওর হাত ধরে টেনে সেই জঘন্য বাড়িটার সামনে নিয়ে আসে। পিছনে পিছনে দুটো ছেলে – বস্তিরই হবে। ও দু একবার হাত ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলেও বেশী জোর লাগাতে ভয় পায়।
ঘরে ঢুকে লোকটা বলে – ‘কি যে হলো তোর সোনু, মাথাটা বিগড়ে গেল একদম! এখন শুয়ে থাক চুপ করে, তোর মা এই এলো বলে’।
লোকটা চলে যায়, ওর মাথায় হাত বুলিয়ে। চুল গুলো কি ঘেটে গেল? পরক্ষণেই হাসি পায় – কোথায় ওর আগের জেল লাগানো কেত মারা চুল আর কোথায় এখনকার ধুলোমাখা ..
এরা মনে হচ্ছে আঁট ঘাট বেঁধেই নেমেছে। ফট করে ভুল স্টেপ নেওয়া যাবে না। বাইরে ওই ছোকরা গুলো থাকতে পারে, কিছুক্ষণ ওয়েট করাই ভালো। খাটের কোনায় চুপ করে বসে থাকে অয়ন। মাথা ব্যাথার সাথে গা হাত পাও কামড়াচ্ছে খুব। তাও চারদিকটা তাকিয়ে দেখে ও। বাব্বা, টি ভিও আছে একটা, কিন্তু কি ছোট, ওর ট্যাব টার মতো হবে। একদিকের দেওয়াল জোড়া বই খাতা, কলেজের সাবজেক্টের – চেনা লাগে অয়নের। অন্যদিকে ডাই করা পুরনো জামা, প্যান্ট, শাড়ি, ছাড়া ব্লাউজ – এমনিই টুলের ওপর রাখা। উল্টো কোনায় একটা দরজা, খোলা, কিন্তু আলো আসছে না ওইদিক থেকে। টয়লেট হবে হয়তো। মাথার উপর ফ্যান ঝুলছে কিন্তু ঘুরছে না।
সামনের দরজায় শব্দ হতেই চমকে ওঠে অয়ন। একজন বয়স্ক মহিলা, দেখে মনে হয় লোকের বাড়ি কাজ করে, হঠাৎই ঢুকে আসে। ঘরটায় একটা এঁটো বাসনের গন্ধ ছড়িয়ে যায়।
‘কি রে? মুড়ি খেয়েছিলি? না খেয়ে, শুয়ে থেকে পড়াশুনা লাটে তুলবি সব? তোর বাপটায় আর কদ্দিন টানবে বল তো?’
‘আপনারা কারা? আমাকে ছেড়ে দিন, আই মাস্ট গো হোম’- মহিলা দেখে অনুনয় করে ওঠে অয়ন।
‘সোনু এরম করে না বাবা, দেখ দাসবাড়ির ছোটবউ আজ আলাদা করে একটু কচুশাক দিয়েচে, নেয়ে এসছি তোর জন্যি’- বলতে বলতেই মহিলা এগিয়ে এসে কপাল ছোঁয় ওর – ‘জ্বর তো গা পুড়ি যাসছে, পেটে কিছু তো পড়ে নি। সব কপালের দোষ আমার’।
হোয়াট দা ফাক ইজ হ্যাপেনিং অ্যারাউন্ড! এই লোকটা আর মহিলাটি ওকে নিজের ছেলে বলে কেন ভাবছে? এদের কি মাথা খারাপ হয়ে গেল? কিন্তু ছোলা দিয়ে কচুশাক যে ওর প্রিয় সে তো মা আর রান্নার মাসি ছাড়া কেউ জানে না। মা! একটু একটু মুখটা মনে পড়ে এখনো। সেসব তো অনেক ছোট বেলার কথা।
মহিলা যত্ন করে মাথায়, কপালে হাত বুলিয়ে দিতে থাকে। কি একটা সুর ভাজতে থাকে মনে মনে। অয়নের খুব চেনা, খুব কাছের কোনো সুর। নিজে থেকেই শুয়ে পড়ে ও। যেন মা এসে বসেছে ওর মাথার কাছে, এই বস্তির ঘরটা বদলে শিলিগুড়ির একতলা মামাবাড়িটা ভেসে ওঠে। মহিলার আঙুল গুলো মায়ের মতই, লম্বা লম্বা। অতটা পেলব নয়, এই যা। বোঁটকা এঁটো গন্ধটাও ভালো লাগছে এখন। জ্বরের ঘোর না মায়ের আদর – বোঝে না অয়ন, ও ঘুমিয়ে পড়ে আবার।
(২)
ক্লাস সিক্সে মা মারা যাওয়ার পর বাবার সাথে কলকাতার বাড়িতে চলে এসেছিল অয়ন। ও বায়না করেছিল, তাই ট্রেনে এসেছিল। নাহলে আর্য রায় বাগডোগরা থেকে ফ্লাইট নিতেই পছন্দ করেন। ঘুমের মধ্যে সেই ট্রেনে চড়ার স্বপ্নই দেখছিল অয়ন। মোবাইলে অ্যালার্ম এর শব্দে ঘুমটা চটকে গেল। ভালো দিনগুলো স্বপ্নে এলে ঘুম ভাঙাটা মৃত্যুর মতো মনে হয়। জেগে উঠতেই অয়ন টের পেল গায়ে বেশ জ্বর।
পাশ ফিরে গ্যালাক্সিটাকে চুপ করালো, নাহলে আর একটা খারাপ দিন শুরু হওয়ার কথা জানান দিয়েই যাবে। পূবের জানালা দিয়ে আলো আসছে, কোনো মতে চিৎ হয়ে শুয়ে ফলস সিলিঙের আলোগুলো দেখতে লাগল অয়ন। সত্যি! মিথ্যেদের আলো দিয়ে সাজিয়ে রাখলে দে লুক গরজিয়াস।
ইট ইস এইট থার্টি নাও। বাবা নিশ্চয়ই বেরিয়ে গেছেন.. বাট, হাউ ডাস দিস ম্যাটার! বাড়ি থাকলেও কথা হয় কি? দেখা হলে জাস্ট এই ফিলিংস টা আসে যে আই হ্যাভ আ হেলদি অকাউন্ট। নাহ্, মাথার ব্যথাটা বড্ড কষ্ট দিচ্ছে। নীচে কাজের ছেলেটা হয়তো আছে, তাকে ডাকতে একটুও ইচ্ছা করলো না অয়নের। নরম বিছানায় শুয়ে থাকতে মন চাইছে।
কি ভয়ঙ্কর স্বপ্ন ছিল বস্তির বাড়িটা। কি অদ্ভুত আর বাজে সব লোকজন। অদ্ভুত? হ্যাঁ অদ্ভুত তো বটেই। পরের ছেলেকে নিজের বলে দাবী করছিল। বাজে? না, মানে ঠিক অতোটা নয়। মহিলাটি তো বেশ মায়ের মতই। কতদিন পর কেউ ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিল, ছোটবেলার গান .. ফিরে পাওয়া কি কম কথা। যেই ওদের ছেলে হোক, বাবা মাকে কাছে পায় অন্তত।
শুয়ে শুয়ে ব্যথার উপশম কিছুই হচ্ছে না। পেইন কিলারটা খেতেই হবে। ড্রয়ারে ঘুমের ওষুধের পাশেই তো রেখেছিল, গেল কোথায়?
ডিসগাসটিং ! দরকারের সময় কিছু পাওয়া যায় না। সামনের ওষুধের দোকানে কল করলেই দিয়ে যাবে। গ্যালাক্সিটা হাতে তুলে কনট্যাক্টস খুঁজতে থাকে অয়ন। ‘আরোগ্য মেডিক্যাল স্টোর’, ‘এ’ দিয়ে শুরু করেই থেমে যায় একটা নামে – আর্য রায়। বাবা বলে সেভ না থাকলেও, কেন যেন লোকটাকে ফোন করতে ইচ্ছা করে। ভাবতে ভাবতে কল করেই ফ্যালে অয়ন। রিং হয়ে যায়.. হয়েই যায়.. দশবার..পর পর। অয়ন পেরিয়ে আসে দশ দশটা বছর, সেই এগারো থেকে আজ একুশ, কেউ ফোন ধরে না। ও মনে মনে ভাবে, কি জানি বাবা হয়তো খুব ব্যস্ত, আজ হয়তো সব চুল, একটাও দাড়ি নেই! হেসে ফ্যালে অয়ন, জ্বরের ঘোরে সত্যি আর স্বপ্ন গুলিয়ে যাচ্ছে আজ।
মা এর ছবিটা এখনো কি জীবন্ত। খুব দামী পাথর দিয়ে ফ্রেমিং করা। উঁচুতে টাঙানো, এমনি যতটা উঁচুতে, আজকাল তার থেকেও অনেক বেশী উঁচু মনে হয় অয়নের। ছবিটার নীচে এসে দাঁড়ায়। কেমন একটা এঁটো গন্ধ আসছে না? সেই ছোটবেলায় খেয়ে মায়ের আঁচলে মুখ মুছে দিলে এরকম স্মেল আসত। এখন ফরেইন পারফিউমে ডুবে যাওয়া শরীর এসব গন্ধকে পাত্তা দেয় না। বুক ভরে একটা নিঃশ্বাস নিয়ে ঘরের বাইরে বেরিয়ে এলো অয়ন।
জ্বরে মাথাটা টলছে, কিন্তু বসে থাকলে চলবে না। কাজের ছেলেটাকে বলে বাইরের লনে চলে আসে অয়ন। পিছনে ফিরে দেখে নেয় বাড়িটাকে – এখান থেকে বেরোলে লোকে সেলাম ঠোকে। কোনটা ইমপরট্যান্ট? যে বের হচ্ছে সে? না যেখান থেকে বের হচ্ছে, সেটা?
প্রিয় রেনো ডাশ্টারটা নিয়ে রাস্তায় নামে। সল্টলেকের একদম সম্ভ্রান্ত পাড়া, এখানে পাগল থাকে না। থাকলেও, পথ হারালে কেউ তাদের বাবাদের ডেকে দেয় না।
হাইরোডে উঠে স্পিড বাড়ায় অয়ন। একবার সত্যি সত্যি সুনীলের বাড়ি ঘুরে এলে হয়। টালীগঞ্জের দিকে কণিকা থাকে, ও জানতে পারে সুনীলের নম্বর। যেমন ভাবা তেমন কাজ, ফোন করে অয়ন জেনে নেয় যা জানার। বাইপাস, বালিগঞ্জ পেরিয়ে আসে একে একে। এই শরীরে গাড়ি চালাতেও কষ্ট হচ্ছে, গল্ফগ্রিনের ভিতর একটা ফাঁকা রাস্তায় ও এস ইউ ভি টা দাঁড় করায়। সীটটা হেলিয়ে চোখ বুজে নেয়, ঘোর ঘোর ভাবটা জাঁকিয়ে বসে আবার। বড্ড যন্ত্রণা আজ ওর দুচোখে। ও আস্তে আস্তে ঢুকে পড়ে ঘুমের মধ্যে – স্বেচ্ছায় রওনা দেয় হারানো স্বপ্নের দিকে।
(৩)
অনেক লোক চারপাশে অয়নকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে। কপালটা ফেটে যাচ্ছে যেন। কে একটা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে মনে হচ্ছে। ও জোর করে চোখটা খোলে। সেই মহিলা, সেই গন্ধ..
‘ওই তো চেয়েছে। জ্ঞান এসেছে সুনীলের’ – মাথার কাছে দাঁড়ানো একজন মাঝ বয়সী লোক বলে ওঠে।
খুলির ভিতর মনে হয় একশ স্যাকরা হাতুড়ি পিটছে। তার মধ্যেই খেয়াল করে সেই নাপিতটা একজন ভদ্রস্থ চেহারার লোককে হাতে পায়ে ধরে কিসব রিকোয়েস্ট করছে। এবার শরীরের যা অবস্থা উঠে পালাতেও পারবে না ও। কিন্তু পালিয়ে যাবে কোথায়? সত্যিই কি ওর কোনো বাড়ি আছে?
কপালে সেই স্পর্শটা ফিরে আসে। ব্যথাটা কি একটু কম লাগছে! একটা আদরের গন্ধ, ভরসার গন্ধ ছুঁয়ে যায় ওকে। কান খাড়া করে শুনতে পায় নাপিত লোকটা এখনো অনুরোধ করে চলেছে -‘ডাক্তারবাবু, কিছু একটা করেন। ছেলেটারে বাঁচায়ে দ্যান। আমগো ঘরে এতো টাকা নাই। তবে, লাইগলে ওই দোকান আমি বেচে দিব’।
‘হ্যাঁ, হ্যাঁ, আমরাও ক্লাবের থেকে কিছু ব্যবস্থা করব। এই বস্তি থেকে এর আগে কেউ ইঞ্জিনিয়ার হয়েছে!’- সেই ষন্ডা ছেলেটা আশ্বস্ত করে ওর এখনকার বাবাকে।
অনেক অনুনয়ের পর, কি জানি কি ভেবে রাজি হয়ে যান ডাক্তার ভদ্রলোক। ব্যাগ থেকে একটা ইঞ্জেকশন বের করে পুশ করেন অয়নের হাতে। খস খস করে ওষুধও লিখে দেন – অয়ন চোখ মেলেই থাকে। ও আর অন্য কোনো জগতের অন্য কোনো বাড়ি যেতে চায় না। কেবল আলতো স্বরে ওই মহিলাকে বলে – ‘মা, ওই ছোটবেলার গানটা গাও না একবার’।
একটা দেহাতি লোকগানের সুর ছড়িয়ে পড়ে মায়া জগতে। অয়ন আধঘুমে দ্যাখে একটা ট্রেন, তার জানালার ধারে একটা বাচ্চা ছেলে। ট্রেনটা ভিড় শহরের চৌহদ্দি ছেড়ে উত্তরে কোনো অচেনা জনপদের দিকে ছুটে চলেছে, অনেক অনেক দূরের চা-বাগান ওকে ডাকছে।
আজ আর অফিসে যাওয়া হয় নি আর্য রায়ের। ডাইনিং রুমে মাথায় হাত রেখে বসে আছেন অনেকক্ষণ। এ সি পি আসরফের ফোন তো এখনো এলো না।
ভাবতে ভাবতেই মোবাইলটা কথা বলার অনুমতি চায়। কাঁপা হাতে রিসিভ করেন আর্য –
‘খোঁজ পেলে কিছু? দুদিন তো হয়ে গেল’।
‘আমরা সব দিক থেকে ট্রাই করছি স্যার। ওর গাড়ি আর ফোন গল্ফগ্রিনের কাছে একটা রাস্তায় পেয়েছি’ – কেটে কেটে বলেন আসরফ।
‘গাড়ি দিয়ে কি হবে! আমার ছেলেটা কোথায়? মাই অনলি ..’ – কান্নার শব্দে কথা ঢেকে যায়।
‘স্যার, সেদিন ও উধাও হয়ে যাওয়ার আগে কণিকা বলে একটি মেয়েকে ফোন করেছিল, একটা ফোন নম্বর চাইতে’।
‘দ্যাটস দা ক্লু। কার নম্বর? সেটা ট্রেস করলে?’
‘সেটাই তো আশ্চর্য স্যার। অয়ন ওর ভোডাফোন থেকে ফোন করে নিজেরই জিওর নম্বর চায়। বলে নিজের কাছে সেভড নেই। কি একটা কারণে ইমিডিয়েট লাগবে। সেই জিও নম্বরও আউট অফ সার্ভিস বলছে।’
‘কি বলছ? আর ইউ আউট অফ ইওর মাইন্ড?’
‘সত্যি স্যার। আজগুবি ব্যাপার। আর একটা কথা – গাড়িতে একটা কাগজ পেয়েছি, তাতে লেখা – ‘All addresses are not home, home is a place where love exists.’ কিছুই তো বুঝছি না স্যার, এখন রাখি। নতুন খবর পেলেই জানাব আপনাকে, চিন্তা করবেন না একদম’…
0 Comments