বাজার বিড়ম্বনা
রাতদুপুরে ঠাসঠাস শব্দ দ্বিগুণ হয়ে পাশের রুমে ছড়িয়ে পড়বে জেনেও বেডরুমের দরজাজানালা জোরেশোরেই বন্ধ করলো কাকলি। রাগে শরীরটা তরতর করে কাঁপছে তার। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুলে বিনুনি বেঁধে বেঁধে মৃণালকে উদ্দেশ্য করে বলে-
তোমাকে কতো করে বললাম আমি কাতলামাছ পছন্দ করিনা, অথচ তুমি নিয়ে আসলে ইয়া বড় মাথামোটা কাতলামাছ। তুমি আবারো প্রমাণ করলে এই সংসারে আমার তিল পরিমাণও মূল্য নেই।
– আহা.. তুমি এমন করে বলো না তো কাকলি। বাজারে গিয়ে যখন কাতলামাছটা নজরে আসলো তখনই তোমার চেহারাটা আমার চোখে স্পষ্ট ভেসে উঠল।
কাকলি এবার চেঁচিয়ে উঠলো।
– তুমি কী বলতে চাও ? কী বলতে চাও তুমি? মাছের সাথে তুমি আমার চেহারার মিল খুঁজছো !
– আহা.. আমি এটা বলিনি তো। তুমি একদিন বলছিলে তোমার কাতলামাছ খুব পছন্দ। তাই….
কথা কেড়ে নেয় কাকলি। সে আরো উত্তেজিত হয়। পা কাঁপতে থাকে তার।
– শুনো মৃণাল, তুমি আমার সাথে চালাকি করো না। আমি তোমার চেয়ে কোনো অংশেই কম না। তুমিও বিএ পাশ, আমিও বিএ পাশ। সো নেভার আন্ডারএস্টিমেট মি….
মৃণাল চুপসে যায়। একটুপর মিনমিন করে বলে,
– তুমি দুটোই পাশ করেছো কাকলি। বিএ পাশও করেছো আবার বিয়েতেও পাশ করেছো। দূর্ভাগ্য আমার। আমি বিএ পাশ করলেও বিয়েতে পাশ করিনি। এমসিকিউতে সঠিক আনসার সিলেক্ট করতে পারিনি। তাই এই ফেল মারা।
মৃণালের কথা শুনে কাকলির মেজাজ আরো বিগড়ে ওঠে। দ্বিগুণ উত্তেজিত হয় সে। উত্তেজনা একসময় কান্নাতে বিলীন হতে থাকে।
– তার মানে আমাকে তোমার পছন্দ হয়নি। সিলেক্ট করতে ভুল করেছো ?
– আহা… আমি এসব মিন করিনি তো।
– চুপ। চুপ। আর একটা কথা বলো না। আমি সব বুঝি। সংসারের জন্য সাধআহ্লাদ সব সাগরে ভাসিয়েছি। তবুও এ সংসারে কোনো মূল্য নেই আমার !
গভীর রাতে মা-বাবার এমন চিৎকার চেঁচামেচিতে তাদের দুবছরের ছেলে সন্দীপের ঘুম ভেঙে যায়। হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করে সে।
পাশের রুমেই মৃণালের মা তার স্বামীকে চুপিচুপি বললেন, দেখো, দেখো তোমার ছেলে তোমার প্রতি কতটা কেয়ারিং। বাজার থেকে তোমার জন্য ঠিকই কাতলামাছ নিয়ে এসেছে।
মৃণালের বাবা বললেন তোমার প্রতিও তার কেয়ারিং কম কিসের। তুমি টমেটো দিয়ে হালকা ঝুলে শোল মাছের চচ্চড়ি পছন্দ করো বলে কত্তবড় একটা শোল মাছ নিয়ে আসলো সেদিন !
দুজন দুজনার চোখের দিকে তাকিয়ে হা হা করে হেসে উঠলেন। কিন্তু এমন অট্টহাসিকে গ্রাস করে মৃণালের বাবার মুখটা বিষন্নতায় ছুঁয়ে গেল। দুঃস্মৃতির অতীত মুহূর্তের মধ্যে তাকে ভাবিয়ে তুললো ।
– কি ব্যাপার, তুমি এমন গুমরো মুখে বসে আছো কেন ?
মৃণালের বাবা মুখ থেকে কথা বের করেও হঠাৎ থমকে গেলেন। মনেমনে শুধু এটুকুই স্মরণ করলেন-
আহ! একসময় মা-বাবার পছন্দের মূল্য দিতে গিয়ে কত কটু কথা শুনতে হয়েছে আমার !
0 Comments