প্রবুদ্ধ ঘোষ-এর একগুচ্ছ কবিতা
যেভাবে ম্যাজিক হয়
সেই অদ্ভুত জাদুকর আমাদের ডেকে নেয়।
দর্শকাসন থেকে মঞ্চে উঠে এসে
জগঝম্প, দুরন্ত মিউজিক, চোখধাঁধানো আলো-
বোকা বনে যাই। মুঠোর ভেতর খরগোশ,
বুকপকেটে ক্যাকটাস, মাথার খোপে পায়রা,
আর কিচ্ছু নেইয়ের থেকে হঠাৎ গোলাপ।
বোকা বনতেই বারবার, জাদুকর ডাকলেই
মঞ্চে হাজির, হাসিমুখ, সুপ্ত ধর্মবোধ।
জাদুদণ্ড নড়ে ওঠে, গিলিগিলি ফু-
মানুষ উবে যায়। রুমাল নাড়লেই-
ফৌজি কাঁটাতার মাথায় সেঁধোয়। দেশ এঁকে দেয়।
জাদুকরের হাততালিতে ফুটো কয়েন ঝনঝন-
আমাদের কিনে নেয় বেচে দেয় নিলামে চড়ায়।
জাদুকর ডাকবে ফের- এই উত্তেজনা ধুকপুকে
আমরা লাইন দিয়েছি শৃঙ্খলা মেনে
ম্যাজিক ফুরোয় না। আমাদের গিলে নেয় রঙিন রুমাল।
আইসক্রিম কবিতা- ২
যে ক্রেয়ন এঁকে যায় নদী-গাছ-ফুল সরল বিশ্বাসে
জানি সেও পরিণত হবে খুনের ইজেলে
সেখানে বিপন্ন মুখ সাইরেনে লুকোবে ট্রেঞ্চের আড়ালে।
যেভাবে আইসক্রিম গলে জিভে, চকোবার আলগা কামড়ে
সেভাবে আইনফাইন গলে যাচ্ছে ধর্মবক পালক ছড়ালে।
আর কিছু নেই? আধোছন্দ অনুষ্টুভের দিন গেছে
এখন শোলোক জানে কত মাংসে কত রক্ত ব্যালান্স করাবে!
পায়রা কই? ক্যাকটাস জাগে জাদুকর লাল রুমাল ওঠালে
সমস্ত ক্রেয়ন জানে ছিঁড়ে খাবে নদী-গাছ, পরিণত হলে
শেষে? চ্যাটচ্যাটে ক্রিম খুঁটে নিতে পিঁপড়েরা আসে।
আপাততঃ ব্যক্তিগত চকোবার গলে রাষ্ট্রীয় আদেশে
কী দেবে ঈশ্বর, বলো?
ঈশ্বর, কেমন থাকছ আজকাল? ভয়ে?
তোমারও জীবন দেখো দড়ির ওপরে হাঁটা
বিশ্বাস টলে গেলে অসহায়
কেমন বাঁচছো বলো আজকাল? অসুখ সময়ে?
প্রার্থনা জড়ো হয়ে পচা ফুল-পাতা, জানি,
স্বার্থের সুতোয় বাঁধা মানতের ঢিল, দোলে।
তোমারও মুহূর্তে দেখো স্থিতি নেই
জল-বাতাস-নকুলদানা ঠিকঠাক পাও?
সংকট, উৎসব অনুপাত মেপে নিয়মমাফিক-
এসো, ফের অকালবোধন চাও বুঝি!
নাকি কোনও ভালবাসা, সহজ আলাপে থিতু…
সম্মোহনী এত ভিড়ে তোমার ভেতরটা হুহু করে?
ঈশ্বর, তোমাকে স্থিতি দিতে পারি, ডাকনামও
কী দেবে আমাকে বলো? কী দিতে পারো?
রেডিয়েশন রুমের বাইরে থেকে- ৩
কথা যা ছিল, এভাবেই আড়ালেতে থেকে যাবে।
যেমন যাপনে গোপন থাকে রাক্ষুসেভাব
যেমন ঈর্ষা গোপন ক’রে কাঁধে হাত রাখে কেউ
তেমনই আড়াল জুড়ে ঘন হয় ক্রাইসিস
বিক্ষিপ্ত মেটাস্টেসিসে
সুজাতা চালের খোঁজে রেশনে দাঁড়ায়। দুধ অমিল।
সুজাতা উপোস করে, পরমান্ন রেঁধে দেবে
হাজার বছর ধরে আমাদের শান্তি দাও তথাগত-
শুধু সুজাতাই আগলে রেখেছে কালগ্রাসী ক্ষিধে
শান্ত পথ জেগে থাকে ঘরের ভেতর
অসুখেরা যাতায়াত করে
কুলেখারা পাতা সেদ্ধ হয়
তেমনই কষাটে আলো বিকেলের গায়ে
ছায়া চিনে ঘরের ভেতর থেকে ঘরে
আরও পথ খুলে যায়, দেয়ালও তো জাগে
ঘুমিয়ে পড়েছি হয়তো ক্ষয়া অবসরে
মেঘে মেঘে কথোপকথন শুনে
ভোর হলে, ডেকে দিও, অশান্ত জীবন।
0 Comments