শৈশব
![](https://www.dakshinerjanala.com/wp-content/uploads/2019/02/shoishob_sagarsharma-600x315.jpg)
০১.
বেলুন ফাটানো দিনে শৈশব কেঁদে ওঠে সবার
প্রযুক্তি এত নৈকট্য এনেছে—
অথচ তুমি সেই আগের মতোই রয়ে গেলে
একেবারেই একা।
মাঝে সেতু আর হলোই না
সেতুর ওপারে নেই, এপারে নেই
আমার তো আজন্ম তোমার কাছেই যাওয়া
কেন এত ধীর বালিকা নীরবে সব সয়ে যাও!
জানি, দুঃখ কিছু তোমারও আছে—
বেদনার অহংকার ছাড়া যেমন আমার কিছু ছিলই না;
যেন একা থাকার লাম্পট্য নিয়েই জন্মেছি!
তবু বহুক্রোশ দূরে পড়ে আছি একা—
(এই সন্ধ্যাবেলা)
কেন এত মনে পড়ে শৈশব!
০২.
অজস্র শেকড় বয়স নিয়ে ঝুলেছিল যে বট গাঁয়ে—
পিঠেই হেলান দিয়ে শুয়েছিল তার
মৈনাক পাহাড়
গ্রামবালিকার চুলের চিরল বাঁক
বয়ে গিয়েছিল সমুদ্র-সীমানায়
সেই বাঁক থেকে বাঁকখালি—
একদা এখানে কাটিয়েছি রাখালিয়া শ্যামবয়স
হাডুডু
গোল্লাছুট
কানামাছি ভোঁ ভোঁ
বেহুলার মন ছোঁ—
কতবার বেহুলার বাসরে সেজেছি নকল লখিন্দর—
বিষাক্ত ফণার আঘাত সয়েছি কেবল
ফানুস ছোঁয়ার লোভে।
আহা! কতদিন মাড়াইনি পথ
শৈ
শ
বে
র
সীমানায়…
বাঁকখালির বুকও আজ দারুণ অবহেলার
বেহুলার সময় কোথায়—নোঙর ফেলার!
০৩.
‘…মেলা থেকে তালপাতার এক বাঁশি কিনে এনেছি / বাঁশি কই আগের মতো বাজে না…’
বালকবেলায় অলকার সাথে দূরের গঞ্জে মেলা দেখতে গিয়েছিলাম। তার ছিল পনের আনা ভাংতি, আমার হরিণ মার্কা একটি চকচকে নোট। মেলায় উড়ছিল নাগরদোলা, রঙিন লাটিম, ঘুড়ি, ফানুস, বেলুন, ঘোড়া—অলকার চঞ্চল চোখজোড়া।
কোণায় বসে কুচকুচে কালো এক ছেলে তালপাতার বাঁশিতে
সুর ভাঁজছিল। দূর থেকে তার বাজানোর ভঙ্গি চুরি করছিলাম
কেবল!
অলকার চোখ উড়ছিলো দূরের নাগরদোলার পালকিতে—ও
উড়তে চেয়েছিল খুব।
পাশেই চলছিল সিনেমা—বায়োস্কোপ! হরিণ মার্কা টাকায়
বায়োস্কোপে চোখ ডুবালে দেখি, নায়িকা নাচছে কোমর দুলিয়ে; পাশে তার সঙ মার্কা নায়ক। বায়োস্কোপে ডুবে থাকলে অলকা হ্যাঁচকা টান মেরেছিল—
ফেরার পথে তালপাতার বাঁশি নিয়েছিল সে। আমি বুকে বায়োস্কোপের গল্প! সারাপথ সে গল্প ভাঁজলে তার চোখে দেখেছিলাম মেঘের আঁচল।
আজ এতদিন পর গঞ্জের মেলা থেকে মার্সিডিজে চড়ে অলকা বাড়ি ফিরছে; পাশে সেই বায়োস্কোপের নায়ক!
এখন আমি কুচকুচে কালো লোকটিকে খুঁজি; তাকে পেলে, তার তালপাতার বাঁশিটা ফিরিয়ে দিতাম।
0 Comments