বালুরঘাটে বৌদ্ধ-তন্ত্রের দেবী তারার উপাসনা ও এক মহান অঘোর-বৌদ্ধ সাধক (তৃতীয় কিস্তি)

কৌশিক বিশ্বাস on

থার্মোডায়ানমিক্সের সূত্র অনুসারে বিশ্বের সবকিছুই কি এলোমেলো, অগোছালো?  নাকি একটা আরেকটার সাথে কোন না কোন সূত্রে বাঁধা?  এ প্রশ্ন বরাবরের। আধ্যাত্মিক জগতে সব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায় শুধু এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর পেলে। তারাপীঠের কাছে পাহুরে সম্ভ্রান্ত পরিবারে তাঁর জন্ম। গম্ভীরানাথ বাবার কাছে মাত্র ১৬ বছর বয়সে দীক্ষা গ্রহণ। ব্যস, গার্হস্থ্য জীবনের ওখানেই ইতি। সবকিছু জাগতিক সুখ পরিত্যাগ করে পথ চলা শুরু করেছিলেন অজানাকে জানতে। মাঝেমাঝে শিষ্যদের বলতেন, পরমত্যাগী কে জানো?  বুদ্ধ। সমস্ত বিলাস-ব্যসন ত্যাগ করে তিনি গৃহত্যাগী হয়েছিলেন। ব্যোমশংকর অঘোরী তাকে বজ্রযান পন্থায় দীক্ষা দিয়েছিলেন। এরপর তিনি বুঝতে পারেন বাংলায় যে নাথ সম্প্রদায় ও তার পুঁথির সাথে তিব্বতের বজ্রযানের ফারাক কতখানি। বর্ণময় তাঁর জীবন। তিব্বতের সাম্য বৌদ্ধবিহারে তাঁকে প্রথমে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। কারণ তিনি তখনও বজ্রযান তন্ত্রের কিছু জানতেন না। নেপালের সাথে তিব্বতের যোগাযোগ ছিল তখন নিবিড়। সেখান থেকে তিনি সোজা নেপালে চলে আসেন। নেপালে তার দেখা হয় তিব্বতিনাথ বাবার সাথে। তিনি তাঁকে সব খুলে বলেন। এরপর তিব্বতিনাথ বাবার পরামর্শে তিনি চলে যান বক্রেশ্বরে ব্যোমশংকর অঘোরীর কাছে। এই ব্যোমশংকর অঘোরী পদ্মসম্ভবের তন্ত্রশিক্ষায় বিশেষ জ্ঞান লাভ করেছিলেন। তিনি তখন তাঁকে দীক্ষা দিয়ে পুনরায় তিব্বতের সাম্য বৌদ্ধবিহারে যেতে বললে তিনি তাতে সম্মত হন। শুরু হলো তাঁর আবার তিব্বত যাত্রা। আবার তিনি গিয়ে হাজির হলেন সেই সাম্য বৌদ্ধবিহারে। এবার তাঁকে সেখানে প্রবেশের অনুমতি ও অধ্যয়নের সুযোগ দেওয়া হলো। তিনি নিবিড় অধ্যয়নে নিযুক্ত হয়ে দেখলেন প্রাচীন বাংলার বৌদ্ধতন্ত্র সাধনার প্রচুর পুঁথি সম্ভার। কিছু পুঁথি তিনি পরবর্তীতে নেপাল রাজপরিবারের গ্রন্থাগারে এনে সংরক্ষণ করেছিলেন। এবার তিনি যখন তিব্বতের অধ্যয়ন শেষ করে পুনরায় ফিরে আসেন তখন ভারতের নাথ সম্প্রদায়ের শিক্ষা ও চর্চা দ্রুত গতি লাভ করেছিল। তিনি গোরক্ষপুরের আখড়ার দায়িত্বভার গ্রহণ করেছিলেন অনেককাল। এরপরও তাঁর খোঁজ শেষ হয়ে যায়নি। তিনি দক্ষিণ -পূর্ব এশিয়া ভ্রমণ করেছিলেন। গিয়েছিলেন সাইবেরিয়ার ভ্লাদিভস্তক ও মরুতীর্থ হিংলাজে যা এখন বর্তমান পাকিস্তানে অবস্থিত। আজমীঢ় শরিফে গিয়ে পীরদের কাছে মুসলিম তন্ত্রশিক্ষায় দীক্ষা নিয়েছিলেন। এমন পরমজ্ঞানী, যোগী মহারাজের হাত ধরেই নাথপন্থীদের চর্চার বিস্তার ঘটেছিল আর তাতে যুক্ত হয়ে পড়েছিল আত্রেয়ী পাড়ের বালুরঘাট। এমন মহাজ্ঞানী, যোগী যিনি গোটা ভারতে বিখ্যাত হয়েছিলেন তিনি বেছে নিয়েছিলেন এই বালুরঘাটকে তাঁর অন্যতম সাধনক্ষেত্র হিসেবে। কিন্তু কেন?  এর উত্তর খোঁজা চলবে। আমার, আপনার,সবার।

…………. পরবর্তী কিস্তিতে।


পড়ুনঃ দ্বিতীয় কিস্তি < > চতুর্থ কিস্তি

ফেসবুক অ্যাকাউন্ট দিয়ে মন্তব্য করুন


কৌশিক বিশ্বাস

তরিকুল্লাহ সরকার উচ্চ বিদ্যালয়ের ইংরেজির শিক্ষক। আঞ্চলিক ইতিহাস ও লোকসংস্কৃতি বিষয়ক প্রবন্ধ লেখক। বৌদ্ধ ইতিহাস, ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে গবেষণামূলক প্রবন্ধ লেখক।

0 Comments

মন্তব্য করুন

Avatar placeholder

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।