মাজ বিন বিলালের কবিতা
পরিচিতি :
রাজধানী দিল্লিতেই বেড়ে ওঠা বিলালের। ১৯৮৬ তে জন্ম।বিলাল কবি এবং অনুবাদক।উর্দু ও হিন্দি থেকে ইংরেজিতে অনুবাদের অনেকগুলো কাজ রয়েছে তাঁর। মাজ বিন বিলাল সাহিত্যে ও সমাজে বিশেষত ভারতীয় প্রেক্ষাপটে বন্ধুত্ব, বহুসংস্কৃতি ও ধর্মনিরপেক্ষতার ধারণাগুলি নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন।এই গবেষণার পাশাপাশি বিলাল আধুনিকতাবাদ, সাহিত্য ও ধর্ম, উত্তর-পূর্বীয় মুসলিম পরিচয়, সুফিবাদ, সাহিত্য তত্ত্ব, ফিল্ম স্টাডি, আইরিশ কবিতা, ভারতীয় ইংরেজি কবিতা, এবং তাতে দর্শন ও সাহিত্যের প্রভাব ― এসব নিয়েও তাঁর কাজ চলছে। গালিব ও ফয়েজের উপর বিশেষ জোর দিয়ে তাঁদের অনেক উর্দু কবিতা ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন। আধুনিক সাহিত্যে পি এইচ ডি করা বিলালের প্রথম কবিতা সংকলন গজলনামা , ২০১৯ সালে দিল্লি থেকে প্রকাশিত।
ভাষান্তর : সোহেল ইসলাম
ভূগোল পাঠ
ভারতীয় শৈশব হত্যার ইতিহাসের মধ্যে দিয়ে দেশের ভূগোল চিনছে ।
খুশবন্ত সিং , ১৯৬০
ক ।।
৯/১১ -র দিন
আচমকা একটা প্লেন এসে টাওয়ার ফুঁড়ে বেরিয়ে গেল
পেছন পেছন আরও একটা
পাঁচ বছরের ছেলেটা মায়ের কাছে জানতে চাইল ―
এটা কি কোনও ভিডিও গেম,
মা বলেছিল ―
না , এটা দি বিগ আপেল
* দি বিগ আপেল : নিউ ইয়র্ক সিটির ডাকনাম
খ ।।
ছয় বছর বয়সে
আমি কাবুল, কান্দাহার, হেরাত আর বামিয়ান চিনলাম
কিছুদিন পর , গোধরা, শোপিয়ান, আমেদাবাদ
যত না দেখেছি
তারচে বেশি শুনেছি এদের নিয়ে
(আমার টিভি দেখায় মায়ের নিষেধ ছিল)
তবুও এদের মানচিত্রে চিনতে অসুবিধা হয় না
গ।।
সাত বছরে এক নতুন পৃথিবীর মুখোমুখি হলাম
পরিচয় ঘটল বাসরা, নাজাফ, বাগদাদ, মোসুলের সঙ্গে
ওই বছরেই দেখলাম,
ইঁদুরের মতো বেঁধে রাখা এক ইভিল শিকার করছেন ―
জি আই জো
* জি আই জো : আমেরিকান মিলিটারি সায়েন্স ফিকশন ছবির হিরো। কমিক সিরিজ ‘ হাসব্রো’র অনুপ্রেরণায় যে চরিত্রের নির্মাণ।
ঘ।।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে
টিভি আমাকে বলে চলেছে
সিরিয়া, সুদান, গাজা আর সোমালির গল্প
বর্তমানে আমি ২১
কলেজের ডিগ্রি হাতে পেয়েছি
(মোসুল সবেমাত্র এসবের থেকে রেহাই পেয়েছে)
কিন্তু ভূগোল শিখতে গিয়ে
এদের কাউকেই আমার দরকার হয়নি কোনোদিন
* মোসুল : যুদ্ধে যুদ্ধে বিধ্বস্ত হয়ে যাওয়া উত্তর ইরাকের এক শহর।
আগ্রা, ১৯৪৮
আমি তাদের প্রত্যেককে স্পষ্টভাবে জানাতে চাই, এই সংকটময় মুহূর্তে শুধুমাত্র আনুগত্যের ঘোষণা দিয়ে ভারতীয় ইউনিয়নের সাহায্য পাওয়া যাবে না। অবশ্যই তাদের ঘোষণার সাপেক্ষে উপযুক্ত প্রমান দিতে হবে।
( সর্দার প্যাটেলের বক্তব্য , ৬ জানুয়ারি ১৯৪৮ , লখনউ)
― তোমরা দু’নৌকায় পা দিয়ে চলতে পারো না
ক।।
তাজমহলের বংশগত রক্ষাকারী হিসেবে
যথাযথ সম্মান পাওয়ার কথা আপনার
একা রেখে পরিবার চলে গেছে পাকিস্তান
বেশিরভাগ আত্মীয়রাও
সেখানে তো সহানুভূতি প্রাপ্য
তবে কেন বাড়ি বিক্রি করলেন আপনি ?
খ।।
বাড়ি বিক্রির চারটে কারণ আছে, স্যার
ঋণ শোধ করতে হবে , মেয়ের বিয়ে দেওয়া বাকি
ওদিকে শরণার্থীরাও অর্ধেকের বেশি বাড়ি দখল নিয়েছে
ছেলেরা কেউ নেই,মরে পড়ে থাকলে,কবরে মাটি দেবে কে
গ।।
দুঃখিত , বিশ্বাস করতে পারছি না
এখনই কেন ? আগে মনে হয়নি বিক্রির কথা ?
একমাস সময় দেওয়া হল,
যান ,প্রমান নিয়ে আসুন
তা নাহলে কাজ তো যাবেই
যাবে বিশ্বাসটাও
ঘ।।
স্যার, লাহোর থেকে আমি
দুই মেয়ে সঙ্গে নাতি – নাতনিদেরও ফিরিয়ে এনেছি
বাকিরা কেউ আর ফিরতে চায় না
ওরা ভয় পায় আপনাকে
ভয় পায় পুরনো প্রতিবেশীদের
রহম করুন, চাকরিটা কেড়ে নেবেন না
খোদার কসম এর বেশি কিছু আমার করার ছিল না
(সত্য ঘটনার ভিত্তিতে লেখা)
0 Comments