তিনটি কবিতা
বন্দিশ
পলাশকে প্রচ্ছদ করেছে মেয়েটি , চড়াই পেরিয়ে বার বার সালংকারা আর বর্ণাঢ্য করার কোলাহলে বন্দিশ পোড়ায় অরণ্যের গাছতলা
চারপাশে তৃষ্ণারা জড়িয়ে ধরছে মাটি। হাওয়া স্রোতে ঝোপ ঝোপ ঘরগুলি আজন্ম নতজানু , নিঃসঙ্গ বিবেক দাঁড়িয়ে থাকে দয়িত মধ্যাহ্নে। ভাসে প্রমাদহীন জলকনা , এখনো অনন্ত বিভোর আলিঙ্গন ! অন্ধকার নেমে আসার পূর্বে চুম্বন উড়িয়ে দেয় আকাশে–
ইচ্ছে করে পাতা উল্টাই , রাস্তার ধারে ভ্রমরের অস্থির মোহে দেখা দিচ্ছে ভাঙা ভাঙা শব্দের ক্রমাগত বিষ্ময় , আমার অহংকারে মাটির বর্ণ – এক একটা বাঁকের মুখে অনুরাগের শরাঘাত , আলপথের শরীরে প্রচ্ছায়া -ইহকাল পরকালে পার হই নৈবেদ্যর ঘন অবসাদ –
তারপর উঠে দাঁড়ানো , প্রজাপতির হিসেব নিয়ে রোদ ঘিরে ধরি । পুরোনো স্বভাবের মোটা চালের ভাত আর উন্মুক্ত লোমশ অন্ধিসন্ধির ভেরেন্ডা ফুলের অপমান গুলোকে গুঁজে দিতে থাকি তারি ভাঙনকালের ভাঁজে ভাঁজে–
গোপন থাকেনা কিছুই; রাতের কান্নাগুলো নগ্ন হয়, পান করে অগুন্তি ফাঁকের উজ্জ্বল শৃঙ্গার—৷
দিনমান
নীল জলাশয় থেকে বলাকা খুঁজতে খুঁজতে ছায়া কেঁপে ওঠে
শূন্যে উড়ে দিন রাতের ইচ্ছে মাখা চাঁদ – পলকে পলকে খরাতপ্ত লোকালয় – কত মেঘ – স্বমোহন থেকে দূরে লেপটে থাকে সানাই – তখন প্রভূত নৈঃসঙ্গ – চেতনার গোপন সবুজে জাগে পাখির পালক – আলোর বুকে লুপ্ত গ্রহের যন্ত্রণা
উঠোনের হৃদয়ে হলুদ পাতা – ভরে যায় নিঃসম্বল অঞ্জলি , শান্ত জলাভূমির অভিমানে অশ্রদ্ধায় পোঁতা বাঁশটি দাঁড়িয়ে থাকে কালরেখায় -অথবা রিপুর খেয়াঘাটে সারারাত তর্পণ সারি ক্লান্ত রঞ্জক
বাঁশির বাতাসে বিষন্নতা লাগতেই নাবালের নালায় হাঁস চরে – শুকনো ঝিঙে লতায় কথা বলে পিপাসা – কাদাখোঁচা পাখির দল বেরিয়ে আসে পুরাতত্ত্বের ঝোপ থেকে
সবুজ
মাথার উপর শিমুল ঝরতেই দুটো শালিক উড়তে লাগল দোতারায়
একটি নির্জন দুপুরের লালন সমর্পণ করে দুপুরের রোদ , এগিয়ে আসে ধানচারা মাথায় সুচিত্রা সেন – রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ইলেকট্রিক পোস্টে বিদ্যুৎ জমে – দ্রিমদ্রিম শ্যালোর শব্দে ভাতার মারা মাঠ ছুঁয়ে দেয় প্রচণ্ড ঘাম ; ফাটল ভিজিয়ে দেয় পাতালের জল
কোমরে জড়ানো সরষে রঙের শাড়িতে আঁকা লীলারস ; তবু ভিজে যাওয়ার ভয় – মরসুমি অজুহাতে সতেজ ক্লোরোফিল
শষ্যকাল কাঁপে শিরায় শিরায়
0 Comments