বালুরঘাটে বৌদ্ধ-তন্ত্রের দেবী তারার উপাসনা ও এক মহান অঘোর-বৌদ্ধ সাধক ( ষষ্ঠ কিস্তি)

কৌশিক বিশ্বাস on

আগেরবার বলেছিলাম যে চাকা ঘুরতে শুরু করেছে এবং সত্যিই এই চাকা চক্রাকারে ঘুরেই চলেছে। এর ঘূর্ণনের ঘূর্ণিপাকে মানুষকে খুঁজে নিতেই হয় তার বাঁচার পথ ; তাঁর মুক্তির পথ। আচার সর্বস্ব ধর্মের ক্ষেত্রে হিংসা, শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই এগুলো সর্বত্র এবং কালে কালে বিরাজমান। যেমন ধরুন এই হরিদ্বার।  কেউ বলে ‘ হরি কি দুয়ার’ আবার কেউ বলে ‘হর কি দুয়ার’। এবার বুঝুন। হরি আর হরের মধ্যে নাহলেও তাদের ভক্তকূলের মধ্যে এই নিয়ে যে বৈরিতা ছিল, এতে কোন সন্দেহ নেই। যাইহোক, হরিদ্বার ভ্রমণকালে এই শহরের আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যের কথা স্মরণ করেছি বারবার। ১৯১১ সালে ভারতে যে জনগণনা ব্রিটিশ রাজত্বে হয়েছিল তাতে দেখা গিয়েছিল প্রায় ১৫০০০ অঘোর সাধক আছেন। কিন্তু কি এমন হলো যে কালক্রমে এই সংখ্যা কমতে কমতে প্রায় লুপ্ততার দিকে এগিয়ে চলেছে?  এক নয় একাধিক কারণ আছে। এখানে সবিস্তারে আলোচনা নিষ্প্রয়োজন। যেমন আমাদের বালুরঘাটের কথায় যদি ধরি ; আজ থেকে ৩০ বছর আগেও যত গৃহী ভক্ত বা   দীক্ষিত অনুরাগী ছিল – আজ কি তা আছে?  অথচ এ এমনই এক শহর যেখানে তিনি দেবভূমি উত্তরাখণ্ড ছেড়ে এখানে তাঁর সমাধিক্ষেত্র হিসেবে এই জায়গাটিকে বেছে নিয়েছিলেন। এই হরিদ্বার একটা সময় মানে ১৯৩০-৪০ সাল নাগাদ অঘোরী সাধকদের কাছে ছিল অন্যতম প্রাণকেন্দ্র। স্থাপনা করা হয়েছিল ‘অঘোর ব্রহ্মচর্যাশ্রম’। কেউ সন্ন্যাস গ্রহণ করতে চাইলে এই আশ্রমেই তাকে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করতে হতো। লোকালয় থেকে দূরে কোন প্রাচীন গাছের কোঠরে বা ছোট ছোট খোপ খোপ ঘরে ছিল অঘোর সন্ন্যাসদের বাস। এখনো হরিদ্বার বা ঋষিকেশে অঘোরদের আশ্রমগুলি সবই শ্মশানের একবারে গা ঘেসেই আছে। কিছু পুস্তক এই সব আশ্রম থেকে ছাপানো হতো আজ থেকে প্রায় ১০০-২০০ বছর আগে। সেগুলি বেশিরভাগই ছিল সিদ্ধি বা সিদ্ধান্ত বিষয়ক। প্রাচীন এই সব পুথির বিষয়ে যেটুকু খোঁজে জানা গিয়েছিল, যে সেসব আর কিছুই নেই। একটা সময় অঘোরদের প্রায় বিতাড়িত হতে হয়েছিল, এইসব কুঠির থেকে। পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল বহু আশ্রম, বহুদিন ধরে। এইসব অঞ্চলে বিশেষ অনুসন্ধান করলে হয়তো অনেককিছুর সন্ধান মিলতে পারে। যাইহোক,  এই অঘোরদের মধ্যেও কিন্তু বিভিন্ন তীর্থক্ষেত্র পায়ে পরিভ্রমণ করা ছিল কিঞ্চিৎ আবশ্যক। এমনই এক তীর্থক্ষেত্র যেখানে পরিভ্রমণ করতেই হতো সেটা ছিল হিমালয়ের পার্বত্য উপত্যকার বিশেষ একটি অঞ্চলে।  সেকথা পরেই বলি?  আর ওহ, হ্যাঁ ভাবছেন আজকের কভার পেজের সাথে লেখার মিল নেই, তাই তো?  জানি, জানি। এ ভাবনাটাই স্বাভাবিক। তবে অল্পসময়েই হাতের তাস ফেলছি না মশাই!  পরের কিস্তিতে বলবো। ততদিন আপনারাও একটু ভাবতে থাকুন। আজ এটুকুই…………


পড়ুনঃ পঞ্চম কিস্তি < > সপ্তম কিস্তি

ফেসবুক অ্যাকাউন্ট দিয়ে মন্তব্য করুন


কৌশিক বিশ্বাস

তরিকুল্লাহ সরকার উচ্চ বিদ্যালয়ের ইংরেজির শিক্ষক। আঞ্চলিক ইতিহাস ও লোকসংস্কৃতি বিষয়ক প্রবন্ধ লেখক। বৌদ্ধ ইতিহাস, ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে গবেষণামূলক প্রবন্ধ লেখক।

0 Comments

মন্তব্য করুন

Avatar placeholder

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।