এই অসময়ে
নীল ফ্রীল দেওয়া রেডি টু ওয়ার শাড়িটার ডানদিকে কোমরের কাছে ঢাকনা দেওয়া পকেট। বুটিকের মেয়েটা হেসে হেসে বলছে এখন মানি পার্স কি মোবাইল যা ইচ্ছে রাখা যাবে। পেছন থেকে এক বয়স্ক বললেন কত সুবিধা হয়েছে মহিলাদের। হাতের মুঠোয় সব সুবিধা।অজান্তেই ঠোঁটের কোনটা বেঁকে গেল ঈপ্সার।সকাল পৌনে ছটার এলার্ম বাজার সঙ্গে সঙ্গে দৌড় শুরু।অভেন অন করে সব্জি ডাল সিদ্ধ বসিয়ে রাইস কুকারের নব ঘুরিয়ে আরেকটা অভেনে কোনদিন পরোটার তেল গরম করতে দিয়ে রাতে মেখে রাখা ডো থেকে লেচি ছিঁড়ে পরোটা বেলা কি কোনদিন মিক্সড চাউমিন নাড়াচাড়া করতে করতে দিনের শুরু।
সকালের খাবার খাইয়ে লান্চ বাক্স আর টিফিন প্যাক করে দুই ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে কম্পাউন্ডের পার্কেই মিনিট চল্লিশ একটু ব্যায়াম আর দৌড় সারে।আটতিরিশের ঈপ্সার সুস্হ থাকাটা আহির বৈভব এর জন্য কি ভিষন প্রয়োজন সেটা যে কোন একা মা বুঝবে।গত আট বছর একা হাতে সংসার ছেলে আর নিজের ক্যারিয়ার ব্যালেন্স করতে করতে কখন যেন এই লড়াইটাকেই ভাললাগতে শুরু করেছে।
হ্যাঁ অনেক উন্নত হয়েছে সমাজ।সঙ্গে অনেক দায়িত্ব বেড়েছে ঈপ্সাদের।ছকে মাপা দিন যাপনে পদে পদে চ্যালেন্জ নিজের সঙ্গে। দ্বিতীয় দিনের তুমুল রক্তপাত আর যন্ত্রনা নিয়েও ওয়ার্ক কিউবিকলে মাথা গুঁজে কাজ করতে হয়।32 কিমি অফিস বাড়ি করেও ছেলেদের হোম ওয়ার্কের খবর রাখতে হয়। উপরি বয়স্ক বাবা মায়ের শরীরের খেয়াল রাখা, ছেলেদের এক্সট্রা কারিকুলারের ক্লাসে নিয়ে যাওয়া আহা কখনো কখনো মনে হয় মা দূর্গার দশ হাতে দশ রকম অস্ত্র ধরা মূর্তি পুজোর মধ্যে দিয়ে ঈপ্সাদের ছোট থেকে ই আদর্শের ছকে ফেলে দেওয়া হয়েছে।
তাও এসব কষ্টগুলো নেওয়া যেত যদি না তিন মাস থেকে নব্বই এর নৃশংস ধর্ষন কখনো বা জ্যান্ত জ্বালিয়ে দেওয়ার খবর গুলো রোজ খবরের কাগজ কি টিভির পর্দায় এসে ভয় না ধরাতো।কন্যা সন্তান হওয়ায় মা র গলা টিপে মেরে ফেলার ঘটনা পা কাঁপিয়ে দিত।মাঝরাতে ফোন স্ক্রিনে আসা ঘিনঘিনে মেসেজ নিজের অস্তিত্বের সংশয়টাকে একটানে সামনে এনে ফেলত।বরপনের টাকার জন্য পাশের বাড়ির বৌটাকে কুপিয়ে খুন হতে হোত।
ইতিহাসের সেই অতীতে সবল যে হাতগুলো সদ্য অধিকৃত নারী দের মাথায় তরোয়ালের বাটের আঘাতে মালিকানা চিহ্নিত করত আজও অধিকারের দাবিতে কখনো চাকরি ছাড়তে বাধ্য করায় কখনো সন্তান ধারন করতে।ট্রেন বাস মেট্রোতে অজাচিত হয়ে স্পর্শ করে কোমরের খাঁজ।
উচ্চবর্নের লালসা চেহারা বদলে অধঃস্তন মহিলা কর্মিটিকে উইক এন্ডে সময় কাটাবার প্রস্তাব দেয়।
এই সব কিছুর পরে দিন শেষের একটা ঝরঝরে শাওয়ার নিয়ে ছলকে পরা কফির কাপ ধরে ব্যালকনি কোনের সদ্য ফোটা বেলকুঁড়ি টাকে দেখে আবার ও নতুন দিনের স্বপ্নে বাঁচে ঈপ্সারা।
চোখ বুঁজে আট বছর আগে ছেড়ে আসা আহির বৈভবের বাবা কে এক লহমায় ক্ষমা করে দিতে পারে, মুক্তি দিতে পারে সন্তানদের সব দায়িত্ব থেকে।
এই যে পকেটওয়ালা শাড়ি আছে ঈপ্সাদের।বরের কাছে রাতে মার খেয়েও সকাল সাড়ে আটটায় হাজিরা দেওয়া অলকাদি আছে।যার ভরসায় ঈপ্সার এই উড়ান।সহকর্মি কিছু বন্ধু আছে যারা ঈপ্সাদের ভেঙে পরতে দেয় না।প্রচন্ড মাথা ব্যাথার দুপুরে এ্যাসপিরিনের আরামের মত।
তাই তো ঘৃন্য ধর্ষকদের সাত বছর তিন মাস পর ফাঁসির বিচারের পর ও ঈপ্সারা মাথা তুলে হাঁটবার স্পর্ধা দেখায়।উল্টোদিকে এগিয়ে আসা লোভী কনুই কে ফাইলের আঘাতে থমকে দেয়।
চরম হতাশার কালো মেঘে ছাওয়া এই সংকটের দিনেও আহির বৈভব কে প্রতিনিয়ত শেখায় সহযোদ্ধা নারী কে সম্মান করার কথা।পুরুষ নারীর বিভেদ ছেড়ে মানুষ হয়েই পথ চলতে।
0 Comments