সৌমাল্য গরাই-এর গুচ্ছ কবিতা
আয়না
এমনই স্ফটিক স্বচ্ছ শরীর প্রদীপ
অন্ধকারও নীচু হয়ে বসে
দূর থেকে যেন লজ্জানত মেয়ে
যত কাছে যাবে উজ্জ্বলতা বাড়াবে দুহাতে
ভালবাসা এরকম মূক
কিছুটা আলো না দিলে তোমাকে সে
দেখাবে না মুখ
গলিপথ
মুঠো ভরে আসে চেনা দুঃখের
অলিখিত অন্ধকারে তুমি হাওয়ার স্যাক্সোফোন
বুকভরা দীর্ঘ নিঃশ্বাসের পর থেমে থেমে যাও
যেন পায়ের নীচে লেগে আছে কোনো অজ্ঞাত গলি
যাত্রাপথে ক্লান্তিহীন…
সেও কি স্বপ্ন দ্যাখে?
নাছোড় পরিব্রাজকের
দুর্গম তীর্থস্থানের মত
সমস্ত প্রহর জুড়ে বাতাস এখনো
শঙখধ্বনি দিয়ে যায়
আর এইসব গলিজুড়ে অসংখ্য
পায়ের ছাপ, মেহনতি মন
তোমার আলুলায়িত চুলের মত
কেমন নিঃশব্দে জড়িয়ে ধরে আঙুল…
সেলাই
যে আঙুলে আঁকড়ে ধরো
তেমন ক্ষমতা নেই তার
সে যেন মৃতের নাভি, পুড়েও পোড়ে না
নির্জলা দুপুর ঠোঁটে উপবাসী বিধবা স্মৃতিটি
কী এক মায়ার শাড়ি বোনে আমাদের অলীক সুতোয়
আঙুল বোঝেনি অই
সুনিপুণ বুননের ফাঁকে
অদৃশ্যে জড়ানো ফাঁস
মৃতদের মতো ঝুলে থাকে
পথচ্যুত
যতটুকু পড়ে থাকে পথ, ততদূর নয় সে সীমানা
এর মাঝে রাহাজানি, পথ ভুল, গোপন ঠিকানা
দু’ পায়ে সরল রেখা, তবু পথ, সংশয়ের দিকে
পালাতে পারে না পা ও, সে কেবল ঘুরপথে হাঁটে
এমন অনেক পথ, ফেরি করে আসে আলো
নিয়ামক সময়ের অপ্রস্তুত বিপন্ন সিঁড়িতে
কে তুমি নিভৃতে আসো -আয়ু বেড়ে যায় পৃথিবীর,
এ-মসৃণ ভূগোলের দেশে, তবু কেন ফেরারি সে ফেরা
দেখা না দেখার মাঝে অজান্তেই রয়েছে অদেখা..
দুপাশে দোলানো সাঁকো, না ফেরা অতীত শুধু জানে
আমাদের এই চলে যাওয়াগুলো কী ভীষণ একা….
নিসর্গ
মৃত্যুরা আসলে একা হয়, সঙ্গীহীন বিষণ্ণ চৈত্রের পাতাওড়া বন যেরকম।
ঘোড়ার নির্বাক খুরের মতো চিরকালের দৌড় অজান্তেই থেমে গেলে, জ্বলে ওঠা আগুন হঠাৎ নিভে এলে
অনন্ত শব্দের মধ্যে নৈঃশব্দ্য ঘুমিয়ে পড়লে কে যে কোথায় চলে যায় নিখোঁজ হতে
সুরম্য শরীর ছেড়ে চলে গেলে তবে কার গন্ধ খোঁজে মানুষ? এমন আকুল হয়ে পাতা ঝরে, ফুল ফোটে, এত এত ঢেউ…
যে একলা ঘোরে তাকে খুঁজে পেতেই শরীর ছেড়ে একলা হতে হয়!
দিগন্তে দিগন্তে মৃদু একতারা বাজে । হরিধ্বনি ওঠে,
নিহত মৃত্যুকে কাঁধে তুলে সন্ধ্যাতারা খোঁজে একলা মানুষ
0 Comments