মেঘ শান্তনু’র চারটি কবিতা

মেঘ শান্তনু on

(১) সুর

আমার দুঃখের উপর উড়ে এসে বসলো বাংলা ভাষা

এলোমেলো হাওয়ার বিকেলে যখন তাকে ছেড়ে এসেছিলাম
ব্যাগের ভিতর রাখা ছিল কিছু শুকনো পাতা
আর ছিন্নপত্র

কুয়াশার রাতে জ্যোৎস্নার পথ ধরে আমি
হেঁটে গিয়েছিলাম…
দিগন্ত পেরিয়ে, আকাশ পেরিয়ে, অভিমান পেরিয়ে
আমি হেঁটে গিয়েছিলাম

সেই পথের নাম রবীন্দ্রসঙ্গীত…


(২) সেতু

মা গান গাইছেন
জোনাকির নির্জন রাতে বারান্দায় দাঁড়িয়ে
মা গাইছেন-

‘দাঁড়িয়ে আছ তুমি আমার…’

আচমকা ঘুম ভেঙে আমি অবাক হয়ে দেখছি
বাবা নেমে আসছে
বহু দূর থেকে কুয়াশা সরিয়ে নেমে আসছে

আমার হারিয়ে যাওয়া বাবা
মা এর ‘গানের ওপারে’ !


(৩) ২৫শে বৈশাখ

ঢেউ লিখেছে জনান্তিকে, বিপথগামী মন
ভেতর ভেতর খুব চলেছে নিবিড় আলাপন

হঠাৎ কখন মেঘ করেছে, ঘুম ছুঁয়েছে আলো
সমুদ্র-বুক আবহমান ! বিদ্যুৎ চমকালো

অনন্তময় ছায়া ঘনায় বিনিদ্র রাত কাটে
আমার ভেতর মেঘ করেছে একলা খেয়া ঘাটে

নির্নিমেষের দু’চোখ তখন সদ্য প্রস্ফুটিত
কেউ বা ছাতিম, কেউবা পলাশ, তোমায় লিখে দিতো

আকাশ ছিলো পায়ের নীচে, হৃদয় অমলতাসে
দীর্ঘদেহী হেঁটে গেলে উজান ছুটে আসে

খেয়া গোপন দূর চলে যায় অবাধ্যতার ডাকে
আমি কেন শ্রাবণ খুঁজি, পঁচিশে বৈশাখে !


(৪) রবীন্দ্রনাথ এর সঙ্গে একদিন

রবীন্দ্রনাথ আমি আপনার সঙ্গে দেখা করবো। মুড়ি চানাচুর খাবো। আপনি আমায় গান শোনাবেন, নতুন লেখা কবিতা পড়াবেন। আপনার সঙ্গে ঘুরে ঘুরে শান্তিনিকেতন দেখবো। চা এর দোকানে বসে আমরা একসঙ্গে আড্ডা দেবো। বলবো, ‘ধুর ধুর দেশটা উচ্ছন্নে গেছে’। রবীন্দ্রনাথ আপনি আমার বন্ধু হয়ে উঠবেন। না বন্ধু নয় আপনি হবেন আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। আপনি আমাকে উৎসর্গ করে কবিতা লিখে দেবেন। আর আমি বলবো, ‘এসব কোনো লেখাই হয়নি, এর চেয়ে ঢের ভালো আমি লিখি’।
আপনাকে আমার লেখা পড়ে শোনাবো, আপনি কপাল কুঁচকে শুনবেন আর তাচ্ছিল্য করবেন। আমি বলবো, ‘শিষ্টাচার জানেন না বুঝি? ভালো ব্যবহার করতে শিখুন।’
একটু হেসে আপনি প্রশ্ন করবেন, ‘ আমার কাছে কেমন ব্যবহার প্রত্যাশা করো?’

আমি উত্তর দেবো, ‘কবির প্রতি কবির ব্যবহার’


ফেসবুক অ্যাকাউন্ট দিয়ে মন্তব্য করুন


মেঘ শান্তনু

জন্ম ১৯৮৫র ১৭ই অক্টোবর। বেড়ে ওঠা কলকাতা, হুগলী এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন জায়গায়। বর্তমানে রাজপুর-সোনারপুর অঞ্চলের বাসিন্দা। কিশোর বয়সেই পিতৃ-মাতৃ-হীন। শৈশব থেকেই বাংলা সাহিত্যের প্রতি অনুরাগ। প্রথম লেখালিখি শুরু স্কুল ম্যাগাজিনে। ২০০৭ এ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাণীবিজ্ঞানে সাম্মানিক স্নাতক। ২০১০ এর পর নিয়মিত বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি শুরু। ২০১৩ থেকে অপদার্থের আদ্যক্ষর পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্বে এবং একজন একনিষ্ঠ লিটল ম্যাগাজিন কর্মী। পেশা শি়ক্ষকতা। লেখালিখি ছাড়াও গ্ৰুপ থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত বহু বছর। বর্তমানে দু'টি লিটল ম্যাগাজিন মেলার আয়োজক কমিটির অন্যতম সদস্য। মূলত কবিতা, গল্প ও প্রবন্ধ লেখক। কৃত্তিবাস, শহর, মধ্যবর্তী, মাস্তুল, ঝিনুক, রোদের ডানা, ডাকবাক্স, রাত্রি সব জানে, নবাঙ্কুর, রঙছুট, সমিধ, আইপোয়েট, নিয়ন, অনর্গল, রসে বসে, দর্পণ, অদ্ভূতুড়ে, অপদার্থের আদ্যক্ষর ইত্যাদি আরো অসংখ্য পত্রিকায় লেখা প্রকাশিত। ২০১৮ তে সপ্তর্ষি প্রকাশন আয়োজিত 'তরুণ কবির স্পর্ধা'য় নির্বাচিত দশ জন কবির একজন হিসেবে প্রথম ব‌ই প্রকাশ। প্রথম কাব্যগ্ৰন্থ 'উপেক্ষিত ধুলোবালি'।

0 Comments

মন্তব্য করুন

Avatar placeholder

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।