আত্রেয়ী বাঁচলে বাঁচবো আমরা………….

তুহিন শুভ্র মণ্ডল on

             বালুরঘাটে থাকলে আত্রেয়ীর পারে সকাল ও বিকাল যাওয়াটা আমার একটা অভ্যাসে দাড়িয়ে গিয়েছে। প্রতিদিন আর কত
আবর্জনা জমলাে, আর কতটা প্রতিমার কাঠামাে যােগ হল? জলের রং আরও কতটা কালাে হল? আত্রেয়ীর জলে পাখীদের সংখ্যা কমছে বা বাড়ছে? আত্রেয়ীর চর কতটা জাগলাে? আর প্রতিদিনই যন্ত্রণাক্লিষ্ট হয় মন। আত্রেয়ীর হাল দিন দিন বেহাল হয়ে যাচ্ছে। আত্রেয়ীকে খুব কাছ থেকে গত বারাে বছর ধরে দেখছি। সমজিয়া থেকে ডাঙ্গি ফতেপুর। বাংলাদেশ থেকে যেখানে ভারতবর্ষে প্রবেশ করেছে আর আবার সেখানে ভারতবর্ষের গন্ডি পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এই ৫৮ কিলােমিটার গতিপথের অনেক জায়গাতেই নদীর বুকে জল নেই। নদীখাত দখল করেছে বালি৷ এইতাে কদিন আগে আত্রেয়ীর বুকে আত্রেয়ী নদী (?) তে ক্রিকেট খেলে প্রতিবাদ জানিয়েছি। এই তাে কদিন আগে পায়ের পাতা ডােবে না এমন জলে কাগজের নৌকা ভাসিয়ে ছাত্র-ছাত্রীরা প্রতিবাদ করেছে। সমীক্ষা চালাতে গিয়ে লক্ষ্য করেছি অনেক মৎস্যজীবিরা  পেশা পরিবর্তন করেছে। আত্রেয়ী থেকে হারিয়েছে মহাশােল, বাঘা আড়, পুতুল, বেলেরা। নদীর বুকে যদি জলই না থাকে তাহলে মাছ থাকবে কি করে? কিছুদিন আগে পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ নদী ভিত্তিক একটি সমীক্ষা প্রকাশ করেছে তাতে উত্তরবঙ্গের মহানন্দা, তিস্তা, করলা ও কালজানি নদীকে প্রায় স্নানের অযােগ্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু অন্য নদীগুলির কি অবস্থা? তাদের নিয়ে রিপাের্ট
কবে বেরােবে।
               আত্রেয়ীর সদরঘাট এলাকায় জলের রং ঘন কালাে। যারা স্নান করে তাদের কথা অনুযায়ী আত্রেয়ীর জলে স্নান করলে
চর্মরােগের মত দেখা দিচ্ছে। আত্রেয়ীর দূষনও বােধহয় সেই মাত্রাতেই পেছাচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কাছে আত্রেয়ীর দূষণ সংক্রান্ত রিপাের্ট পেশ করার আবেদন জানিয়েছে পরিবেশপ্রেমী সংস্থা দিশারী সংকল্প। ২০১৪ সাল থেকে আত্রেয়ী বাঁচাও আন্দোলন আত্রেয়ী নদীকে বাঁচানাের জন্য চলছে। এই মর্মে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, দেশের প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতিকেও নিয়মিত দরবার করা হয়েছে। ভারতবর্ষের সংসদেও বিষয়টি উঠেছে। আসলে আত্রেয়ী নদী একটি আন্তঃসীমান্ত নদী । ভারত-বাংলাদেশ দুই দেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত। কিন্তু উপগ্রহ চিত্রে দেখা গিয়েছে সমজিয়া থেকে মাত্র দেড় কিলােমিটার দুরে মােহনপুরের কাছে একটি রাবার ড্যাম দিয়ে জল নিয়ন্ত্রণ করছে বাংলাদেশ। আর তার ফলেই আত্রেয়ীর জল সমস্যা বাড়ছে। কখনও জলশূন্য আত্রেয়ী তাে কখনও আবার বৃষ্টি না হলেও হঠাৎ হঠাৎ আত্রেয়ীতে জলের পরিমান বাড়ছে। ফলে ফসল ভেসে যাচ্ছে কৃষকের।
                যেহেতু আত্রেয়ী দুই দেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত তাই কোন একটি দেশের পক্ষে আত্রেয়ীকে বাঁচিয়ে ফেলা সম্ভব নয় বলে মনে করি। তাই দাবী জানানাে হয়েছে ভারত বাংলাদেশ জয়েন্ট রিভার কমিশনে। কিছুদিন আগে ইন্টারন্যাশনাল রিভার নেটওয়ার্ক সমগ্র পৃথিবীর নদী বাঁচাও আন্দোলনের মধ্যে আত্রেয়ী বাঁচাও আন্দোলনকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। এটা নিশ্চিত ভাবে গৌরবের। কিন্তু নদী যদি ক্রমশ মৃতপ্রায় হতে থাকে তাহলে এই গৌরবের কাজ কি?
আত্রেয়ীর পারে যে সমস্ত ক্ষুদে বন্ধুরা রয়েছে তাদের নিয়ে দিশারী সংকল্প গঠন করেছে জলবন্ধু। আত্রেয়ীর দূষণ নিয়ে
সচেতনতা বৃদ্ধির চেষ্টা করছে এই জলবন্ধুরা। কিন্তু পরিস্থিতি যেদিকে গড়াচ্ছে তাতে আত্রেয়ী একদিন ভূগােলের বিষয় না থেকে ইতিহাস হয়েযাবে না তাে!? একদিন লিখতে হবে না তাে আত্রেয়ীর এপিটাফ?!

ফেসবুক অ্যাকাউন্ট দিয়ে মন্তব্য করুন


তুহিন শুভ্র মণ্ডল

শিক্ষকতার সাথে সাথে পরিবেশ রক্ষার আন্দোলন ২০০৫ থেকে করে আসছেন৷ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য সুন্দর ভবিষ্যত গড়বার লক্ষ্যে বদ্ধপরিকর৷"প্রসঙ্গ পরিবেশ " বইটির রচয়িতা৷পরিবেশ সংরক্ষণের কাজে  স্বীকৃতিও মিলেছে..আনন্দলোক(আনন্দবাজার) সেলাম বেঙ্গল পুরস্কার, আত্রেয়ী বাঁচাও আন্দোলনের জন্য ঋক শীর্ষ সম্মান,বেস্ট অ্যাচিভার  পুরস্কার,পথিক সম্মান পেয়েছেন।

0 Comments

মন্তব্য করুন

Avatar placeholder

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।