হে প্রেম!
ধরুন আপনাকে একটা প্রেম লিখতে বলা হলো, তাহলে কি লিখবেন? আমি, তুমি, ভেজা চুল, নরম ঘাম বা দু’টো আঁধখোলা চোখের ওপর থেকে চুল সরানো। হতেও পারে, রোজ ঘন্টা খানেক ফোনের মধ্যে সারাদিনের যাবতীয় করণীয় কাজ বা দু- চারটে অভিযোগ।
তারপর দেখা হলে গলা জড়িয়ে, কপালে চুমু…..
ওমা! সেকি , এত তাড়াতাড়ি হয়ে গেলো? সারাদিনের প্রেম শেষ, যাব্বাবা। আমি তো ভাবলাম আর বোধ হয় গলাও ছাড়বে না, প্রেমও শেষ হবে না। তারপর?
চলুন আরও কিছু প্রেম হোক।
এই যে আমি একা একা একটা শান্ত দুপুরে যাবতীয় কাজ সেরে ছাদে এসে দাঁড়ালাম। যেখান থেকে একটা গোটা আকাশ দেখা যাচ্ছে। একটু একটু মেঘ- নীল সাদা। অল্প সরু দাগের মেঘ। আবার হলুদ সূর্য। দেখছি তো বেশ। ছাদে থাকতে থাকতে নীচের ছোটো ছাদে যাওয়া। দু-চার টে গাছ। তুলসী, একটা ছোট্ট বনশাই, হলুদ জবা, নীলকন্ঠ। কম কিসে বলুন তো।
এই তো সেদিন, বনশাই এর পাতা গুলো জল দিয়ে ধুয়ে দিচ্ছি। হঠাৎ বাবার কথা মনে পড়ছে, বাবার সেদিন জ্বর। হাসপাতাল থেকে ঘুরিয়ে আনলাম। ডাক্তার ভর্তি নেবে না। রোগী রাখার জায়গা নেই। ডেঙ্গু কিনা সঠিক বোঝা যাচ্ছে না। বাড়ি নিয়ে যান। ডেঙ্গু না হলেও, এখানে থাকলে এমনিতেই হয়ে যাবে। বাড়ি নিয়ে এসে মাথায় জল দিয়ে ধুইয়ে দিচ্ছিলাম। কি শান্তিতে বাবা ঘুমোলো।
ছাদে মাঝে মাঝে বাণী বসু নিয়ে বসি। স্মরণজিৎ বা নবারুণ। হঠাৎ সেদিন শিউলি গাছ টা দেখলাম। কাকিমা জল দিচ্ছে। বললাম, কাকিমা, কাকু গাছটা কাটবে না তো, কাকিমা কপালে হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো, না রে! গাছ কাটলে আমি কাকুর সাথে ঝগড়া করবো। কাকিমা আমাকে বিকেলে পুকুর পাড়ে নিয়ে যাবে? কতদিন ফড়িংয়ের নাচ দেখি নি।
তারপর দেখলাম, প্রজাপতি টা গোলাপি পাখা নিয়ে আমার বনশাই এর নতুন পাতা টার ওপর এসে বসলো। মনে হলো বাবার কপালের সব জ্বর কমে গেলো। মা পাশের ঘর থেকে ডাক দিল,সন্ধ্যে বেলা সুচিত্র আসবে। আমার ছোট বেলার বন্ধু, কবে যে পরিচয়, কেমন করে যে ওকে আমার সেদিন অর্ধেক লুচি টা দিলাম কে জানে। বাড়িতে ভাই এর সাথে যেই লুচি নিয়ে মাঝেমধ্যেই ঝগড়া হয়। আজ আবার লুচি হবে। সুচিত্র এখন বেনারসে থাকে। Human Studies বিষয়। আমিও যদি সেদিন যেতাম তাহলে আমারও হয়তো এরকম একটা বিষয় থাকতো।
কিন্তু আমি বেনারস গেলে, সন্দীপন চরিত্র টা কে করতো? বা বৃহস্পতি। করতো হয়তো কেউ। বা এই চরিত্র গুলো হতই না। সারা সন্ধ্যে জুড়ে উত্তর প্রদেশের একটা বিয়ের গান এর তুলছি। সবাই মিলে। শুভা মুদ্গালের সে কি উচ্চারণ, চোখ বন্ধ করলে মনে হবে, বন্ধুর বিয়েতে এসেছি। প্রয়াগরাজ থেকে তিরিশ কিমি ভেতরে একটা গ্রামে বিয়ে হচ্ছে। ওরা একসাথে বেনারসে পড়তো। তিন্নি খুব ভালো মেয়ে। বেশ বুদ্ধিমান। ওকে বলেছি, আমার হাদা বন্ধু টাকে একটু মানুষ করতে।
ট্রেনে করে বাড়ি ফিরছি। দশ মিনিট ট্রেন দাঁড়িয়ে, হাওড়া পাস হবে। তারপর সিগনাল। এমন সময় বাদামওয়ালা রা পাশ দিয়ে গেলে প্রাণ টা আনচান করে ওঠে। শরীরে কোলেস্টেরল হাই। খাবার সব শাসনে বারণে হাঁটছে। মা একবার বাড়িতে বাদাম মটকা বানিয়ে ছিল, বৃহস্পতিবার করে গোটা উঠোন গোবর দিয়ে মুছতো ঠাকুমা। মাও তাই করে। দুপুরে মুগ- ডাল, ফুলকপি আর গরম আলুর চপ খেয়ে উঠে মা বাদাম মটকা খেতে দিয়েছিল। আজ বাড়িতে খেজুর গুড় নিয়ে যাচ্ছি। পায়েশ করবে বলেছিলও মা।
বাড়ি ফেরার হলে মন কেমন আনন্দে ভরে ওঠে। মনে হয় কামরার এমাথা থেকে ওমাথা একটু দৌড় দিই। সে না হয় পরে কখনও হবে। হালকা শীতের স্টেশন দেখতে ভালোই লাগে। মনে হয় যারা প্রেম করতে বেরিয়েছিল তারা গুটিসুটি হয়ে বেশ ভালোই প্রেম করবে। তা করুক। সম্পর্ক টিকে থাক। ভালোবাসা বাঁচুক। দূরের প্রেম গুলোও আরও জমাটি হোক। লগ্নজিতা, তুমি সব সময় সত্যি নাও হতে পারো।
0 Comments